ঢাকা ১২:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী শিকারে হাবিবের অন্যরকম ফাঁদ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অগাস্ট ২০১৭
  • ৩৬০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অসহায় নারীকে নিজের খপ্পরে আটকাতে ফাঁদ পেতেছিল কথিত পীর আহসান হাবিব পেয়ার। আর তার এ ফাঁদে একে একে
আটকা পড়েছে ৩০ নারী। যাদের প্রত্যেককে ধর্ষণ করেছে। হাবিবের কৌশল- প্রথম সাক্ষাতেই বলতো আপনি অনেক সুন্দর। করতো সত্য-মিথ্যার মিশেলে প্রশংসার পর প্রশংসা। এতে নারীরা তার প্রতি হতো আকৃষ্ট। তারপর নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং নিজের ‘পীর’ ও ভালোমানুষী মুখোশ কাজে লাগিয়ে দিতো বিয়ের প্রলোভন। এরপর নিজের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ। নিজ কক্ষের সিলিংয়ে আগে থেকে লাগিয়ে রাখা সিসিটিভিতে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করতো। করতো হাতে থাকা মোবাইলেও। পরে তা ব্যবহার করে করতো বারবার ধর্ষণ। শুধু তাই নয়, দফায় দফায় হাতিয়ে নিতো লাখ লাখ টাকা। প্রতারণার শুরু থেকে জিন-ভূত তাড়ানোর নামে তাবিজ কবজের ফাঁদে ফেলে নারী শিকার তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে ইউটিউব ও ফেসবুকে নিজের আধ্যাত্মিক জগতের নানা কীর্তি তুলে ধরে চালাতো প্রচারণা।  এভাবে একের পর এক ধর্ষণ ও সে চিত্র ধারণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা পুলিশের কাছে ও আদালতে স্বীকার করেছে কথিত পীর আহসান হাবিব পেয়ার। গত ৫ই আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইন উদ্দিন সিদ্দিকীর আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি তা স্বীকার করেন। এতে আহসান হাবিব পেয়ার বলেন, আমি ২০১০ সালে ঢাকার বর্তমান ঠিকানায় আসি। জিন-ভূত তাড়ানোর নামে তাবিজ বিক্রি করি। পরবর্তীতে ইউটিউবে এইচপি টিভি চ্যানেল খুলে নিজের ভিডিও আপলোড করে সাধারণ মানুষের কাছে আসি। প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করি এবং গোপনে ভিডিও ধারণ করি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে টাকা দাবি করি। টাকা না দিলে তাদের খারাপ ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করি। বিভিন্ন সময় ওই দুই (অভিযোগপত্রে উল্লিখিত) নারীর কাছ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিই এবং অনেকের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজুমল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, তাবিজ-কবজের চিকিৎসা, বিয়ের প্রলোভন, ইউটিউবে ভালো ভালো ভিডিও প্রচার ইত্যাদি প্রতারণার মাধ্যমে নারীদের ফাঁদে ফেলে সে ধর্ষণ করে। ৩০ এর বেশি নারীকে ধর্ষণের কথা জানা গেছে। পনেরো নারীকে ধর্ষণের সময় ধারণ করা ভিডিও চিত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ভিডিও চিত্র ধারণের পর নারীদেরকে জিম্মি করে আদায় করতো লাখ লাখ টাকা। তার দু’টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৫ লাখ টাকা এবং অন্য কয়েকটি  অ্যাকাউন্টে ২৪ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।
আহসান হাবিব পেয়ারের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখীল থানার বদলকোট গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত আনোয়ার উল্লাহ। ভাই-বোনদের মধ্যে সে সবার ছোট। ২৬ বছরের পেয়ার অবিবাহিত। চট্টগ্রামের  হাটহাজারি মাদরাসায় ২০০৯ সালে এক বছর দাওরা পড়েন। এরপর চলে আসেন ঢাকায়। উঠেন খিলগাঁওয়ের তিলপা পাড়ার ২২ নম্বর রোডের ৮১৯/এ নম্বর ভবনের পঞ্চম তলার এক ফ্ল্যাটে। এরপর তিনি জিন-ভূত তাড়ানোর নামে প্রতারণার ব্যবসা শুরু করেন। ঝাড়-ফুঁক দিয়ে আয় করতে থাকেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার ব্যবসা। স্বামী-স্ত্রীর অমিলে মিল করে দেয়াসহ বিভিন্ন প্রতারণা করতে থাকেন। কয়েক বছর পর ইউটিউবে তিনি নিজের নামে একটি চ্যানেল খোলেন। পীর আহসান হাবিব পেয়ার টিভি যা সংক্ষেপে এএইচপি টিভি নামে প্রচারিত। কোনো জনপ্রিয় ইস্যু বা বিষয় পেলেই তা নিয়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে তা ইউটিউবে প্রচার করে দিয়ে আসছিল। মানুষের দৃষ্টি ও সহানুভূতি আদায়ের কৌশল হিসেবে অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে যাওয়ার নামে তাদের জন্য সহায়তা চেয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতো। আর সে জন্য তার নিজের বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর অনুরোধ করতো। তাতে ফলও পাওয়া গেছে। অসচেতনদের পাশাপাশি শিক্ষিত নারী-পুরুষরাও তার ফাঁদে পা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের স্ত্রীও তার ভক্তে পরিণত হন।
