নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দিনাজপুরের পানিবন্দী হাজারো মানুষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে দিনাজপুরে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দী জেলার  হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন উপজেলার মানুষ নিরাপদ স্থানের আশায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটছে।

তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। বন্যার ফলে সড়ক-মহাসড়ক ও রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে, আত্রাই ও পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন।

অবিরাম বর্ষণে উঠতি ফসল, পুকুরের মাছ, গাছপালা ও  কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি  হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় দিনাজপুর পৌরসভার নিমাঞ্চলের মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে চরম কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছে।

প্রবল বৃষ্টি ও নদীর পানির তোড়ে দিনাজপুর সদরের মাহুদপাড়া ও সুন্দরা এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে করে শহরতলীর বাড়িতে পানি ঢুকছে। পানিবন্দী মানুষজনকে উদ্ধারের জন্য সেনাবহিনীতে তলব করা হয়েছে। বাঁধের আশেপাশে উদ্ধার ও বাঁধ মেরামতে অংশ নিচ্ছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা।

ফুলবাড়ী উপজেলার সাত ইউনিয়নের প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিরল উপজেলার পূনর্ভবা নদীর ভাঙনে উপজেলার রাজারামপুর, আজিমপুর, ফারাক্কাবাদ ও ধামইড় ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। চিরিরবন্দর উপজেলার আত্রাই নদীর বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে প্রায় ৮টি গ্রাম।

এদিকে দিনাজপুরের সাথে ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যে হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে পার্বতীপুরে জংশন রুটে রেললাইন যে কোনো সময় তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও বীরগঞ্জ, খানসামা, ঘোড়াঘাট, বোচাগঞ্জ, চিরিরন্দর, বিরল কাহারোল উপজেলা এবং জেলা সদরের কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাছাড়াও শহরের লালবাগ কাঞ্চন কলনি, সাধুরঘাট, পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গা, হঠাৎপাড়ায় ঘরবাড়িতে বুক সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। ড্রেন দিয়ে বিভিন্ন বস্তিতে পানি প্রবেশ করছে। ফলে সারাদিন ধরে চুলোয় হাড়ি চড়েনি তাদের। তারা রাস্তার পার্শ্বে আশ্রয়ের জন্য ঘর তুলতে দেখা গেছে।

এছাড়াও শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নের জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন হুইপ ইকবালুর রহিম। তিনি বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন।

বোচাগঞ্জ উপজেলার কংশরা, ফুটকিবাড়ী, কেরালগাও, নাফানগর, কোদালকাঠি, নারইল, পরমেশ্বরপুর, পাচপাড়া, বাজনিয়া, হরিপুর, চাপাইডাঙ্গীসহ বেশ কয়েক গ্রামের মানুষ এবং সেতাবগঞ্জ পৌরসভার হঠাৎপাড়া, ঠোঙ্গাপট্রি, রেলকোলনীপাড়া, খালপাড়া, নতুনপাড়ার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী।

এছাড়া অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে বীরগঞ্জের শতগ্রাম ইউপির বলদিয়াপাড়া, বড়সুতু গ্রামের বাড়ী ও জমি প্লাবিত। প্লাবিত হয়েছে সুজালপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা। এতে ওইসব এলাকার পরিবারের লোকজন গবাদি পশুসহ আসবাবপত্র নিয়ে স্থানীয় বলদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা এবং সুজালপুর ইউনিয়নের উত্তর মাকড়াই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা।

খানসামায় আত্রাই নদীর কবলে প্রায় ১৫০০ পরিবার। খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউপির কায়েমপুর গ্রামের পাশ দিয়ে আত্রাই নদী অতিবাহিত হয়েছে। কায়েমপুর গ্রামের প্রায় ১০ একর কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে কায়েমপুরবাসী। এদিকে, নদীর তীর ধীরে ধীরে ভেঙে নদীতে পানিতে বিলীন হয়ে গেছে কৃষি আবাদ, গাছ-পালা, বাঁশ ঝাড়, ঈদগাহ ময়দান, রাস্তাসহ অনেক কিছু।

পানিবন্দী মানুষজনকে উদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয়স্থল খোলা হয়েছে। সেগুলো তদারকি করছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন স্থানে বন্যা কবলিত মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে এবং তাদেরকে খাদ্য-পানীয় সরবরাহের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। কোনোভাবেই যাতে মানুষ না খেয়ে কিংবা বিপদের মধ্যে না থাকে সে বিষয়ে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুজ্জামান খান জানান, দিনাজপুরের পূনর্ভবা নদী, আত্রাই নদী, চিরিরবন্দরের ইছামতি নদী, ফুলবাড়ীর ছোট যমুনা নদী, পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জের করতোয়াসহ জেলার ছোট-বড় ১৭টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পূনর্ভবা ও আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৭৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর