সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। প্রায় ২০টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বেড়েছে বেশির ভাগ নদনদীর পানি। এতে প্লাবিত হয়েছে কয়েকশ গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। আঞ্চলিক পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে আগামী কয়েকদিনে পানি আরো বাড়তে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, দেশের ১৪টি নদীর পানি বেড়েছে ১৭টি পয়েন্টে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৩৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে শেরপুরের ভুগাই নদীতে। এ ছাড়া ধরলা কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৭৭ সেন্টিমিটার, তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার, যমুনেস্বরি বদরগঞ্জে  ১৩২ সেন্টিমিটার, যমুনা বাহাদুরাবাদে ৬৩ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে ৪৭ সেন্টিমিটার, টাঙ্গন নদী ঠাকুরগাঁওয়ে ২৬১ সেন্টিমিটার, সুরমা কানাইঘাটে ৫১ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জে ২৩ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা শেওলায় ১২ সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন সারিঘাট পয়েন্টে ৮৪ সেন্টিমিটার, মনু নদী মনু রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্ট ৩৬৮ সেন্টিমিটার, খোয়াই নদীর বাল্লায় ২২১ সেন্টিমিটার ও হবিগঞ্জে ৪৭০ সেন্টিমিটার, ধলাই কমলগঞ্জে ২৭৮ সেন্টিমিটার, ভোগাই নদী নাকোয়াগাও ৩২০ সেন্টিমিটার, সোমেশ্বরী দুর্গাপুরে ১০০, কংস নদী জারিয়াজঞ্জাইল পয়েন্টে ১০৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

লালমনিরহাট:

লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, সিংঙ্গীমারী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রেললাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট।

রোববার সকালে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের সব গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তিস্তা ব্যারেজ রক্ষার বাইপাস সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা দিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করছে।

সুনামগঞ্জ:

প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। নতুন করে জেলার দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ সদর, দিরাই, ধর্মপাশা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন গ্রামের মানুষজন।

সড়ক প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়াও সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের সাথে নয় ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে আক্রান্ত উপজেলাগুলোতে তিন মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ হাজার টাকা জরুরি সহায়তা দেয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি আরো বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ২০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বর্ষণ অব্যাহত আছে। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে বন্যার আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

কুড়িগ্রাম:

ধলাই ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়াই ঢাকার সঙ্গে কুড়িগ্রামের সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রোববার সকালে ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ও চিলমারি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বেড়ে কুড়িগ্রামের ৫০টি ইউনিয়নের ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে ৪১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুরের চরাঞ্চলের বেশ কিছু ঘরবাড়িতে দ্বিতীয় দফা পানি ঢুকেছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদরের যাত্রাপুর, আঠারঘড়িয়া, বারোঘড়িয়া, হেমেরকুঠি, জগমোহনের চর, চর জয়কুমরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ধরলার ভাঙনে বাংটুর ঘাট, হেমেরকুঠি, সারোডোব এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিতে পড়েছে।

নেত্রকোণা:

হাওর ও পাহাড় অধ্যুষিত নেত্রকোণায় তিন নদীর পানি আরো বেড়েছে। এতে চার নদীর পানিই বিপদসীমা ছাড়ানোয় জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রোববার সকাল ৯টায় পানি পরিমাপ করে দেখেছে পাহাড়ি এলাকায় সোমেশ্বরীর পানি কিছুটা কমলেও বেড়েছে কংস, উব্দাখালি ও ধনু নদীর পানি। তবে সোমেশ্বরী এখনো বিপদসীমার ওপরে বইছে।

বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, জেলার হাওরাঞ্চলের নদী ধনুর পানি নতুন করে বেড়ে বিপদসীমা পেরিয়েছে।

দুর্গাপুর পয়েন্টে পাহাড়ি সোমেশ্বরী আজ(রোববার) সকালেও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছিল। তবে আগের চেয়ে পানি কিছুটা কমায় নদীর আশপাশ প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নেমেছে।

অন্য তিন নদীর পানি বেড়ে কংস নদের জারিয়া পয়েন্টে ১৭৬ সেন্টিমিটার ও উব্দাখালি কলমাকান্দা পয়েন্টে ৮৫ সেন্টিমিটার ও ধনু বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় এসব নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো নতুন করে তলিয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয়রা।

গাইবান্ধা:

ব্রহ্মপুত্র নদের পানি রোববার সকাল ৬টায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নদ-নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলের কারণে কয়েকদিন থেকে গাইবান্ধার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। আগামী কয়েকদিনেও নদ-নদীগুলোতে ব্যাপক পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

রোববার সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপরে, ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার উপরে, করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টে ৫০ সেন্টিমিটার নিচে ও তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

ময়মনসিংহ:

ভারতীয় সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় নিতাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার রাতে প্রবল পাহাড়ি স্রোতে দু’টি জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের ভেতর পানি ঢুকছে।

