হাওর বার্তা ডেস্কঃ শোকের মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নিজ ঘরের মধ্যেও বুকে তার কালোব্যাজ। তিনি আর কেউ নন জাতীয় ৪ নেতার অন্যতম এ এইচ এম কামরুজ্জামানের পুত্র, রাজশাহী আওয়ামী লীগের কান্ডারি, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এইচ এম খায়েরুজ্জামান লিটন।
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জে এক বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা এএইচএম কামারুজ্জামান এবং মাতার নাম জাহানারা বেগম। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে লিটন চতুর্থ এবং ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। বংশগত ভাবে লিটনের পরিবার রাজনীতির সাথে জড়িত। তার বাবা এএইচএম কামারুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। লিটনের দাদা আবদুল হামিদ মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন রাজশাহী অঞ্চলের মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অবিভক্ত বাংলার আইন সভার সদস্য (এমএলএ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুল হামিদের পিতার নাম হাজ্বী লাল মোহাম্মাদ। রাজশাহী গলুই এর জমিদার হাজ্বী লাল মোহাম্মদ কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি রাজশাহী থেকে পর পর দুবার লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের (এমএলসি) সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি রাজশাহী এসোসিয়েশন ও বরেন্দ্র একাডেমীর একমাত্র মুসলিম সদস্য ছিলেন। লিটনের বড় মেয়ে অরনা জামানও ছাত্র রাজনীতি করছেন। স্ত্রী শাহিন আক্তার রেইনী রাজশাহী অঞ্চলের একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী হিসাবেই পরিচিত।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজশাহীর উপশহর এলাকায় নিজ বাসায় পূর্বপশ্চিমের সঙ্গে আগামী সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি, বৃহত্তর রাজশাহীর আওয়ামী লীগের রাজনীতি, আওয়ামী লীগে বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশ, ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলাভাবে আলাপ করেছেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তার সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশগুলো পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
শুরুতেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জনগণের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাই, বর্তমান এমপি রাজশাহী সদরের উন্নয়নে তেমন কাজ করেননি। বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে লিটন বলেন, একই আসনে মেয়র ও এমপির পক্ষে সমান উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব নয়। সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নমূলক কাজ মেয়র কেন্দ্রিক। এখানে মেয়রকে অবশ্যই ডাইনামিক, দক্ষ, যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। বছরে প্রত্যেক এমপি ২০ কোটি টাকা যে উন্নয়ন কাজের জন্য বরাদ্দ পান তা দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয়। ফলে মানুষের প্রত্যাশা থাকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে। বিগত সময়ে আমি চেষ্টা করেছি সেই প্রত্যাশা পূরণের।
রাজশাহী সিটির বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে লিটন বলেন, ২০১৩ সালের পর বিএনিপর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পুলিশ হত্যায় পলাতক ছিলেন দীর্ঘদিন। প্যানেল মেয়র নিজামুল আজিমই রাসিক পরিচালনা করেছেন। শেষ সময়ে বুলবুল আবারো এসেছেন।
লিটন বলেন, আমি পৌঁনে ৫ বছর রাসিকের দায়িত্বে ছিলাম। শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়নি। শুধু শিক্ষা ও চিকিকিৎসা কেন্দ্রিকশহর এই রাজশাহী। আমার আগেও ১৭ বছর ধরে বিএনপির মেয়র ছিলেন একজন। কিন্তু তার ১৭ বছরে যে কাজ হয়নি আমার সময়ে অনেক বেশি উন্নয়ন পেয়েছে রাজশাহীবাসী। সাধারণ মানুষ, পথচারী, শিক্ষক, ভোটাররা এখন বলছেন, গতবার আমাকে ভোট না দিয়ে তারা ভুল করেছিলেন। এবার আর ভুল করে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হতে চান না। এবার ভুল করেত চান না বলেই আগামী মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হবে। এছাড়া দলীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, উঠান বৈঠক চলছে। মানুষের ভুল ভেঙেছে, তাই রাজশাহীর উন্নয়নে আমাকে চায়।
আওয়ামী লীগের মধ্যে জামায়ত-বিএনপি নেতাদের অনুপ্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বিষয়টিকে সবসময়ই ক্ষতিকারক মনে করি। হার্ডকোর বিএনপি-জামায়াত কখনোই আওয়ামী লীগ হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় তারা কাজ করতে পারে না। সুযোগ সুবিধা নিয়ে সময় মতো চলে তারা যাবে। পরগাছাকে নিয়ে দল দুর্বল হয়ে যায়। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। কোনো অনুপ্রবেশকারীর ঠাঁই রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগে হবে না।
আগামী মেয়র নির্বাচনে জিতলে কি কি পরিকল্পনা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে লিটন বলেন, রাজশাহীর উন্নয়নকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছিলাম। ১০, ২০ এবং ৫০ বছরের স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী। দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ না পেয়ে আমার অনেক কাজ থমকে গেলে। রাজশাহীতে গ্যাস এনেছিলাম শিল্প কারখানার জন্য। কৃষি ভিত্তিক পণ্য ২০ টি পণ্য রপ্তানি হতে পারতো। বিজিএমইএ-বিকেএমইএ ৫ টি কারখানার মধ্যে একটি করতে রাজি হয়েছিলেন। কারখানারও মালিকরাও এসেছিলেন। ৩০ থেকে ৫০ টি কারখানা করতে পারলে ৫০ হাজার নারীর কর্মসংস্থান হতো। স্বল্প ব্যয়ের শহরে বেকারত্বের হার অনেকটাই কমে আসতো। আগামীতে নির্বাচিত হতে পারলে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া সুগার মিল, টেক্সটাইল মিল চালু করতে চাই। এই শহরের সীমানা বাড়ানোর কথা বলে লিটন বলেন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার সিটির আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। মাত্র ৬০০০ ফিট রানওয়ে করতে পারলেই রাজশাহী বিমানবন্দরে আন্তজার্তিক বিমান বন্দর হবে। তখন কলকাতা ছাড়াও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। শিক্ষা নগরী হিসাবে রাজশাহীতে পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চান করতে চান তিনি। তাহলেই শিক্ষার ক্ষেত্রে সব দিক পূরণ হবে বলেও মনে করেন তিনি।