ঢাকা ০১:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্ডারে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আব্রাম না থাকলে তাকে আমার যোগ্য বলেও মনে করতাম না ওমরাহ শেষে গ্রামে ফিরে খেজুর-জমজমের পানি বিতরণ করল শিশু রিফাত বিদেশে প্রশিক্ষণে ঘুরে-ফিরে একই ব্যক্তি নয়, জুনিয়রদের অগ্রাধিকার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা রেমিট্যান্সে জোয়ার, ২১ দিনে এলো ২ বিলিয়ন ডলার গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শক-শ্রোতার মতামত জরিপ জানুয়ারিতে বুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ আসামি রিমান্ডে বিয়ের আগে পরস্পরকে যে প্রশ্নগুলো করা জরুরি

যৌনকর্মী ভাড়া করা মানে তাকে কিনে নেয়া নয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৭:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ অগাস্ট ২০১৫
  • ২৬৩ বার

বুধবার যৌনকর্মীদের অধিকার সমর্থনের নীতি উন্নয়নে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।গৃহীত নতুন প্রস্তাবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যৌন সেবা ক্রয়-বিক্রয়কে বিশ্বব্যাপী অপরাধ হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে।

চলতি সপ্তাহে এটি তুমুল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। যেহেতু বিষয়টি প্রচন্ড উন্মাদনার সৃষ্টি করেছে, কিছু দিকে লক্ষ্য রেখে যৌনব্যবসায়ে নিয়োজিত ব্যক্তিদের নিয়ে ধারণার পরিবর্তন আনা উচিত।

১. দাসত্বের প্রসঙ্গ ছাড়া ক্রয়-বিক্রয়ের কথা উচিত নয়:- অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের ভাড়া করা হয়, কিনে ফেলা হয় না। মানুষের আক্ষরিক দাসত্বের ক্ষেত্রে ক্রয় শব্দটি যেতে পারে। কিন্তু কিছু লোক সম্মতিসূচক যৌন কাজে ‘ক্রয়-বিক্রয়’ শব্দটি ব্যবহার করছে।

পার্থক্যটি শাব্দিক ত্রুটির চেয়ে বেশি। এ ধরণের ভাষার প্রয়োগে মনে হতে পারে কারো সাথে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হওয়া মানে তাকে কিনে নেয়া। পুরুষ কোন নারীর সাথে অর্থের বিনিময়ে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করলে কোন অধিকার সৃষ্টি হয় না, বরং অর্থ ছাড়া স্বেচ্ছায় দুজন লিপ্ত হলেই সেখানে অধিকার জন্মায়। তাহলে ধর্ষণের ক্ষেত্রে কি দাঁড়ায়? ধর্ষক কি ধর্ষিত ব্যক্তির মালিক বনে যায়!

“যৌনকর্মী ভাড়া করা মানে তাকে কিনে নেয়া নয়”

একবার সম্মতি পাওয়া মানে সবসময় সম্মত পাওয়া -এ ধরণের চিন্তায় বৈবাহিক ধর্ষণ অসম্ভব, নারীদেহ যে কোনো উপায়েই তার যৌনসঙ্গীর অধিকারে মতো ভুল ধারণাকে সমর্থন করে।

পতিতাবৃত্তি বর্জনের পক্ষে কাজ করে যাওয়া কিছু দল, যারা নারী পাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার, পতিতাবৃত্তি একধরণের শোষণ-এই বিশ্বাস তৈরির জন্য পরিভাষাটি ব্যবহার করেন। অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে সংগঠিত যৌন সম্পর্ক এবং পাচারকৃত নারীদের সাথে সংগঠিত যৌন সম্পর্ক উভয়ই যে ক্ষতিকর-এ নিয়ে যৌনকর্মীদের সমর্থক এবং মানবাধিকার সংস্থার মধ্যে দীর্ঘ বিতর্ক রয়েছে। শোষণ কিংবা নির্যাতনের শিকার কেউই যৌনদাস নয়। বাস্তবতা আরও কঠিন এবং বিষয়টিকে অতি সহজভাবে দেখা কোন সমাধান নয়। যৌনব্যবসায় জড়িত একটা দল সবসময়েই নির্যাতনের শিকার। শিশুরা যৌনসম্পর্কে সম্মতি দিতে পারে না, সুতরাং শিশু পতিতা শব্দটি আরোপের কোন মানে হয় না।

২. যৌনতাবৃত্তিকে মজ্জাগতভাবে নিচু কাজ ঘোষণা করা যাবে নাঃ-

অনেকে মনে করেন যৌনতা মজ্জাগতভাবে খারাপ কাজ। যৌনতা কিছু ক্ষেত্রে খারাপ তাই বলে মজ্জাগতভাবে নয়। মজ্জাগতভাবে মানে এই নয় যে, কিছু মানুষ এটাকে অসম্মানজনক মনে করে অথবা কিছু পরিস্থিতিতে এটি অসম্মানজনক। মজ্জাগতভাবে বলতে বোঝায় যৌনতাবৃত্তি সবসময় অসম্মানজনক, তুমি কে বা কোন পরিস্থিতিতে এ পেশায় এসেছ তার কোন মূল্য নেই।

