ঢাকা ০৭:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০৯:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৭
  • ১৯৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বন্যায় ভাসছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু ডুবে যাওয়ায় সহায়-সম্বলহীন হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। সামান্য খাবারের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে বন্যা দুর্গত এলাকায়। দেশের এই সঙ্কটকালীন মূহুর্তে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম, সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি, দল গোছানোসহ অন্যান্য সব কাজ ফেলে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের নেতাকর্মীসহ স্বচ্ছল মানুষকে অতিদ্রুত বন্যার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে থেকে তাদের যথাসম্ভব সহায়তা সাহায্য করতে বলেছেন তিনি। কেবল কেন্দ্রীয় নেতাই নন, যারা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তাদেরকেও বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে থাকতে বলেছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি প্রতিদিনই বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলে বিএনপি সূত্রে জানা যায়। গতকালও দলের মহাসচিব ও ঢাকায় কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। চেয়ারপারসনের নির্দেশনা মেনে কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের নেতারা বন্যা দুর্গত এলাকায় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে ছুটছেন। দুর্গত এলাকায় স্থানীয় বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে বিশেষ কমিটি। কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী ইয়াসিন আলী ত্রাণ বিতরণ ও মনিটরিং কার্যক্রম তদারকি করছেন। প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের শীর্ষ স্থানীয় এক নেতা।
কেন্দ্রীয় ও বন্যাদুর্গত এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন্যা দুর্গত এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা চাল, ডাল, চিড়া, মুড়িসহ শুকনো খাবার পৌছে দিচ্ছেন। যেখানে প্রয়োজন রান্না করার খাবারও মানুষের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। আবার পানি বাড়তে থাকায় দুর্গত মানুষ ও তাদের শেষ সম্বল গবাদি পশুগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে পৌছে দিতেও কাজ করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে বন্যাদুর্গত এলাকায় তা বিতরণ শুরু করেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নিজের জেলা ঠাকুরগাঁও ছাড়াও দিনাজপুর ও নীলফামারির সৈয়দপুরে বন্যাক্রান্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। এসময় তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের সব কাজ ফেলে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, আজ কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার দিন না। সকলে দুর্গত জনগণের পাশে এসে দাঁড়াই। রংপুর, লালমনিরহাটে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু। নীলফামারিতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে সামর্থ অনুযায়ি ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে দুর্গতদের হাতে পৌছে দিচ্ছেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান জামান, সৈয়দপুরে বিএনপির রাজনৈতিক জেলার সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন সরকার, দিনাজপুরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এজেডএম রেজওয়ানুল হক, কুড়িগ্রামে জেলা বিএনপির সভাপতি তাজবিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বানভাসি মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছেন, বিতরণ করছেন ত্রাণ, ডুবতে থাকা এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ ও গবাদি পশুকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছেন। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা নিরলসভাবে দুর্গত এলাকাগুলোতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ, উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনাসহ সামর্থের সব চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। বিএনপির কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন এই মূহুর্তে সকলের ঐক্যবদ্ধভাবে দূর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। কোন কমিটি করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে বলেন, কমিটির চেয়ে কাজ করা জরুরি। সব নেতাকর্মীরাই যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। আর ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক তো আছেই। তিনি সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছেন।
বন্যাদুর্গত মানুষদের দুঃখ-দুর্দশায় সহমর্মিতা জানিয়ে অতিদ্রæত বন্যার্তদের কাছে ছুটে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি গত ১৩ আগস্ট লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক বিবৃতিতে নেতাকর্মীদের এই নির্দেশনা দেন। দুর্গত এলাকায় সরকারের ত্রাণ তৎপরতা নেই কেবল মুখের কথা আছে উল্লেখ করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ভয়াবহ বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠেছে। ফসল, বসতবাটি, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং মানুষের জীবন-জীবিকাও সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাটের নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোই শুধু নয়, জেলা শহরগুলোও তলিয়ে গেছে। উপদ্রুত মানুষ ঘর-বাড়ী-জোত-জমি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অথচ বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। তাই বিএনপি’র সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও স্বচ্ছল মানুষকে অতিদ্রুত বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। একই সময়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে বিবৃতি দিয়ে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যক্তি পর্যায়ে তৎপরতা থাকলেও চেয়ারপারসনের নির্দেশনার পরপরই বন্যাদুর্গত এলাকায় ছুটছেন সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরাই। যার যার সামর্থ অনুযায়ি করছেন সহযোগিতা। গত ১৪ আগস্ট নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং বন্যাদুর্গতের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল (মঙ্গলবার) তিনি ছুটে যান দিনাজপুর ও নীলফামারির সৈয়দপুরের বন্যা দুর্গত এলাকায়। এসব এলাকায় তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেন। দিনাজপুরে ত্রাণ বিতরণের সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, দিনাজপুরের বন্যা নজিরবিহীন। শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে মানুষ অস্বাভাবিকভাবে বাস করছে। সরকারের ত্রাণতৎপরতা অপ্রতুল। লক্ষ্য করার মতো কোনো উদ্যোগ নেই। সরকার দিনাজপুর শহরের বন্যার্তদের জন্য মাত্র তিন টন চাল এবং পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে, যা একেবারে অপ্রতুল। গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে তিস্তা, ধরলা, পূণর্ভবা, ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের বেশ কয়েকটি নদী ফুলে ফেঁপে উঠে ভয়াবহ বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠেছে। এর উপর তিস্তার উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের গেটগুলো খুলে দেয়ার ফলে তিস্তা নদীর পানি এখন বিপদসীমার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। রংপুর বিভাগের প্রায় সব জেলা এখন বন্যাকবলিত। সরকারি হিসাবে সারাদেশে বন্যাপীড়িত জেলা মোট ২০টি। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার পানি আগামী ৭২ ঘণ্টা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে।
বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীসহ দেশের সকল বিত্তবানদের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, আপনারা ডুবন্ত অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ান, তাদেরকে বাঁচান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস জানান, ম্যাডাম সারাদেশে বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও স্বচ্ছল মানুষকে অতিদ্রুত বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে দলের নেতাদেরকে বন্যাকবলিত অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে অবস্থান ও তাদেরকে যথাসম্ভব সাহায্য সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা ইতিমধ্যেই দলের নেতাদের কাছে তাঁর নির্দেশনা পৌঁছে দিচ্ছি। তিনি বলেন, ম্যাডাম প্রতিদিনই বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) সামশুজ্জামান জামান বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। তারা দুর্গত এলাকাগুলোতে যাচ্ছেন। সেগুলো পরিদর্শন করে যেখানে যেরকম সহযোগিতা করার প্রয়োজন তা করার চেষ্টা করছেন। কোথাও কোথাও রান্না করা খাবার, কোথাও চাল, ডাল, আলু, মুড়ি, চিড়াসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী নেতাকর্মীরা পৌছে দিচ্ছেন বলে তিনি জানান। এছাড়া খুব বেশি বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষ ও তাদের গবাদি পশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতেও নেতাকর্মীরা সহযোগিতা করছেন বলে জানান শামসুজ্জামান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ান

আপডেট টাইম : ০১:০৯:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বন্যায় ভাসছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু ডুবে যাওয়ায় সহায়-সম্বলহীন হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। সামান্য খাবারের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে বন্যা দুর্গত এলাকায়। দেশের এই সঙ্কটকালীন মূহুর্তে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম, সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি, দল গোছানোসহ অন্যান্য সব কাজ ফেলে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের নেতাকর্মীসহ স্বচ্ছল মানুষকে অতিদ্রুত বন্যার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে থেকে তাদের যথাসম্ভব সহায়তা সাহায্য করতে বলেছেন তিনি। কেবল কেন্দ্রীয় নেতাই নন, যারা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তাদেরকেও বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে থাকতে বলেছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি প্রতিদিনই বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলে বিএনপি সূত্রে জানা যায়। গতকালও দলের মহাসচিব ও ঢাকায় কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। চেয়ারপারসনের নির্দেশনা মেনে কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের নেতারা বন্যা দুর্গত এলাকায় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে ছুটছেন। দুর্গত এলাকায় স্থানীয় বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে বিশেষ কমিটি। কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী ইয়াসিন আলী ত্রাণ বিতরণ ও মনিটরিং কার্যক্রম তদারকি করছেন। প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের শীর্ষ স্থানীয় এক নেতা।
কেন্দ্রীয় ও বন্যাদুর্গত এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন্যা দুর্গত এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা চাল, ডাল, চিড়া, মুড়িসহ শুকনো খাবার পৌছে দিচ্ছেন। যেখানে প্রয়োজন রান্না করার খাবারও মানুষের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। আবার পানি বাড়তে থাকায় দুর্গত মানুষ ও তাদের শেষ সম্বল গবাদি পশুগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে পৌছে দিতেও কাজ করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে বন্যাদুর্গত এলাকায় তা বিতরণ শুরু করেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নিজের জেলা ঠাকুরগাঁও ছাড়াও দিনাজপুর ও নীলফামারির সৈয়দপুরে বন্যাক্রান্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। এসময় তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের সব কাজ ফেলে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, আজ কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার দিন না। সকলে দুর্গত জনগণের পাশে এসে দাঁড়াই। রংপুর, লালমনিরহাটে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু। নীলফামারিতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে সামর্থ অনুযায়ি ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে দুর্গতদের হাতে পৌছে দিচ্ছেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান জামান, সৈয়দপুরে বিএনপির রাজনৈতিক জেলার সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন সরকার, দিনাজপুরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এজেডএম রেজওয়ানুল হক, কুড়িগ্রামে জেলা বিএনপির সভাপতি তাজবিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বানভাসি মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছেন, বিতরণ করছেন ত্রাণ, ডুবতে থাকা এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ ও গবাদি পশুকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছেন। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা নিরলসভাবে দুর্গত এলাকাগুলোতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ, উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনাসহ সামর্থের সব চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। বিএনপির কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন এই মূহুর্তে সকলের ঐক্যবদ্ধভাবে দূর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। কোন কমিটি করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে বলেন, কমিটির চেয়ে কাজ করা জরুরি। সব নেতাকর্মীরাই যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। আর ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক তো আছেই। তিনি সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছেন।
বন্যাদুর্গত মানুষদের দুঃখ-দুর্দশায় সহমর্মিতা জানিয়ে অতিদ্রæত বন্যার্তদের কাছে ছুটে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি গত ১৩ আগস্ট লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক বিবৃতিতে নেতাকর্মীদের এই নির্দেশনা দেন। দুর্গত এলাকায় সরকারের ত্রাণ তৎপরতা নেই কেবল মুখের কথা আছে উল্লেখ করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ভয়াবহ বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠেছে। ফসল, বসতবাটি, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং মানুষের জীবন-জীবিকাও সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাটের নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোই শুধু নয়, জেলা শহরগুলোও তলিয়ে গেছে। উপদ্রুত মানুষ ঘর-বাড়ী-জোত-জমি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অথচ বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। তাই বিএনপি’র সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও স্বচ্ছল মানুষকে অতিদ্রুত বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। একই সময়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে বিবৃতি দিয়ে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যক্তি পর্যায়ে তৎপরতা থাকলেও চেয়ারপারসনের নির্দেশনার পরপরই বন্যাদুর্গত এলাকায় ছুটছেন সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরাই। যার যার সামর্থ অনুযায়ি করছেন সহযোগিতা। গত ১৪ আগস্ট নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং বন্যাদুর্গতের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল (মঙ্গলবার) তিনি ছুটে যান দিনাজপুর ও নীলফামারির সৈয়দপুরের বন্যা দুর্গত এলাকায়। এসব এলাকায় তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেন। দিনাজপুরে ত্রাণ বিতরণের সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, দিনাজপুরের বন্যা নজিরবিহীন। শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে মানুষ অস্বাভাবিকভাবে বাস করছে। সরকারের ত্রাণতৎপরতা অপ্রতুল। লক্ষ্য করার মতো কোনো উদ্যোগ নেই। সরকার দিনাজপুর শহরের বন্যার্তদের জন্য মাত্র তিন টন চাল এবং পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে, যা একেবারে অপ্রতুল। গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে তিস্তা, ধরলা, পূণর্ভবা, ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের বেশ কয়েকটি নদী ফুলে ফেঁপে উঠে ভয়াবহ বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠেছে। এর উপর তিস্তার উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের গেটগুলো খুলে দেয়ার ফলে তিস্তা নদীর পানি এখন বিপদসীমার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। রংপুর বিভাগের প্রায় সব জেলা এখন বন্যাকবলিত। সরকারি হিসাবে সারাদেশে বন্যাপীড়িত জেলা মোট ২০টি। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার পানি আগামী ৭২ ঘণ্টা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে।
বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীসহ দেশের সকল বিত্তবানদের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, আপনারা ডুবন্ত অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ান, তাদেরকে বাঁচান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস জানান, ম্যাডাম সারাদেশে বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও স্বচ্ছল মানুষকে অতিদ্রুত বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে দলের নেতাদেরকে বন্যাকবলিত অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে অবস্থান ও তাদেরকে যথাসম্ভব সাহায্য সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা ইতিমধ্যেই দলের নেতাদের কাছে তাঁর নির্দেশনা পৌঁছে দিচ্ছি। তিনি বলেন, ম্যাডাম প্রতিদিনই বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) সামশুজ্জামান জামান বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। তারা দুর্গত এলাকাগুলোতে যাচ্ছেন। সেগুলো পরিদর্শন করে যেখানে যেরকম সহযোগিতা করার প্রয়োজন তা করার চেষ্টা করছেন। কোথাও কোথাও রান্না করা খাবার, কোথাও চাল, ডাল, আলু, মুড়ি, চিড়াসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী নেতাকর্মীরা পৌছে দিচ্ছেন বলে তিনি জানান। এছাড়া খুব বেশি বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষ ও তাদের গবাদি পশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতেও নেতাকর্মীরা সহযোগিতা করছেন বলে জানান শামসুজ্জামান।