নারী নির্যাতন আইনে করা অভিযোগের বিচার কোর্ট মার্শালে চলতে পারে কি না, সে প্রশ্ন ওঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নুসরাত জাহান তুষ্টিকে নির্যাতনের ঘটনায় তার স্বামী মেজর নাজির উদ্দিনের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম হাই কোর্ট স্থগিত করেছে।
সেই সঙ্গে এ মামলার নথি কোর্ট মার্শালে বিচারের জন্য পাঠাতে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে দেওয়া সেনা সদর দপ্তরের চিঠির কার্যকারিতাও স্থগিত হয়ে গেছে।
তুষ্টির বাবা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম ভূঁইয়ার করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বুধবার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি একেএম জহুরুল হকের হাই কোর্টে বেঞ্চ রুলসহ এই স্থগিতাদেশে দেয়।
আবেদনকারীর আইনজীবী অনীক আর হক আদেশের পর বলেন, “যতক্ষণ এই আইনগত প্রশ্নের জটিলতার অবসান না হচ্ছে, ততক্ষণ মামলার কার্যক্রম ও চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত থাকছে।”
পরিবারের অভিযোগ, যৌতুকের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র শিক্ষার্থী তুষ্টিকে বেঁধে নির্মমভাবে পেটায় তার স্বামী মেজর নাজির উদ্দিন। টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে গত ৩০ মার্চ তুষ্টির শ্বশুরবাড়িতে ওই ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ২ এপ্রিল টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা হয়।
নুসরাতকে উদ্ধার করতে গিয়ে তার বাবা নুরুল ইসলাম, মা শাহনাজ আক্তার ও ভাই মুঈদ হাসান তড়িতও মারধরের শিকার হন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
ওই সময় নাজির উদ্দিন চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
অনীক আর হক জানান, সেনা কর্মকর্তা হওয়ায় কোর্ট মার্শালে নাজির উদ্দিনের বিচার করার জন্য তুষ্টির পরিবারের করা মামলাটির নথিপত্র চায় সেনা সদরদপ্তর।
সেনা সদর দপ্তরের এরিয়া কমান্ডার (লজিস্টিকস) মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খান গত ১১ মে এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি চিঠি দেন।
ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেই গত সোমবার হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন তুষ্টির বাবা নূরুল ইসলাম। তার যুক্তি, বিশেষ আইনের আওতাভুক্ত কোনো অপরাধের বিচার কেবল ওই বিশেষ আইনেই বিচারযোগ্য; তা কোর্ট মার্শালে বিচারের এখতিয়ারভুক্ত নয়।
রিট আবেদনের ওপর শুনানি করে আদালত একটি রুল দেয়। নথি হস্তান্তরের জন্য পাঠানো ওই চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
সেই সঙ্গে মামলার কার্যক্রম ও চিঠির কার্যকারিতা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।
প্রতিরক্ষা সচিব, আইন সচিব, এরিয়া কামান্ডার, সেনা প্রধান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেলকে (কোর্ট মার্শালের বিচারক) বিবাদী করা হয়েছে এই রিট আবেদনে।
আবেদনকারী পক্ষে আদালতে শুনানি করেন অনীক আর হক। তার সঙ্গে ছিলেন নাসরিন আক্তার ও মুক্তাদির রহমান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আল আমিন সরকার।
আদেশের পর অনীক আর হক বলেন, “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা কোর্ট মার্শালে বিচারের আওতাভুক্ত নয়। কেননা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩ ধারায় বলা হয়ছে, অন্য কোনো আইনে যাই থাকুক, এ আইনের বিধানই কার্যকর হবে।
“আর এ ধরনের অপরাধের বিচার কোর্ট মার্শাল ল’ এর আওতাভুক্ত নয়। সাধারণ ফৌজদারি আদালতে বিচারযোগ্য মামলা কোর্ট মার্শালে বিচার করা যায়।”
এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, তুষ্টিকে নির্যাতনের মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হলে মেজর নাজিরের সর্বোচ্চ তিন বছরের সাজা হতে পারে। আর কোর্ট মার্শলে গেলে তার ১ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।