ঢাকা ১২:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোরবানির পশুর সংকট নেই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০৩:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৭
  • ১৮৭ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণে কোরবানির উপযোগী গরু, মহিষ ও ছাগল রয়েছে। যা দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এদিকে হঠাত্ করে ভারতীয় গরুর আমদানি বাড়ায় ন্যায্যদাম পাওয়া নিয়ে শংকিত খামারিরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবে, দেশে কোরবানিযোগ্য পশু আছে এক কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার। গত বছর কোরবানি উপলক্ষে সারা দেশে এক কোটি পাঁচ লাখ গবাদিপশু বিক্রি হয়। সে হিসেবে এবার চাহিদার তুলনায় গবাদিপশু বেশি রয়েছে। বর্তমানে দেশে কোরবানি উপযোগী গবাদি পশুর মধ্যে গরু ও মহিষ রয়েছে ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া আছে ৭১ লাখ।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আইনুল হক বলেন, দেশে যে পরিমাণ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া আছে তা কোরবানির চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। তিনি বলেন, সারা বছর প্রায় দুই কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই হয়। এর প্রায় ৫০ ভাগ জবাই হয় কোরবানির ঈদের সময়। সে হিসাবে কোরবানির সময় এক কোটি ১৫ লাখের মতো গবাদিপশু দরকার হবে। এ পরিমাণ গবাদিপশু দেশের খামারি ও গৃহস্থের ঘরে রয়েছে।
এদিকে ভারত থেকে গরু আসা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন খামারিরা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন সীমান্ত পথে প্রচুর ভারতীয় গরু আসছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রাজশাহীর পবা, মতিহার, গোদাগাড়ী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের অহেদপুর ও রঘুনাথপুর সীমান্তে সরকার অনুমোদিত বিট/খাটাল দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন গরু আসছে।
ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, গরু আমদানি তত বাড়বে বলে জানিয়েছেন গরু ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ভারতীয় গরু আমদানি ৪/৫ গুণ বেশি। তবে এখাতে বিটগুলোতে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বিট/খাটালের নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতীয় রাখালরা গরুর চালান বাংলাদেশি রাখালদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে সেই গরুগুলো বিটে রাখা হয়। এরপর সরকারি শুল্ক বাবদ গরু প্রতি ৫শ টাকা ও বিট কর্তৃপক্ষকে ৫০ টাকা পরিশোধ করে গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। বিট/খাটাল চালু হওয়ায় অবৈধ পথে গরু আনার পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোটায় চলে আসে।
শিবগঞ্জ উপজেলার অহেদপুর ও রঘুনাথপুর বিট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার গরু আসছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে কোরবানির ঈদের আগে জুলাই ও আগস্ট মাসে একমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত পথে ১২ হাজার ৭৯৮টি গরু এসেছিলো। অথচ এবছর শুধু জুলাই মাসেই গরু এসেছে ৬৮ হাজার ৫০১টি। যা গত বছরের চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত চার লাখ ১৭ হাজার গরু এসেছে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে গরু আসার পরিমাণ ততই বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে গরু আসা কমেছে। এ অবস্থায় কোরবানির সময় পশুর চাহিদা মেটাতে দেশেই খামারিরা ব্যাপকভাবে পশু পালন শুরু করে। বর্তমানে দেশে ৫ লাখের মতো খামার গড়ে উঠেছে। এখন হঠাত্ করে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় গরু আসলে লোকসান গুনতে হবে খামারিদের। অধিকাংশ খামারি ঋণ করে কোরবানির পশু লালন-পালন করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। তাই ভারত থেকে গরু আসলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ হলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। এতে দেশের মাংসের চাহিদা পূরণে আমরা স্বয়ংসম্পর্ণূতা অর্জন করব।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কোরবানির পশুর সংকট নেই

আপডেট টাইম : ০১:০৩:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৭
হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণে কোরবানির উপযোগী গরু, মহিষ ও ছাগল রয়েছে। যা দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এদিকে হঠাত্ করে ভারতীয় গরুর আমদানি বাড়ায় ন্যায্যদাম পাওয়া নিয়ে শংকিত খামারিরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবে, দেশে কোরবানিযোগ্য পশু আছে এক কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার। গত বছর কোরবানি উপলক্ষে সারা দেশে এক কোটি পাঁচ লাখ গবাদিপশু বিক্রি হয়। সে হিসেবে এবার চাহিদার তুলনায় গবাদিপশু বেশি রয়েছে। বর্তমানে দেশে কোরবানি উপযোগী গবাদি পশুর মধ্যে গরু ও মহিষ রয়েছে ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া আছে ৭১ লাখ।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আইনুল হক বলেন, দেশে যে পরিমাণ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া আছে তা কোরবানির চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। তিনি বলেন, সারা বছর প্রায় দুই কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই হয়। এর প্রায় ৫০ ভাগ জবাই হয় কোরবানির ঈদের সময়। সে হিসাবে কোরবানির সময় এক কোটি ১৫ লাখের মতো গবাদিপশু দরকার হবে। এ পরিমাণ গবাদিপশু দেশের খামারি ও গৃহস্থের ঘরে রয়েছে।
এদিকে ভারত থেকে গরু আসা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন খামারিরা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন সীমান্ত পথে প্রচুর ভারতীয় গরু আসছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রাজশাহীর পবা, মতিহার, গোদাগাড়ী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের অহেদপুর ও রঘুনাথপুর সীমান্তে সরকার অনুমোদিত বিট/খাটাল দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন গরু আসছে।
ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, গরু আমদানি তত বাড়বে বলে জানিয়েছেন গরু ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ভারতীয় গরু আমদানি ৪/৫ গুণ বেশি। তবে এখাতে বিটগুলোতে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বিট/খাটালের নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতীয় রাখালরা গরুর চালান বাংলাদেশি রাখালদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে সেই গরুগুলো বিটে রাখা হয়। এরপর সরকারি শুল্ক বাবদ গরু প্রতি ৫শ টাকা ও বিট কর্তৃপক্ষকে ৫০ টাকা পরিশোধ করে গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। বিট/খাটাল চালু হওয়ায় অবৈধ পথে গরু আনার পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোটায় চলে আসে।
শিবগঞ্জ উপজেলার অহেদপুর ও রঘুনাথপুর বিট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার গরু আসছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে কোরবানির ঈদের আগে জুলাই ও আগস্ট মাসে একমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত পথে ১২ হাজার ৭৯৮টি গরু এসেছিলো। অথচ এবছর শুধু জুলাই মাসেই গরু এসেছে ৬৮ হাজার ৫০১টি। যা গত বছরের চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত চার লাখ ১৭ হাজার গরু এসেছে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে গরু আসার পরিমাণ ততই বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে গরু আসা কমেছে। এ অবস্থায় কোরবানির সময় পশুর চাহিদা মেটাতে দেশেই খামারিরা ব্যাপকভাবে পশু পালন শুরু করে। বর্তমানে দেশে ৫ লাখের মতো খামার গড়ে উঠেছে। এখন হঠাত্ করে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় গরু আসলে লোকসান গুনতে হবে খামারিদের। অধিকাংশ খামারি ঋণ করে কোরবানির পশু লালন-পালন করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। তাই ভারত থেকে গরু আসলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ হলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। এতে দেশের মাংসের চাহিদা পূরণে আমরা স্বয়ংসম্পর্ণূতা অর্জন করব।