হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকাই চলচিত্রের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুরহস্য আবারো টক অব দ্য টাউন হয়ে উঠেছে। সোমবার এ নায়কের হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রুবি একটি ভিডিও প্রকাশ করার পর আলোচনা নতুন মোড় নেয়। সালমান হত্যাকাণ্ডের জন্য সালমানের শ্বশুর বাড়ির লোকজন ও নিজের স্বামীকে দায়ী করেন রুবি। জানান, তিনিই সালমান হত্যার একমাত্র জীবিত প্রমাণ।
তবে নানা আলোচনা আর সমালোচনার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার একটি বেসরকারী টেলিভিশানে দেয়া সরাসরি সাক্ষাতকারে রুবির বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে। সালমান শাহ’র হত্যা রহস্য উদঘাটন নিয়ে অগনিত ভক্তদের প্রত্যাশা ছিলো সত্যিটি বেরিয়ে আসুক, সত্যিকারের অপরাধীর বিচার হোক । তবে আলোচিত রুবির বক্তব্য ও সাক্ষী কতটুকু ‘গ্রহনযোগ্য’অথবা সত্যতা আছে সেটিও নতুন করে ভাবাচ্ছে অনেককেই।
রাবেয়া সুলতানা রুবি সালমান শাহ ও তার পরিবারকে নিয়ে এবারই প্রথম নয় আগেও নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর মিথ্যা কথা বলে বিভিন্ন সময় নানা ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ফেসবুকে সালমান শাহ’র মৃত্যু নিয়ে নানা মিথ্যা কথাও প্রচার করছেন। সালমানের মা নীলা চৌধুরীকে কটাক্ষ করে অনেক কথা বলেছেন। সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন এমন বক্তব্য পূর্বেও বলেছেন। কিন্তু সেদিনের প্রকাশিত ভিডিও আর আজকে একাত্তর জার্নালে দেয়া বক্তব্যে তার সুর পালটে গেল চমকে দেবার মত করেই !
এর আগে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালমানের শ্বশুর সাবেক ক্রিকেটার শফিকুল হক হীরা জানান, রুবির বক্তব্য নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাচ্ছেন না। রুবিকে তিনি উম্মাদ আখ্যা দেন। পাশাপাশি বলেন, সালমানের মা নীলা চৌধুরী টাকা দিয়েছেন রুবিকে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রুবি মঙ্গলবার এক স্ট্যাটাসে হীরার উদ্দেশে কয়েকটি প্রশ্ন করেছেন। তিনি বলেন, ‘সামিরার (সালমানের স্ত্রী) পরিবারকে বলো আমি শরীর ও মনের দিক থেকে অনেক ভালো আছি। তারা কীভাবে প্রমাণ করবে যে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ? সামিরার বাবা শফিকুল হক হীরা কী করে আমার সমন্ধে এত কিছু জানে?’
আজ বুধবার সকাল ১১ টায় তৃতীয় দফায় নিজের আইডি থেকে ফেসবুকের লাইভে এসে সামিরা ও তার পরিবারকে ‘গালাগালি’ করে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন আলোচিত এই রুবি । এর মাত্র কয়েকঘন্টা পরেই আজ বুধবার বিকেলের দিকে ফের ফেসবুক লাইভে এসে আশায় বুক বাধা কোটি সালমান ভক্তের বিশ্বাস নিয়ে ভয়ংকর এক প্রতারনাই করলেন আলোচিত এই নারী!
রুবির ফেসবুক থেকে দেখুন সেই ভিডিও
এর আগে মঙ্গলবার রুবি তার ফেসবুকে আরও লিখেন, ‘আমি তো উনাকে দেখিনি ১৯৯৭ সালের পরে। আমাকে নিয়ে এত খবর তিনি কী করে জানেন? কার কাছ থেকে তিনি এত খবর পান। মাথা খারাপ মানুষ নিউইয়র্কে হোটেল ভাড়া নিতে পারে না। আমি হোটেলে তিনদিন ধরে আছি। একা। একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে।’
রুবি জানান, সালমানের মায়ের সঙ্গে ১৯৯৫ সালের পর দেখা হয়নি। তার নিজের যথেষ্ট টাকা আছে।
আরো প্রশ্ন তোলেন, সালমানের মৃত্যুর দিন তার ছেলে ভিকিকে নিয়ে কিছু একটা সরিয়ে ছিলেন সামিরা। সেটা কী? কাজের লোকের কাছে কীভাবে সালমানের সুইসাইড নোট এল।
সালমান হত্যা মামলার ১১ জন আসামির মধ্যে অন্যতম রুবির পুরো নাম রাবেয়া সুলতানা রুবি। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়াতে চাইনিজ স্বামী ও দুই সন্তানসহ অনেকদিন ধরে বসবাস করছিলেন তিনি।
এদিকে, সালমান শাহ’র মৃত্যু রহস্য নিয়ে রুবির ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে ব্যপক আলোচনার পর বেসরকারী টিভি চ্যানেল ৭১ টিভি থেকে যোগাযোগ করা হলে রুবির প্রতিক্রিয়ায় বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে।
একাত্তর টিভি লাইভে সরাসরি কথা বলেছেন রুবি সুলতানা ও সালমান শাহ’র শশুর শফিকুল হক হীরা
সেই ইন্টারভিউ দেখে নিন এখানে ।
কে এই আলোচিত রুবি ?
সালমান শাহ মৃত্যুর সময় এভাবে বলা হয়েছিল, ‘সাড়ে ১১টার দিকে আবুল সামিরাকে জাগিয়ে বলেন, অনেকক্ষণ আগে ড্রেসিংরুমে ঢুকলেও তাঁর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সামিরা দরজার ডুপ্লিকেট চাবি খুঁজতে থাকেন। পৌনে ১২টায় ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে আবুল ও সামিরা ড্রেসিং রুমের দরজা খুলে দেখেন ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আছেন সালমান। সামিরা ও দুই কাজের মেয়ে সালমানকে উঁচু করে ধরেন। পাশের বাসার কাজের মেয়ে দড়ি কেটে সালমানকে নামিয়ে আনেন। দড়িটি ছিল ব্যায়ামের যন্ত্র থেকে বের করা। সালমান ফ্যান পর্যন্ত ওঠেন ঘরে থাকা একটি কাঠের মই দিয়ে। নামানোর পর পাশের বাসার কাজের মেয়েটি বলে, শরীর এখনো গরম। উনি মরেননি। তখন মাথায় ও গায়ে তেল মালিশ করা হয়। এ সময় মে ফেয়ার বিউটি পার্লার থেকে পারিবারিক পরিচিত রুবি আসেন, অংশ নেন সালমানকে বাঁচাতে।
হাউজিং কমপ্লেক্সের ম্যানেজারও আসেন।
সালমানকে বাঁচাতে আসা রুবিই হতাকাণ্ডের ৭ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত। ঘটনাটি আত্মহত্যা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ অপমৃত্যু র মামলা করলে তাতে আপত্তি জানায় পরিবার। এরপর সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মাদ ভাইসহ ১১ জনকে সালমান শাহের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে হত্যা মামলা দায়ের করে সালমানের পরিবার। অন্য অভিযুক্তরা হলেন- সামিরার মা লতিফা হক লুসি, রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, সহকারী নৃত্যপরিচালক নজরুল শেখ, ডেভিড, আশরাফুল হক ডন, রাবেয়া সুলতানা রুবি, মোস্তাক ওয়াইদ, আবুল হোসেন খান ও গৃহকর্মী মনোয়ারা বেগম।
এরইমধ্যে সম্প্রতি ফেসবুকে এক ভিডিও প্রকাশ করে সালমানের মৃত্যুর রহস্যের নতুন মোড় করলেন সেই রুবি। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেননি। তাকে খুন করা হয়েছিলো। সেই খুনের সঙ্গে জড়িত সালমানের স্ত্রী ও তার বাড়ির লোকজন। খুনের সঙ্গে আরও জড়িত রুবির ছোট ভাই ও তার স্বামী। ভিডিও বার্তায় রুবি অনুরোধ করেন সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীকে, তিনি যেন সালমান খুনের মামলাটি পুনরায় তদন্তের ব্যবস্থা করেন। রুবি নিজে এই খুনের সাক্ষী দেবেন।
রাবেয়া সুলতানা ওরফে রুবি থাকতেন সালমানের ফ্ল্যাটের অর্থাৎ ইস্কাটন প্লাজার উত্তর পাশের বিল্ডিংয়ে। তিনি রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রশিদের মেয়ে। প্রয়াত স্বামী ক্যাপ্টেন জামিল ছিলেন তার বর।
জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর যে ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয় তার স্বামী ছিলেন তাদের একজন। বর্তমানে এক চাইনিজের সঙ্গে সংসার করছেন। ক্যাপ্টেন জামিলের সংসারে জন্ম নেয়া পুত্র ভিকিকে নিয়ে ৩১ বছর আগে তিনি এই চাইনিজকে বিয়ে করেন। সালমানের মৃত্যুর পর বেশ কয়েক বছর পর তিনি আমেরিকায় পাড়ি দেন। সেখানেই স্বামী-সন্তান নিয়ে বাস করছেন তিনি।
সুপন রায়ের ‘সাংবাদিক ও সালমান শাহ’র অজানা কথা’ বইতে উল্লেখ আছে- সুষ্পষ্ট অভিযোগ আছে, সালমান-সামিরার দাস্পত্য কলহের পশ্চাতে রাবেয়া সুলতানা রুবির ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। সালমানকে তিনি দেখে নেবেন, এরকম কথাওবলেছেন অনেকের কাছে। যাদুশিল্পী আজরা জ্যাবিনের কাছে এই রুবি বলেছিলেন, ‘সালমানের সব টাকা তার মা নিয়ে যাচ্ছে সামিরার কি হবে? এবং এ অভিযোগটি করেছেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। তার ভাষ্য, আমার ছেলের টাকা আমি নিলাম না তার বাবা নিল- এসব নিয়ে রুবির মাথা ব্যথা কেন? রুবি কে, যে আমার সংসার জীবনে হস্তক্ষেপ করবে?’
সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরার বর্তমান স্বামীর একটি ইন্টারভিউ
এর আগে প্রকাশিত সংবাদ থেকে
কিংবদন্তি চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুরহস্যে নতুন বাঁক তৈরি হয়েছে। সালমান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রুবি দাবি করেছেন, এই নায়ক আত্মহত্যা করেননি, তাকে খুন করা হয়েছে। প্রবাসী ওই নারীর মতে, সালমান হত্যার সঙ্গে নায়কের স্ত্রী সামিরার পরিবার ও রুবির স্বামী জড়িত।
আমেরিকা প্রবাসী রাবেয়া সুলতানা রুবি সম্প্রতি নিজের ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা ছেড়েছেন। সেটি এখন মিলছে ইউটিউবেও। এতে তিনি দাবি করে বলেছেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, সালমান শাহ খুন হইছে। আমার হাজব্যান্ড (জন) এইটা করাইছে আমার ভাইরে দিয়ে। আমার হাজব্যান্ড করাইছে, এইটা সামিরার ফ্যামিলি করাইছে আমার হাজব্যান্ডরে দিয়ে, সবাইরে দিয়ে সব চাইনিজ মানুষ। সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, সালমান শাহ খুন হইছে।’
সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে ভিডিওতে রুবি বলেছেন, ‘ভাবী, আপনার ছেলেরে খুন করা হইছে। আমার যা করার আমি করবো, আমি ভেগে আছি ভাবী, নাইলে আমারেও মেরে ফেলতো এরা সবাই মিলে। লুসি, আমার হাজব্যান্ড জন, সবাই মিলে আমার বাচ্চাটা, আমার বাচ্চা রিকি আর আমার জানের ওপর অনেক জিনিস আছে ভাবী। দয়া করে কিছু করেন ভাবী, কিছু করেন, কিছু করেন। যেখানেই যান ইনভেস্টিগেশন করেন। এটা খুন ছিলো, ইমন আত্মহত্যা করে নাই। সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই ভাবী, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনাই আপনার ছেলে আত্মহত্যা করে নাই, আপনার ছেলেরে খুন করানো হইছে। আমার বাপরেও মনে হয় মাইরা ফেলছে ভাবি, আমি জানি না, আমার ভাইটারেও মাইরা ফেলছে মনে হয়।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এরই মধ্যে এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। রুবি দাবি করেছেন তিনিই শেষ ব্যক্তি যিনি এই খুনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানেন। এ অবস্থায় সালমানের হত্যাকারীরা রুবির প্রাণনাশ করতে পারে বলে আতঙ্কিত বোধ করছেন।
ভিডিওতে রুবি আরও বলেন, ‘আমি রুবি, এখানে ভেগে আসছি, আমি ভেগে আসছি, এই কেস যেন না শেষ হয়। আমি যেভাবে পারি, ঠিকমত যেন আমি সাক্ষী দিতে পারি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করেন।’
সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন তার স্ত্রী সামিরা। এদিকে সালমান শাহর পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। দুই দশকেও হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হয়নি। পুলিশ দুই দফা ময়নাতদন্ত করে একে আত্মহত্যা বলেছিলো। কিন্তু নারাজি আবেদন করেছে সালমান শাহের পরিবার। মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তও হয়েছিলো। এখন এটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ে রয়েছে। ১১ জনের বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় সামিরা ছাড়াও আসামি করা হয় চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও ভিডিওবার্তা প্রচারকারী রাবেয়া সুলতানা রুবিকে। এ অবস্থায় রুবির এমন আচরণও সন্দেহজনক অনেকের কাছে। আসামী হয়ে তিনিই বা কেন এমন ভিডিও প্রকাশ করলেন?
১৯৯২ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়ে সালমান শাহের রূপালি পর্দায় যাত্রা শুরু। চার বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এর প্রতিটিই দর্শকপ্রিয়তা পায়।
সালমান শাহের মৃত্যুর পর স্ত্রী সামিরা মুস্তাক ওয়াইজ নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে সংসার করছেন থাইল্যান্ডে। তাদের সংসারে তিনটি সন্তানও রয়েছে।