শুধু দেশেই নয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে তার কাছে টাকা আসতে থাকে। এই সুযোগে তার কাছে আসা নারীদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নিজের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করতো। কথার জাদুতে নারীদের ভুলিয়ে ভালিয়েই সে একের পর এক ধর্ষণ করে আসছিল। সে চিত্র ধারণ করে তা দেখিয়ে জিম্মি করে বারবার মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল। এএইচপি টিভির মাধ্যমে সে অনলাইনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তা দ্রুত মানুষের মন টানায় বিভিন্ন অসহায় মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে তাদেরকে দর্শকদের অনুদানের অর্থ দেয়ার নামে অন্যদেরকে আকৃষ্ট করতো। সেই টাকা নিতো নিজের বিকাশ নম্বর ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এভাবে সে লোভের ফাঁদে আটকে যায়। দিন দিন বাড়তে থাকে তার লোভ। অন্য দিকে মুখে দাড়ি, মাথায় পাগড়ি এবং সুন্দর-সাবলীল উপস্থাপনায় ধর্মীয় নৈতিকতার সুরে ইউটিউবে তার ভিডিওগুলোও মানুষের মনে কোনো সন্দেহ তো দূরের কথা তাকে সত্যিকারের পীর বলে ভাবতো। একের পর এক ধর্ষণ করে গেলেও ধরা না পড়ায় বাড়তে থাকে নারী লিপ্সা। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তার এসব অপকর্ম চলে ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। কিন্তু দেরিতে হলেও সম্প্রতি তাতে ছেদ পড়লো। একই কায়দায় দুই নারীকে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণের মাধ্যমে জিম্মি করে যথাক্রমে ৪ লাখ   ও ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় খিলগাঁও  থানায় মামলা করলে গত ১লা আগস্ট রাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের একটি টিম তাকে পাকড়াও করে।  পরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হলে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। এরপর গত ৩ ও ৪ আগস্ট তাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এরপর ৫ই আগস্ট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপরাধ স্বীকার করেছেন আহসান হাবিব।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইবার ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সজীবুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে প্রথম দিকে পেয়ার নারী ধর্ষণের কথা বারবার অস্বীকার করে গেছে। তার নিজের ধর্ষণের ভিডিও চিত্রগুলো তাকে দেখানোর পর সে মুখ খোলে। সব স্বীকার করে বহু  নারীকে ধর্ষণের কথা। এক নারীকে সে এক থেকে ১৫ বারও ধর্ষণ করেছে। একে একে তার ব্যাপক অপরাধের গোমর ফাঁস করে।
তিনি আরো বলেন, সিলিংয়ের এক কোণে বসানো মোবাইলের ক্যামেরায় সে ভিডিওগুলো ধারণ করে। এ ছাড়া তার কাছ থেকে শতাধিক পর্নো ভিডিও এবং সহস্রাধিক পর্নো ছবি উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বাইরে সে বিকাশেও মানুষের কাছ থেকে টাকা নিত। এক বছরে তার ২টি বিকাশ নম্বরে ১৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। ইউটিউবে তার এসব প্রতারণার ভিডিওগুলোর কয়েক লাখ থেকে ২৫ লাখ মতো ভিউয়ার হওয়ায় সে গত রমজানেও আড়াই লাখ টাকা আয় করেছে।
রাজধানীর কাছাকাছি এলাকায় তার শিকার এক তরুণী বলেন, ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে সে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করেছে। তারপর সে চিত্র ধারণ করে জিম্মি করেছে। পরে শুনেছি আরো বহু মেয়ের ইজ্জতে হাত দিয়েছে সে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