বিশিষ্ট এডভোকেট এবং সাবেক যৌনকর্মী জ্যানেট মক ২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদনে লিখেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, যৌনকর্মীরা পতিতাবৃত্তিকে অধঃপতন হিসাবে মনে করে না।

কাউকে ব্যবহার করায় আমি বিশ্বাসী নই- অবহেলিত মানুষের শরীরই একমাত্র সম্পদ, বিশেষত যারা গরীব, নিম্ন আয়ের, এবং বর্ণবৈষম্যের শিকার- নিজের যত্নের জন্য তাদের ব্যবহার করা লজ্জাজনক। সংস্কৃতির এই নির্বাসন, কলঙ্কপূর্ণ এবং অপরাধে জর্জরিত হওয়া, সংগ্রামী জীবন থেকে মুক্তির জন্য যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া আমার কাছে লজ্জাজনক।

যৌনকর্মকে অসম্মানজনক বলা মানে একজন ব্যক্তিকে যৌনতার মূল্যে যাচাই করা। এটি যৌনকর্মে লিপ্ত নারীদের যৌনলাঞ্ছনার শিকার হতে বলার সমার্থক। যাতে মনে করা হয়- একজন ধর্ষিত ব্যক্তিকে তার শুদ্ধতার প্রমাণ দেয়া প্রয়োজন কিংবা নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য দেখানোর জন্য তার যৌন ঘটনাটি সম্পূর্ণ বর্ণনা করা প্রয়োজন অথবা ‘বেশ্যা’ বলার মাধ্যমে তাকে বাতিল করে দেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত। এই চিন্তার দ্বারা এও বোঝায় যে, লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল এবং হিজড়াদের অন্যান্য মানুষের মতো সমান অধিকার পাওয়া উচিত নয়।

৩. যৌনকর্মীদের সম্মতিকে ভুল বলবেন না- কিছু লোক জোর দিয়ে বলে যে, অর্থের বিনিময় ছাড়া কোন যৌনকর্মী যৌনতায় সম্মত হয় না এবং যৌনকর্মীরা শারীরিকভাবে বাধ্য না হলেও পরিস্থিতি অর্থাৎ টাকার জন্য যৌনতায় বাধ্য হয়। সম্মতিসুচক যৌনতাকে তারা ‘পরিশোধ বাবদ ধর্ষণ’ বলে।

স্বাভাবিকভাবেই যৌনকর্মীদের এ প্রসঙ্গে কিছু বলার থাকে। যেমন-তারা যদি বলে এই যৌনতা সম্মতিসূচক, তাহলে সম্মতিসূচক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল

যৌনকর্মী ভাড়া করা মানে তাকে কিনে নেয়া নয়

আপডেট টাইম : ০৯:৪৭:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ অগাস্ট ২০১৫

বুধবার যৌনকর্মীদের অধিকার সমর্থনের নীতি উন্নয়নে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।গৃহীত নতুন প্রস্তাবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যৌন সেবা ক্রয়-বিক্রয়কে বিশ্বব্যাপী অপরাধ হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে।

চলতি সপ্তাহে এটি তুমুল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। যেহেতু বিষয়টি প্রচন্ড উন্মাদনার সৃষ্টি করেছে, কিছু দিকে লক্ষ্য রেখে যৌনব্যবসায়ে নিয়োজিত ব্যক্তিদের নিয়ে ধারণার পরিবর্তন আনা উচিত।

১. দাসত্বের প্রসঙ্গ ছাড়া ক্রয়-বিক্রয়ের কথা উচিত নয়:- অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের ভাড়া করা হয়, কিনে ফেলা হয় না। মানুষের আক্ষরিক দাসত্বের ক্ষেত্রে ক্রয় শব্দটি যেতে পারে। কিন্তু কিছু লোক সম্মতিসূচক যৌন কাজে ‘ক্রয়-বিক্রয়’ শব্দটি ব্যবহার করছে।

পার্থক্যটি শাব্দিক ত্রুটির চেয়ে বেশি। এ ধরণের ভাষার প্রয়োগে মনে হতে পারে কারো সাথে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হওয়া মানে তাকে কিনে নেয়া। পুরুষ কোন নারীর সাথে অর্থের বিনিময়ে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করলে কোন অধিকার সৃষ্টি হয় না, বরং অর্থ ছাড়া স্বেচ্ছায় দুজন লিপ্ত হলেই সেখানে অধিকার জন্মায়। তাহলে ধর্ষণের ক্ষেত্রে কি দাঁড়ায়? ধর্ষক কি ধর্ষিত ব্যক্তির মালিক বনে যায়!

“যৌনকর্মী ভাড়া করা মানে তাকে কিনে নেয়া নয়”

একবার সম্মতি পাওয়া মানে সবসময় সম্মত পাওয়া -এ ধরণের চিন্তায় বৈবাহিক ধর্ষণ অসম্ভব, নারীদেহ যে কোনো উপায়েই তার যৌনসঙ্গীর অধিকারে মতো ভুল ধারণাকে সমর্থন করে।

পতিতাবৃত্তি বর্জনের পক্ষে কাজ করে যাওয়া কিছু দল, যারা নারী পাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার, পতিতাবৃত্তি একধরণের শোষণ-এই বিশ্বাস তৈরির জন্য পরিভাষাটি ব্যবহার করেন। অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে সংগঠিত যৌন সম্পর্ক এবং পাচারকৃত নারীদের সাথে সংগঠিত যৌন সম্পর্ক উভয়ই যে ক্ষতিকর-এ নিয়ে যৌনকর্মীদের সমর্থক এবং মানবাধিকার সংস্থার মধ্যে দীর্ঘ বিতর্ক রয়েছে। শোষণ কিংবা নির্যাতনের শিকার কেউই যৌনদাস নয়। বাস্তবতা আরও কঠিন এবং বিষয়টিকে অতি সহজভাবে দেখা কোন সমাধান নয়। যৌনব্যবসায় জড়িত একটা দল সবসময়েই নির্যাতনের শিকার। শিশুরা যৌনসম্পর্কে সম্মতি দিতে পারে না, সুতরাং শিশু পতিতা শব্দটি আরোপের কোন মানে হয় না।

২. যৌনতাবৃত্তিকে মজ্জাগতভাবে নিচু কাজ ঘোষণা করা যাবে নাঃ-

অনেকে মনে করেন যৌনতা মজ্জাগতভাবে খারাপ কাজ। যৌনতা কিছু ক্ষেত্রে খারাপ তাই বলে মজ্জাগতভাবে নয়। মজ্জাগতভাবে মানে এই নয় যে, কিছু মানুষ এটাকে অসম্মানজনক মনে করে অথবা কিছু পরিস্থিতিতে এটি অসম্মানজনক। মজ্জাগতভাবে বলতে বোঝায় যৌনতাবৃত্তি সবসময় অসম্মানজনক, তুমি কে বা কোন পরিস্থিতিতে এ পেশায় এসেছ তার কোন মূল্য নেই।

বিশিষ্ট এডভোকেট এবং সাবেক যৌনকর্মী জ্যানেট মক ২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদনে লিখেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, যৌনকর্মীরা পতিতাবৃত্তিকে অধঃপতন হিসাবে মনে করে না।

কাউকে ব্যবহার করায় আমি বিশ্বাসী নই- অবহেলিত মানুষের শরীরই একমাত্র সম্পদ, বিশেষত যারা গরীব, নিম্ন আয়ের, এবং বর্ণবৈষম্যের শিকার- নিজের যত্নের জন্য তাদের ব্যবহার করা লজ্জাজনক। সংস্কৃতির এই নির্বাসন, কলঙ্কপূর্ণ এবং অপরাধে জর্জরিত হওয়া, সংগ্রামী জীবন থেকে মুক্তির জন্য যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া আমার কাছে লজ্জাজনক।

যৌনকর্মকে অসম্মানজনক বলা মানে একজন ব্যক্তিকে যৌনতার মূল্যে যাচাই করা। এটি যৌনকর্মে লিপ্ত নারীদের যৌনলাঞ্ছনার শিকার হতে বলার সমার্থক। যাতে মনে করা হয়- একজন ধর্ষিত ব্যক্তিকে তার শুদ্ধতার প্রমাণ দেয়া প্রয়োজন কিংবা নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য দেখানোর জন্য তার যৌন ঘটনাটি সম্পূর্ণ বর্ণনা করা প্রয়োজন অথবা ‘বেশ্যা’ বলার মাধ্যমে তাকে বাতিল করে দেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত। এই চিন্তার দ্বারা এও বোঝায় যে, লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল এবং হিজড়াদের অন্যান্য মানুষের মতো সমান অধিকার পাওয়া উচিত নয়।

৩. যৌনকর্মীদের সম্মতিকে ভুল বলবেন না- কিছু লোক জোর দিয়ে বলে যে, অর্থের বিনিময় ছাড়া কোন যৌনকর্মী যৌনতায় সম্মত হয় না এবং যৌনকর্মীরা শারীরিকভাবে বাধ্য না হলেও পরিস্থিতি অর্থাৎ টাকার জন্য যৌনতায় বাধ্য হয়। সম্মতিসুচক যৌনতাকে তারা ‘পরিশোধ বাবদ ধর্ষণ’ বলে।

স্বাভাবিকভাবেই যৌনকর্মীদের এ প্রসঙ্গে কিছু বলার থাকে। যেমন-তারা যদি বলে এই যৌনতা সম্মতিসূচক, তাহলে সম্মতিসূচক।