ঢাকা ১১:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বানভাসি মানুষের আহাজারি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৮:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৭
  • ২০৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার কমপক্ষে ৬ লাখ মানুষ। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসি মানুষে। এ জেলার সঙ্গে গত ৪ দিন ধরে বিভিন্ন  স্থানের সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের তীব্র সংকট। এদিকে গত ৩ দিনে বন্যায় পানিতে ডুবে, সর্প দংশনে এবং দেয়াল চাপায় জেলায় ১৭ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম। নিখোঁজ রয়েছে আরো এক শিশু। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী রাতভর বন্যাদুর্গত মানুষের সাহায্যে কাজ করে যাচ্ছে। চরম দুর্ভোগে আছেন, দিনাজপুরের বানভাসি মানুষ। বাড়ি-ঘর ডুবে গিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়া এসব মানুষের দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৬ লাখ মানুষ। প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠন ত্রাণ সহায়তায় এগিয়ে এলেও তা পর্যাপ্ত নয়, বলে অভিযোগ পানিবন্দি মানুষের। জেলার সব নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার এবং আত্রাই নদীর পানি ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তোড়ে শহরের মাহুতপাড়া তুঁতবাগান এলাকায় দিনাজপুর শহররক্ষা বাঁধের ৫০ মিটার ভেঙে গেছে। এছাড়াও দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গৃহহীন এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন বাঁধ, উঁচু এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। জেলার দুই হাজার ৯৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই বানভাসি মানুষের আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। বন্যায় দিনাজপুরের অধিকাংশ সড়ক ও মহাসড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দিনাজপুর জেলার সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে পাবর্তীপুর-পঞ্চগড় রেল যোগাযোগ। হিলি স্থলবন্দর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শনিবার থেকে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের গুদাম ঘর ডুবে যাওয়ায় পরীক্ষার খাতাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এদিকে গত ৩ দিনে বন্যায় পানিতে ডুবে, সর্পদংশনে এবং দেয়াল চাপায় জেলায় ১৭ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম। নিখোঁজ রয়েছে আরো এক শিশু। বন্যা দুর্গত মানুষকে উদ্ধারসহ বিপুল পরিমাণ গবাদিপশু ও গৃহস্থালি সামগ্রী উদ্ধার করেছে সেনা বাহিনী। স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের ৫২ জন সদস্য বন্যাদুর্গত মানুষের  সাহায্যে কাজ করে যাচ্ছে। বন্যাদুর্গত মানুষকে উদ্ধারসহ বিপুল পরিমাণ গবাদিপশু ও গৃহস্থালি সামগ্রী উদ্ধার করছে তারা। এছাড়াও সেনাবাহিনী ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ২ লাখ টাকা এবং ৮০ টন চাল বন্যাদুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যার্তদের জন্য ৫০ লাখ টাকা এবং ৩০০ টন চাল বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএনপি’র মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলগীর এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম মঙ্গলবার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বন্যায় দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করেছেন ত্রাণ সামগ্রী। জয়পুরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার পাঁচবিবি, ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর ও সদর উপজেলার কমপক্ষে ১০টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ও শাক-সবজি। ভেসে গেছে ৫ শতাধিক পুকুরের প্রায় ১০ কোটি টাকার মাছ। এদিকে পানি উঠেছে জয়পুরহাট-বগুড়া সড়কের বানিয়াপাড়া, বটতলি এলাকায়।
তলিয়েছে জামালগঞ্জ-ক্ষেতলাল সড়ক, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কয়েক গ্রাম
জেলা প্রশাসক মোকাম্মেল হক জানান- জেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রোপা আমন ধানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার ক্ষেতলাল, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর ও সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০ গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন- জেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ও শাক-সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মারজান হোসেন জানান- গত চারদিন ধরে সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তবে এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। এদিকে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়লেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোন ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়নি। সাঘাটায় হুমকির মুখে বাঁধ
সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় যমুনা নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রায় ৩ হাজার বানভাসি মানুষ ওয়াপদা বাঁধসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টায় বাদিনারপাড়া ভরতখালী এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নিচ দিয়ে পানি চুয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধটি। এতে আরো হাজার হাজার একর রোপা আমন ক্ষেত হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকার লোকজন সড়ক রক্ষায় চেষ্টা চালাচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি ২০.২০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিপদসীমার ৩৮ সে.মি অতিক্রম করেছে। এতে উপজেলায় বন্যার পানিতে ভরতখালী ইউনিয়নের কুকড়াহাট থেকে ভরতখালী গো-হাট পর্যন্ত মিনি বিশ্বরোড ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলে রাস্তা রক্ষা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন অঞ্চল। তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি।  উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়নের ব্যাঙ্গারপাড়া, থৈকরেরপাড়া, পূর্ব-আমদিরপাড়া, কাঠুর, চান্দপাড়া, পূর্ব বসন্তেরপাড়া, নলছিয়া, পূর্ব জুমারবাড়ীসহ ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি, সাঘাটা ইউনিয়নের বাঁশহাটা, গোবিন্দী, হাসিলকান্দী, হাটবাড়ী, উঃ সাথালিয়া ও ৫টি আশ্রয় কেন্দেসহ ১৫ হাজার ৫শ’ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হলদিয়া ইউনিয়নের দিঘলকান্দী, পাতিলবাড়ী, গাড়ামারা সিপি, চরহলদিয়াসহ ২০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভরতখালী ইউনিয়নের চিথুলিয়া, বরমতাইড়, উঃ উল্যা, দঃ উল্যা, সানকিভাঙ্গা, বালুরচর, ভাঙ্গামোড়ের প্রায় ৬হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খেয়াঘাট থেকে ব্যাঙ্গারপাড়া সড়ক ভেঙ্গে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং রাস্তা দিয়ে কোন প্রকার যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। নৌকা দিয়ে এসব গ্রামের মানুষ চলাচল করছে। এছাড়াও পাটক্ষেত ও ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। অধিকাংশ বাড়ির আঙ্গিনায় পানি উঠেছে। ফলে তাদেরকে সাংসারিক কাজ করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বন্যাকবলিত অনেক পরিবারই তাদের গরু, ছাগল, হাঁস-মরগিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বিভিন্ন উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। ঘুড়িদহ ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জামিল মিয়া জানান, বাদিনারপাড়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সনচুর গেট নামক স্থানে সড়কের নিচ দিয়ে পানি চুয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধটি। বাঁধটি ভেঙে গেলে আরো নতুন করে ২টি ইউনিয়নসহ গোটা এলাকার বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার ঘোষ, আমরা সব সময় এলার্ট আছি। বন্যাদুর্গত এলাকার সব সমস্যার খোঁজ রাখছি। ঠাকুরগাঁওয়ে একজনের লাশ উদ্ধার

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:  নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কেউ কেউ আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরলেও নিচু এলাকা থেকে পানি এখনো না সরে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ অবস্থান করছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন কেন্দ্রে আসা দুর্গত মানুষরা। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছে তারা। এদিকে মঙ্গলবার সকালে তিনদিন আগে নিখোঁজ হওয়া রিয়াদ (২০) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর ঠাকুরগাঁওয়ের লাশ টাঙ্গন নদীতে সন্ধান মেলে। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস মরদেহ উদ্ধার করে। এছাড়াও এখনো নিখোঁজ আছে সত্যপীর ব্রিজ এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে আহসান হাবিব, মুক্তার আলীর ছেলে সোহাগসহ ৩ শিশু। বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পঞ্চগড় ঠাকুরগাঁওয়ের নবনির্মিত ব্রডগেজ রেলপথ। রেল লাইনের উপর দিয়ে প্রবল স্রোতে পানি প্রবাহের কারণে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও রেল-লাইনের নয়নিবুরুজ স্টেশন থেকে কিসমত স্টেশন পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথের বিভিন্ন জায়গায় স্লিপারের মাঝের পাথর ও মাটি সরে  গেছে। এখন পর্যন্ত পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের ৫ উপজেলায় এখনো পানির নিচে ৫ হাজার হেক্টর আবাদি জমি পানির নিচে নিমজ্জিত। তবে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল বলেন, নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা আছে। আরো চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
