ঢাকা ০৯:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যার পরে কৃষকদের করণীয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৩২:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০১৭
  • ২৯৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের করণীয় সম্পর্কে সোমবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বা আংশিক হয়েছে, এমন জমির ক্ষেত্রে-
বন্যার পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা, পলি, বালি এবং আবর্জনা যত দ্রুত সম্ভব পরিষ্কার করতে হবে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর ৫-৭ দিন কাদাযুক্ত ধান গাছ পরিষ্কার পানি দিয়ে, প্রয়োজনে স্প্রে মেশিন দিয়ে ধৌত করে দিতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই সার প্রয়োগ করা ঠিক নয়। এতে ধান গাছ পচে যেতে পারে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার ১০ দিন পর ধানের চারায় নতুন পাতা গজানো শুরু হলে বিঘা প্রতি ৮ কেজি ইউরিয়া ও ৮ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

উঁচু জমিতে যেখানে বন্যার পানি ওঠেনি সেখানে রোপণকৃত বাড়ন্ত আমন ধানের গাছ (রোপণের ৩০-৪০ দিন পর) থেকে ২-৩টি কুশি রেখে বাকি কুশি সযত্নে শিকড়সহ তুলে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অন্য ক্ষেতে রোপণ করতে হবে।

যেসব এলাকায় বন্যায় উঁচু জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে বীজতলা করা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে ভাসমান অথবা দাপোগ বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করা করতে হবে।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ব্রি উদ্ভাবিত আলোক সংবেদনশীল উফশী জাত যেমন- বিআর৫, বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৪৬, ব্রি ধান৫৪ এবং নাইজারশাইলসহ স্থানীয় জাতসমূহ রোপণ করতে হবে। এছাড়া, ব্রি উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন জাত ব্রি ধান৫৭ ও ব্রি ধান৬২ রোপণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বীজতলা করা যাবে।

তবে উল্লিখিত জাতসমূহ নাবীতে রোপণের ক্ষেত্রে প্রতি গোছায় চারার সংখ্যা ৪-৫টি এবং রোপণ দূরত্ব ২০*১৫ সেন্টিমিটার হতে হবে। বিলম্বে রোপণের ফলে দ্রুত কুশি উৎপাদনের জন্য সুপারিশকৃত টিএসপি, জিপসাম ও জিংকসহ ২/৩ (দুই তৃতীয়াংশ) ইউরিয়া জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া রোপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে।

যেসব এলাকা পুনরায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম (উঁচু ও মধ্যম উঁচু) সেসব জমিতে অঙ্কুরিত বীজ সরাসরি জমিতে ছিটিয়ে বপন করতে হবে। সেক্ষেত্রে রোপণ পদ্ধতির চেয়ে ৫-৭ দিন আগাম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া ধান গাছের যাবতীয় পরিচর্যা যেমন আগাছা দমন, পোকামাকড় ও রোগাক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা, সুষম পরিমাণে সার প্রয়োগ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

বন্যা পরবর্তীতে চারা গাছ সম্পূর্ণভাবে মাটিতে লেগে যাওয়ার সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ৬০ গ্রাম থিওভিট ও ৬০ গ্রাম পটাশ সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে।

বন্যা পরবর্তী সময়ে গাছে মাজরা, বাদামি ও সাদা পিঠ গাছ ফড়িং, পাতা মোড়ানো এবং পামরি পোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার জন্য পোকা বিশেষে হাতজাল, পার্চিং এবং প্রয়োজন হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

দেশের উত্তরাঞ্চলে আগাম শীত আসার কারণে ১৫ সেপ্টেম্বর এবং মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে ২০ সেপ্টেম্বরের পর আমন ধান রোপণ করা উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে আগাম রবি ফসলের আবাদ করতে হবে।

এ ছাড়া বিস্তারিত তথ্যের জন্য নিকটস্থ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বন্যার পরে কৃষকদের করণীয়

আপডেট টাইম : ০৮:৩২:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের করণীয় সম্পর্কে সোমবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বা আংশিক হয়েছে, এমন জমির ক্ষেত্রে-
বন্যার পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা, পলি, বালি এবং আবর্জনা যত দ্রুত সম্ভব পরিষ্কার করতে হবে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর ৫-৭ দিন কাদাযুক্ত ধান গাছ পরিষ্কার পানি দিয়ে, প্রয়োজনে স্প্রে মেশিন দিয়ে ধৌত করে দিতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই সার প্রয়োগ করা ঠিক নয়। এতে ধান গাছ পচে যেতে পারে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার ১০ দিন পর ধানের চারায় নতুন পাতা গজানো শুরু হলে বিঘা প্রতি ৮ কেজি ইউরিয়া ও ৮ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

উঁচু জমিতে যেখানে বন্যার পানি ওঠেনি সেখানে রোপণকৃত বাড়ন্ত আমন ধানের গাছ (রোপণের ৩০-৪০ দিন পর) থেকে ২-৩টি কুশি রেখে বাকি কুশি সযত্নে শিকড়সহ তুলে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অন্য ক্ষেতে রোপণ করতে হবে।

যেসব এলাকায় বন্যায় উঁচু জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে বীজতলা করা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে ভাসমান অথবা দাপোগ বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করা করতে হবে।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ব্রি উদ্ভাবিত আলোক সংবেদনশীল উফশী জাত যেমন- বিআর৫, বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৪৬, ব্রি ধান৫৪ এবং নাইজারশাইলসহ স্থানীয় জাতসমূহ রোপণ করতে হবে। এছাড়া, ব্রি উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন জাত ব্রি ধান৫৭ ও ব্রি ধান৬২ রোপণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বীজতলা করা যাবে।

তবে উল্লিখিত জাতসমূহ নাবীতে রোপণের ক্ষেত্রে প্রতি গোছায় চারার সংখ্যা ৪-৫টি এবং রোপণ দূরত্ব ২০*১৫ সেন্টিমিটার হতে হবে। বিলম্বে রোপণের ফলে দ্রুত কুশি উৎপাদনের জন্য সুপারিশকৃত টিএসপি, জিপসাম ও জিংকসহ ২/৩ (দুই তৃতীয়াংশ) ইউরিয়া জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া রোপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে।

যেসব এলাকা পুনরায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম (উঁচু ও মধ্যম উঁচু) সেসব জমিতে অঙ্কুরিত বীজ সরাসরি জমিতে ছিটিয়ে বপন করতে হবে। সেক্ষেত্রে রোপণ পদ্ধতির চেয়ে ৫-৭ দিন আগাম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া ধান গাছের যাবতীয় পরিচর্যা যেমন আগাছা দমন, পোকামাকড় ও রোগাক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা, সুষম পরিমাণে সার প্রয়োগ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

বন্যা পরবর্তীতে চারা গাছ সম্পূর্ণভাবে মাটিতে লেগে যাওয়ার সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ৬০ গ্রাম থিওভিট ও ৬০ গ্রাম পটাশ সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে।

বন্যা পরবর্তী সময়ে গাছে মাজরা, বাদামি ও সাদা পিঠ গাছ ফড়িং, পাতা মোড়ানো এবং পামরি পোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার জন্য পোকা বিশেষে হাতজাল, পার্চিং এবং প্রয়োজন হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

দেশের উত্তরাঞ্চলে আগাম শীত আসার কারণে ১৫ সেপ্টেম্বর এবং মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে ২০ সেপ্টেম্বরের পর আমন ধান রোপণ করা উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে আগাম রবি ফসলের আবাদ করতে হবে।

এ ছাড়া বিস্তারিত তথ্যের জন্য নিকটস্থ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।