নারী শিকারে হাবিবের অন্যরকম ফাঁদ

আপডেট টাইম : ১১:৩৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অসহায় নারীকে নিজের খপ্পরে আটকাতে ফাঁদ পেতেছিল কথিত পীর আহসান হাবিব পেয়ার। আর তার এ ফাঁদে একে একে
আটকা পড়েছে ৩০ নারী। যাদের প্রত্যেককে ধর্ষণ করেছে। হাবিবের কৌশল- প্রথম সাক্ষাতেই বলতো আপনি অনেক সুন্দর। করতো সত্য-মিথ্যার মিশেলে প্রশংসার পর প্রশংসা। এতে নারীরা তার প্রতি হতো আকৃষ্ট। তারপর নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং নিজের ‘পীর’ ও ভালোমানুষী মুখোশ কাজে লাগিয়ে দিতো বিয়ের প্রলোভন। এরপর নিজের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ। নিজ কক্ষের সিলিংয়ে আগে থেকে লাগিয়ে রাখা সিসিটিভিতে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করতো। করতো হাতে থাকা মোবাইলেও। পরে তা ব্যবহার করে করতো বারবার ধর্ষণ। শুধু তাই নয়, দফায় দফায় হাতিয়ে নিতো লাখ লাখ টাকা। প্রতারণার শুরু থেকে জিন-ভূত তাড়ানোর নামে তাবিজ কবজের ফাঁদে ফেলে নারী শিকার তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে ইউটিউব ও ফেসবুকে নিজের আধ্যাত্মিক জগতের নানা কীর্তি তুলে ধরে চালাতো প্রচারণা।  এভাবে একের পর এক ধর্ষণ ও সে চিত্র ধারণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা পুলিশের কাছে ও আদালতে স্বীকার করেছে কথিত পীর আহসান হাবিব পেয়ার। গত ৫ই আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইন উদ্দিন সিদ্দিকীর আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি তা স্বীকার করেন। এতে আহসান হাবিব পেয়ার বলেন, আমি ২০১০ সালে ঢাকার বর্তমান ঠিকানায় আসি। জিন-ভূত তাড়ানোর নামে তাবিজ বিক্রি করি। পরবর্তীতে ইউটিউবে এইচপি টিভি চ্যানেল খুলে নিজের ভিডিও আপলোড করে সাধারণ মানুষের কাছে আসি। প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করি এবং গোপনে ভিডিও ধারণ করি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে টাকা দাবি করি। টাকা না দিলে তাদের খারাপ ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করি। বিভিন্ন সময় ওই দুই (অভিযোগপত্রে উল্লিখিত) নারীর কাছ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিই এবং অনেকের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজুমল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, তাবিজ-কবজের চিকিৎসা, বিয়ের প্রলোভন, ইউটিউবে ভালো ভালো ভিডিও প্রচার ইত্যাদি প্রতারণার মাধ্যমে নারীদের ফাঁদে ফেলে সে ধর্ষণ করে। ৩০ এর বেশি নারীকে ধর্ষণের কথা জানা গেছে। পনেরো নারীকে ধর্ষণের সময় ধারণ করা ভিডিও চিত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ভিডিও চিত্র ধারণের পর নারীদেরকে জিম্মি করে আদায় করতো লাখ লাখ টাকা। তার দু’টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৫ লাখ টাকা এবং অন্য কয়েকটি  অ্যাকাউন্টে ২৪ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।
আহসান হাবিব পেয়ারের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখীল থানার বদলকোট গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত আনোয়ার উল্লাহ। ভাই-বোনদের মধ্যে সে সবার ছোট। ২৬ বছরের পেয়ার অবিবাহিত। চট্টগ্রামের  হাটহাজারি মাদরাসায় ২০০৯ সালে এক বছর দাওরা পড়েন। এরপর চলে আসেন ঢাকায়। উঠেন খিলগাঁওয়ের তিলপা পাড়ার ২২ নম্বর রোডের ৮১৯/এ নম্বর ভবনের পঞ্চম তলার এক ফ্ল্যাটে। এরপর তিনি জিন-ভূত তাড়ানোর নামে প্রতারণার ব্যবসা শুরু করেন। ঝাড়-ফুঁক দিয়ে আয় করতে থাকেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার ব্যবসা। স্বামী-স্ত্রীর অমিলে মিল করে দেয়াসহ বিভিন্ন প্রতারণা করতে থাকেন। কয়েক বছর পর ইউটিউবে তিনি নিজের নামে একটি চ্যানেল খোলেন। পীর আহসান হাবিব পেয়ার টিভি যা সংক্ষেপে এএইচপি টিভি নামে প্রচারিত। কোনো জনপ্রিয় ইস্যু বা বিষয় পেলেই তা নিয়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে তা ইউটিউবে প্রচার করে দিয়ে আসছিল। মানুষের দৃষ্টি ও সহানুভূতি আদায়ের কৌশল হিসেবে অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে যাওয়ার নামে তাদের জন্য সহায়তা চেয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতো। আর সে জন্য তার নিজের বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর অনুরোধ করতো। তাতে ফলও পাওয়া গেছে। অসচেতনদের পাশাপাশি শিক্ষিত নারী-পুরুষরাও তার ফাঁদে পা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের স্ত্রীও তার ভক্তে পরিণত হন।
শুধু দেশেই নয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে তার কাছে টাকা আসতে থাকে। এই সুযোগে তার কাছে আসা নারীদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নিজের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করতো। কথার জাদুতে নারীদের ভুলিয়ে ভালিয়েই সে একের পর এক ধর্ষণ করে আসছিল। সে চিত্র ধারণ করে তা দেখিয়ে জিম্মি করে বারবার মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল। এএইচপি টিভির মাধ্যমে সে অনলাইনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তা দ্রুত মানুষের মন টানায় বিভিন্ন অসহায় মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে তাদেরকে দর্শকদের অনুদানের অর্থ দেয়ার নামে অন্যদেরকে আকৃষ্ট করতো। সেই টাকা নিতো নিজের বিকাশ নম্বর ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এভাবে সে লোভের ফাঁদে আটকে যায়। দিন দিন বাড়তে থাকে তার লোভ। অন্য দিকে মুখে দাড়ি, মাথায় পাগড়ি এবং সুন্দর-সাবলীল উপস্থাপনায় ধর্মীয় নৈতিকতার সুরে ইউটিউবে তার ভিডিওগুলোও মানুষের মনে কোনো সন্দেহ তো দূরের কথা তাকে সত্যিকারের পীর বলে ভাবতো। একের পর এক ধর্ষণ করে গেলেও ধরা না পড়ায় বাড়তে থাকে নারী লিপ্সা। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তার এসব অপকর্ম চলে ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। কিন্তু দেরিতে হলেও সম্প্রতি তাতে ছেদ পড়লো। একই কায়দায় দুই নারীকে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণের মাধ্যমে জিম্মি করে যথাক্রমে ৪ লাখ   ও ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় খিলগাঁও  থানায় মামলা করলে গত ১লা আগস্ট রাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের একটি টিম তাকে পাকড়াও করে।  পরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হলে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। এরপর গত ৩ ও ৪ আগস্ট তাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এরপর ৫ই আগস্ট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপরাধ স্বীকার করেছেন আহসান হাবিব।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইবার ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সজীবুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে প্রথম দিকে পেয়ার নারী ধর্ষণের কথা বারবার অস্বীকার করে গেছে। তার নিজের ধর্ষণের ভিডিও চিত্রগুলো তাকে দেখানোর পর সে মুখ খোলে। সব স্বীকার করে বহু  নারীকে ধর্ষণের কথা। এক নারীকে সে এক থেকে ১৫ বারও ধর্ষণ করেছে। একে একে তার ব্যাপক অপরাধের গোমর ফাঁস করে।
তিনি আরো বলেন, সিলিংয়ের এক কোণে বসানো মোবাইলের ক্যামেরায় সে ভিডিওগুলো ধারণ করে। এ ছাড়া তার কাছ থেকে শতাধিক পর্নো ভিডিও এবং সহস্রাধিক পর্নো ছবি উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বাইরে সে বিকাশেও মানুষের কাছ থেকে টাকা নিত। এক বছরে তার ২টি বিকাশ নম্বরে ১৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। ইউটিউবে তার এসব প্রতারণার ভিডিওগুলোর কয়েক লাখ থেকে ২৫ লাখ মতো ভিউয়ার হওয়ায় সে গত রমজানেও আড়াই লাখ টাকা আয় করেছে।
রাজধানীর কাছাকাছি এলাকায় তার শিকার এক তরুণী বলেন, ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে সে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করেছে। তারপর সে চিত্র ধারণ করে জিম্মি করেছে। পরে শুনেছি আরো বহু মেয়ের ইজ্জতে হাত দিয়েছে সে।