পানিতে তলিয়ে গেছে কুমিল্লা নগরী
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে: টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়েছে কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকা। বিশেষ করে গত ২দিন ধরে মোষলধারে বৃষ্টির কারণে নগরের প্রধান প্রধান সড়কসহ অলিগলির সড়কগুলো হাঁটু পরিমাণ আবার কোথাও কোমর পরিমাণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ এলাকা রাতের টানা বৃষ্টিতে পানিতে ভেসে গেছে। অধিকাংশ এলাকার বাড়ি-ঘরে এবং অলিগলির দোকানপাটেও পানি ঢুকে পড়েছে। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা এবং নোংরা দূষিত পানি এখন রাস্তার উপর। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে একাকার হয়ে ড্রেন ও রাস্তার উপর পানি থৈ থৈ করছে। একই সাথে বেহাল অবস্থা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পূবালী চত্বর, দক্ষিণ চর্থা, শাকতলা, থিরাপুকুর পাড়, মনোহরপুর, নজরুল এভিনিউ, ডিসি রোড, রেইসকোর্স, কাঠেরপুল, অশোকতলা, ছায়াবিতান, বিসিক, মুরাদপুর, বাগিচাগাঁও, চকবাজার, ইপিজেড রোড, টমছমব্রিজ, ছাতিপট্টি, সরকারি মহিলা কলেজ রোড, ঠাকুরপাড়া বৌদ্ধমন্দির রোড, কালিয়াজুরি, স্টেডিয়াম রোড, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, টাউন হলের সামনে, রাজগঞ্জ, ভিক্টোরিয়া কলেজ রোড, বারপাড়া, তালপুকুরপাড়, পুলিশ লাইন, বজ্রপুর রোডসহ বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে নগরীর বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।
বিশ্বনাথে বন্যায় ঘরবাড়ি প্লাবিত
বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি: টানা প্রবল বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিশ্বনাথের লামাকাজি ইউনিয়নে নতুন করে বেশকিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, মৎস্য খামার ও ফসলি জমি। সুরমার ও বাসিয়ার নদী বিপৎসীমা অতিক্রম করে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে পানি। ফলে দুর্ভোগ-ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। সংকট দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাবারের। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বন্যার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। সোমবার বিকেলে সরেজমিন উপজেলা লামাকাজি ইউনিয়নের মাহতাবপুর, সাঙ্গিরাই, রসুলপুর, মাখরগাঁও, হেকুরা গাঁও, সাহেবনগর, মাধবপুর, মির্জারগাঁও, সোনাপুর, উদয়পুর, পাঠানরগাঁও, মিরপুর, ভুরকী, ইসবপুর, হামজাপুর, মোল্লারগাঁও, দোকানিপাড়াসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় বেশিরভাগ বাড়িতেই ঢুকে পড়েছে পানি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওইসব গ্রামের লোকজন। আকস্মিক বন্যায় ব্যাহত হয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সেই সাথে স্থানীয় ছোট ছোট হাওরের ফসলি জমির আউশ-আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। মাহতাবপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান ও তখলিফুন নেছা এ প্রতিবেদককে জানান, তিনদিন যাবৎ ঘরের ভেতর হাঁটুপানি থাকায় বাঁশের মাঁচা তৈরি করে দিনাতিপাত করছি। টানা বৃষ্টির ফলে রান্নাবান্না করতে হিমশিম খাচ্ছি। কৃষক বাদশাহ মিয়া জানান, আমার ফসলি জমির আমন ধান পুরো পানিতে ডুবে গেছে। এ নিয়ে দু’বার ফসল হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছি। এছাড়াও গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি আমরা। এব্যাপারে কথা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, লামাকাজী ইউনিয়নের ৬-৭টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। অনেকে পানিবন্দি আছেন। আমি গ্রামগুলো সরজমিন পরিদর্শন করেছি। ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। আজ বিকালে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের উপস্থিতিতে মাহতাবপুর গ্রামের কয়েকটি পরিবারকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। আগামীকাল অন্যান্য পরিবারগুলোকেও ত্রাণ দেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বানভাসি মানুষের আহাজারি

আপডেট টাইম : ১২:৫৮:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার কমপক্ষে ৬ লাখ মানুষ। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসি মানুষে। এ জেলার সঙ্গে গত ৪ দিন ধরে বিভিন্ন  স্থানের সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের তীব্র সংকট। এদিকে গত ৩ দিনে বন্যায় পানিতে ডুবে, সর্প দংশনে এবং দেয়াল চাপায় জেলায় ১৭ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম। নিখোঁজ রয়েছে আরো এক শিশু। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী রাতভর বন্যাদুর্গত মানুষের সাহায্যে কাজ করে যাচ্ছে। চরম দুর্ভোগে আছেন, দিনাজপুরের বানভাসি মানুষ। বাড়ি-ঘর ডুবে গিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়া এসব মানুষের দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৬ লাখ মানুষ। প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠন ত্রাণ সহায়তায় এগিয়ে এলেও তা পর্যাপ্ত নয়, বলে অভিযোগ পানিবন্দি মানুষের। জেলার সব নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার এবং আত্রাই নদীর পানি ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তোড়ে শহরের মাহুতপাড়া তুঁতবাগান এলাকায় দিনাজপুর শহররক্ষা বাঁধের ৫০ মিটার ভেঙে গেছে। এছাড়াও দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গৃহহীন এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন বাঁধ, উঁচু এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। জেলার দুই হাজার ৯৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই বানভাসি মানুষের আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। বন্যায় দিনাজপুরের অধিকাংশ সড়ক ও মহাসড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দিনাজপুর জেলার সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে পাবর্তীপুর-পঞ্চগড় রেল যোগাযোগ। হিলি স্থলবন্দর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শনিবার থেকে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের গুদাম ঘর ডুবে যাওয়ায় পরীক্ষার খাতাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এদিকে গত ৩ দিনে বন্যায় পানিতে ডুবে, সর্পদংশনে এবং দেয়াল চাপায় জেলায় ১৭ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম। নিখোঁজ রয়েছে আরো এক শিশু। বন্যা দুর্গত মানুষকে উদ্ধারসহ বিপুল পরিমাণ গবাদিপশু ও গৃহস্থালি সামগ্রী উদ্ধার করেছে সেনা বাহিনী। স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের ৫২ জন সদস্য বন্যাদুর্গত মানুষের  সাহায্যে কাজ করে যাচ্ছে। বন্যাদুর্গত মানুষকে উদ্ধারসহ বিপুল পরিমাণ গবাদিপশু ও গৃহস্থালি সামগ্রী উদ্ধার করছে তারা। এছাড়াও সেনাবাহিনী ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ২ লাখ টাকা এবং ৮০ টন চাল বন্যাদুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যার্তদের জন্য ৫০ লাখ টাকা এবং ৩০০ টন চাল বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএনপি’র মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলগীর এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম মঙ্গলবার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বন্যায় দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করেছেন ত্রাণ সামগ্রী। জয়পুরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার পাঁচবিবি, ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর ও সদর উপজেলার কমপক্ষে ১০টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ও শাক-সবজি। ভেসে গেছে ৫ শতাধিক পুকুরের প্রায় ১০ কোটি টাকার মাছ। এদিকে পানি উঠেছে জয়পুরহাট-বগুড়া সড়কের বানিয়াপাড়া, বটতলি এলাকায়।
তলিয়েছে জামালগঞ্জ-ক্ষেতলাল সড়ক, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কয়েক গ্রাম
জেলা প্রশাসক মোকাম্মেল হক জানান- জেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রোপা আমন ধানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার ক্ষেতলাল, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর ও সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০ গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন- জেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ও শাক-সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মারজান হোসেন জানান- গত চারদিন ধরে সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তবে এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। এদিকে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়লেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোন ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়নি। সাঘাটায় হুমকির মুখে বাঁধ
সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় যমুনা নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রায় ৩ হাজার বানভাসি মানুষ ওয়াপদা বাঁধসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টায় বাদিনারপাড়া ভরতখালী এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নিচ দিয়ে পানি চুয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধটি। এতে আরো হাজার হাজার একর রোপা আমন ক্ষেত হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকার লোকজন সড়ক রক্ষায় চেষ্টা চালাচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি ২০.২০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিপদসীমার ৩৮ সে.মি অতিক্রম করেছে। এতে উপজেলায় বন্যার পানিতে ভরতখালী ইউনিয়নের কুকড়াহাট থেকে ভরতখালী গো-হাট পর্যন্ত মিনি বিশ্বরোড ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলে রাস্তা রক্ষা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন অঞ্চল। তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি।  উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়নের ব্যাঙ্গারপাড়া, থৈকরেরপাড়া, পূর্ব-আমদিরপাড়া, কাঠুর, চান্দপাড়া, পূর্ব বসন্তেরপাড়া, নলছিয়া, পূর্ব জুমারবাড়ীসহ ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি, সাঘাটা ইউনিয়নের বাঁশহাটা, গোবিন্দী, হাসিলকান্দী, হাটবাড়ী, উঃ সাথালিয়া ও ৫টি আশ্রয় কেন্দেসহ ১৫ হাজার ৫শ’ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হলদিয়া ইউনিয়নের দিঘলকান্দী, পাতিলবাড়ী, গাড়ামারা সিপি, চরহলদিয়াসহ ২০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভরতখালী ইউনিয়নের চিথুলিয়া, বরমতাইড়, উঃ উল্যা, দঃ উল্যা, সানকিভাঙ্গা, বালুরচর, ভাঙ্গামোড়ের প্রায় ৬হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খেয়াঘাট থেকে ব্যাঙ্গারপাড়া সড়ক ভেঙ্গে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং রাস্তা দিয়ে কোন প্রকার যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। নৌকা দিয়ে এসব গ্রামের মানুষ চলাচল করছে। এছাড়াও পাটক্ষেত ও ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। অধিকাংশ বাড়ির আঙ্গিনায় পানি উঠেছে। ফলে তাদেরকে সাংসারিক কাজ করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বন্যাকবলিত অনেক পরিবারই তাদের গরু, ছাগল, হাঁস-মরগিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বিভিন্ন উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। ঘুড়িদহ ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জামিল মিয়া জানান, বাদিনারপাড়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সনচুর গেট নামক স্থানে সড়কের নিচ দিয়ে পানি চুয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধটি। বাঁধটি ভেঙে গেলে আরো নতুন করে ২টি ইউনিয়নসহ গোটা এলাকার বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার ঘোষ, আমরা সব সময় এলার্ট আছি। বন্যাদুর্গত এলাকার সব সমস্যার খোঁজ রাখছি। ঠাকুরগাঁওয়ে একজনের লাশ উদ্ধার

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:  নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কেউ কেউ আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরলেও নিচু এলাকা থেকে পানি এখনো না সরে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ অবস্থান করছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন কেন্দ্রে আসা দুর্গত মানুষরা। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছে তারা। এদিকে মঙ্গলবার সকালে তিনদিন আগে নিখোঁজ হওয়া রিয়াদ (২০) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর ঠাকুরগাঁওয়ের লাশ টাঙ্গন নদীতে সন্ধান মেলে। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস মরদেহ উদ্ধার করে। এছাড়াও এখনো নিখোঁজ আছে সত্যপীর ব্রিজ এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে আহসান হাবিব, মুক্তার আলীর ছেলে সোহাগসহ ৩ শিশু। বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পঞ্চগড় ঠাকুরগাঁওয়ের নবনির্মিত ব্রডগেজ রেলপথ। রেল লাইনের উপর দিয়ে প্রবল স্রোতে পানি প্রবাহের কারণে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও রেল-লাইনের নয়নিবুরুজ স্টেশন থেকে কিসমত স্টেশন পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথের বিভিন্ন জায়গায় স্লিপারের মাঝের পাথর ও মাটি সরে  গেছে। এখন পর্যন্ত পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের ৫ উপজেলায় এখনো পানির নিচে ৫ হাজার হেক্টর আবাদি জমি পানির নিচে নিমজ্জিত। তবে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল বলেন, নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা আছে। আরো চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