শনিবার বিকাল পর্যন্ত চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। উপজেলার কালিকাবাড়ী গোদারাঘাট সংলগ্ন নিতাই নদীর উত্তর পাড় ভেঙে প্রবল স্রোতে দোকানপাট ও বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়েছে।

দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক জানান, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের কালিকাবাড়ী এজাহারের বাড়ির কাছে প্রায় ১০০ ফুট নদীর পাড় ভেঙে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করে কালিকাবাড়ী, নয়াপাড়া, জাঙ্গালিয়াপাড়া, দুধকুড়া, ভলল্বপুর, খাগগড়া ও সোহাগীপাড়া গ্রামসহ ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বহু মানুষ উঁচু রাস্তায় মালামাল, গবাদি পশুসহ আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। একের পর এক তলিয়ে যাচ্ছে উঁচু রাস্তাগুলো। পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে।

জামালপুর:

জামালপুরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে রোববার সকাল থেকে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইসলামপুর উপজেলার উলিয়া, পার্থশী, চিনাডুলী, কুলকান্দি, সাপধরী, চুকাইবাড়ি, নোয়ারপাড়া, দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ, চিকাজানী এবং মেলান্দহের মাহমুদপুর ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১১টি বিদ্যালয়।

যশোর:

টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে যশোরের তিন উপজেলায় বন্যাপরবর্তী জলাবদ্ধতার আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন মনিরামপুর, অভয়নগর ও কেশবপুরের দেড় লক্ষাধিক মানুষ।

বিশেষ করে হালসা, শ্যামকুড়, মশ্মিমনগর, নেহালপুর, ভোজগাতীসহ অন্তত ৯০টি গ্রাম বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে জলাবদ্ধ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার শংকায় পানিবন্দি মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে প্রায় সাত হাজার মানুষ সড়কের দুই ধারে ও স্কুল-কলেজের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তিন উপজেলার প্রায় ৩০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কেশবপুরে ইতোমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়ায় ফসল ও মৎস্যসম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। প্রাথমিকভাবে নিরূপণ করা এ ক্ষতির পরিমাণ ইতোমধ্যে ৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

সিরাজগঞ্জ:

যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, গুমানী, হুরাসাগর, ফুলজোড় নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন করে আবারো বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের ডাটা এ্যান্ট্রি অপারেটর আবুল কালাম আজাদ জানান, শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় (সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্ট এলাকায়) যমুনা নদীর পানি ৩৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, ভারতের আসামে বন্যা হওয়ার কারণে যমুনার পানি আরো ৪/৫ দিন বাড়বে। এতে দ্বিতীয় দফায় সিরাজগঞ্জে আবারো বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এবং যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।

রাঙামাটি:

ভারী বৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসার কারণে হ্রদের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে গত শনিবার ডুবে যায় রাঙামাটির জুলন্ত সেতু।

ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার বাঘাইছড়ি লংগদু উপজেলায় বন্যাকবলিত নিম্ন এলাকা এখনো পানির নিচে আছে। বাঘাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে বন্যা দুর্গতরা।

গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে টানা বৃষ্টিপাত হওয়ায় রাঙামাটির  নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নিচু এলাকায় বন্যার সৃষ্টির হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে নষ্ট হয়ে গেছে আউস ও আমন ফসলের।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রর ব্যবস্থাপক শফি উদ্দিন আহমেদ জানান, হ্রদের পানি বৃদ্ধি  পাওয়ায় বাঁধের ১৬ দরজায় পানি ছাড়া হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও:

ঠাকুরগাঁওয়ের টঙ্গন, সেনুয়া ও শুক নদীসহ আঞ্চলিক নদীগুলোতে রোববার সকাল থেকে পানি বিপদসীমার ৪০ মিলিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির এ অব্যাহত বৃদ্ধিতে জেলার প্রায় ১ হাজার গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

নীলফামারী:

ভারী বর্ষণে উজানের ঢলে তিস্তা নদী ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। রোববার সকাল ৯টায় নীলফামারীর ডিমলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ পূর্বাভাস কেন্দ্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিস্তায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

পানি বৃদ্ধির কারণে নীলফামারী জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তা অববাহিকার গ্রাম ও চর এলাকায় মাইকিং ও ঢোল সহরত করে মানুজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডিমলা খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের ছোটখাতা ও বানপাড়া গ্রামের ঘর-বাড়ির টিনের চালের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।

রংপুর:

রংপুরের গঙ্গচড়ায় তিস্তার নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সেই সঙ্গে ভাঙনের মুখে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে নদী র্তীরবর্তী এলাকার বিদ্যালয়গুলো। গঙ্গাচড়া সদর, কোলকোন্দ, আলমবিদিতর, লক্ষ্মীটারী ও নোহালী ইউনিয়নে নদী তীরবর্তী ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর