হাওর বার্তা ডেস্কঃ বন্যায় রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রংপুর বিভাগের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অচলপ্রায়।যা আসন্ন ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।
রংপুরের রেলপথের ১২৫টিরও বেশি স্থানে স্লিপার ধসে ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে। অনেকস্থানে পানির তোড়ে ভেসে গেছে রেল লাইনের পাথর । এসব মেরামত কাজ চললেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।
কবে নাগাদ বিপর্যস্ত এই রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে, এটা বলা যাচ্ছেনা। তবে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুসপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
রেল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে এ পর্যন্ত রেল লাইনের ক্ষতি হয়েছে ২০ কোটি টাকার ওপর। বর্তমানে এসব রুটের দুটি আন্তঃনগরসহ ১১ জোড়া ট্রেনের চলাচলই বন্ধ রয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, ঈদের আগে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল নিয়ে তারাও শঙ্কিত রয়েছেন।
পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ে প্রধান অফিস রাজশাহী সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় রেলপথের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দিনাজপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাও ও কুড়িগ্রাম জেলায়। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ না হলেও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শুধু রেল লাইনের ক্ষতির পরিমান ২০ কোটি টাকার ওপর।
সূত্রমতে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ১২০ ফুট রেললাইন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে এখন নদী প্রবহমান। এই পথে রেল লাইন পুনঃস্থাপন করা সম্ভব কিনা তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছেনা। কুড়িগ্রাম জেলায় রেলের দুটি ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে। এটি মেরামত করতে বেশ সময় লাগবে। ফলে কুড়িগ্রামের সাথে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রংপুরের কাউনিয়া-তিস্তা- মহেন্দ্র নগর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারে ২০টি স্থানে স্লিপার সরে গিয়ে ২০ থেকে ২৫ ফুট গর্ত হয়েছে। ক’দিন আগে এখানে রেললাইন ছিল এটি এখন বোঝার উপায় নেই। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থেকে মনমথপুর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটারের ৪৮টি স্থানে স্লিপার সরে গিয়ে রেল লাইনের নিচের ৫ ফুট করে মাটি সরে গেছে। পাথরের কোন অস্তিত্ব নেই এই রেলপথের। দিনাজপুরের ১৩ এম ব্রিজের দু’পাশে ৫০ ফুট জায়গায় ৫ ফুট গর্ত হয়ে গেছে। দিনাজপুরের কাঞ্চন থেকে বাজনাহার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার জুড়ে স্লিপার সরে গিয়ে ৮ ফুট গভীরে চলে গেছে। কাঞ্চন থেকে বিরল পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রেল লাইন ১২ ফিট গর্তের নিচে চলে গেছে । দিনাজপুর সদরের কাউগাঁ এলাকার এক কিলোমিটার রেল লাইন ৮ ফুট গর্তের নিচে। দেখা গেছে, এই বিভাগের ১০০ কিলোমিটারের বেশি রেলপথ বন্যার ছোবলে ছিন্নভিন্ন ।
রেল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সেখান থেকে জরুরী ভিত্তিতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামতের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।
এছাড়া বন্যার কারণে পঞ্চগড়-দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামি আন্তঃ নগর একতা ও দ্রুতযান ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া পার্বতীপুর থেকে পঞ্চগড়গামী ৪ জোড়া , তিস্তা- কুড়িগ্রাম- রমানাবাজার ৩ জোড়া এবং লালমনির হাটের ভোটমারী হতে বুড়িমারী পর্যন্ত ৪ জোড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব ট্রেন কবে নাগাদ চলাচল করবে তা সঠিকভাবে বলতে পারছেনা পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলের কর্মকর্তারা। ঈদের আগের রংপুর বিভাগের রেল চলাচল স্বাভাবিক না হলে চরম ভোগান্তিতে পড়বে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষগুলো।
পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন জানান, বন্যার কারণে দুটি আন্তঃনগরসহ প্রায় ১১ জোড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে তিনি ঈদের আগের রেল পরিবহন স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।