পানিতে তলিয়ে গেছে কুমিল্লা নগরী
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে: টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়েছে কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকা। বিশেষ করে গত ২দিন ধরে মোষলধারে বৃষ্টির কারণে নগরের প্রধান প্রধান সড়কসহ অলিগলির সড়কগুলো হাঁটু পরিমাণ আবার কোথাও কোমর পরিমাণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ এলাকা রাতের টানা বৃষ্টিতে পানিতে ভেসে গেছে। অধিকাংশ এলাকার বাড়ি-ঘরে এবং অলিগলির দোকানপাটেও পানি ঢুকে পড়েছে। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা এবং নোংরা দূষিত পানি এখন রাস্তার উপর। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে একাকার হয়ে ড্রেন ও রাস্তার উপর পানি থৈ থৈ করছে। একই সাথে বেহাল অবস্থা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পূবালী চত্বর, দক্ষিণ চর্থা, শাকতলা, থিরাপুকুর পাড়, মনোহরপুর, নজরুল এভিনিউ, ডিসি রোড, রেইসকোর্স, কাঠেরপুল, অশোকতলা, ছায়াবিতান, বিসিক, মুরাদপুর, বাগিচাগাঁও, চকবাজার, ইপিজেড রোড, টমছমব্রিজ, ছাতিপট্টি, সরকারি মহিলা কলেজ রোড, ঠাকুরপাড়া বৌদ্ধমন্দির রোড, কালিয়াজুরি, স্টেডিয়াম রোড, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, টাউন হলের সামনে, রাজগঞ্জ, ভিক্টোরিয়া কলেজ রোড, বারপাড়া, তালপুকুরপাড়, পুলিশ লাইন, বজ্রপুর রোডসহ বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে নগরীর বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।
বিশ্বনাথে বন্যায় ঘরবাড়ি প্লাবিত
বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি: টানা প্রবল বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিশ্বনাথের লামাকাজি ইউনিয়নে নতুন করে বেশকিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, মৎস্য খামার ও ফসলি জমি। সুরমার ও বাসিয়ার নদী বিপৎসীমা অতিক্রম করে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে পানি। ফলে দুর্ভোগ-ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। সংকট দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাবারের। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বন্যার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। সোমবার বিকেলে সরেজমিন উপজেলা লামাকাজি ইউনিয়নের মাহতাবপুর, সাঙ্গিরাই, রসুলপুর, মাখরগাঁও, হেকুরা গাঁও, সাহেবনগর, মাধবপুর, মির্জারগাঁও, সোনাপুর, উদয়পুর, পাঠানরগাঁও, মিরপুর, ভুরকী, ইসবপুর, হামজাপুর, মোল্লারগাঁও, দোকানিপাড়াসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় বেশিরভাগ বাড়িতেই ঢুকে পড়েছে পানি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওইসব গ্রামের লোকজন। আকস্মিক বন্যায় ব্যাহত হয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সেই সাথে স্থানীয় ছোট ছোট হাওরের ফসলি জমির আউশ-আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। মাহতাবপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান ও তখলিফুন নেছা এ প্রতিবেদককে জানান, তিনদিন যাবৎ ঘরের ভেতর হাঁটুপানি থাকায় বাঁশের মাঁচা তৈরি করে দিনাতিপাত করছি। টানা বৃষ্টির ফলে রান্নাবান্না করতে হিমশিম খাচ্ছি। কৃষক বাদশাহ মিয়া জানান, আমার ফসলি জমির আমন ধান পুরো পানিতে ডুবে গেছে। এ নিয়ে দু’বার ফসল হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছি। এছাড়াও গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি আমরা। এব্যাপারে কথা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, লামাকাজী ইউনিয়নের ৬-৭টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। অনেকে পানিবন্দি আছেন। আমি গ্রামগুলো সরজমিন পরিদর্শন করেছি। ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। আজ বিকালে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের উপস্থিতিতে মাহতাবপুর গ্রামের কয়েকটি পরিবারকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। আগামীকাল অন্যান্য পরিবারগুলোকেও ত্রাণ দেয়া হবে।