কিশোরগঞ্জ মিঠামইনের ‘আভুরা সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে হাওর হবে পর্যটনের প্রসিদ্ধ জায়গা’-এমন স্বপ্ন দেখছেন রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক(এমপি)

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  কিশোরগঞ্জ মিঠামইনের ‘আভুরা সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে হাওর হবে পর্যটনের প্রসিদ্ধ জায়গা’-এমন স্বপ্ন দেখছেন কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা খ্যাত অষ্টগ্রাম-ইটনা-মিটামইনের (কিশোরগঞ্জ-৪) সংসদ সদস্য (এমপি) রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক।
তার ভাষ্যমতে, ‘হাওরে এক সময় চলাচলের একমাত্র বাহন ছিল নাও (নৌকা) আর পাও (পা)। তবে এ অঞ্চলে বর্তমানে সাব মার্সেবল রোড নির্মাণ হওয়ায় নাও আর পাওয়ের ওপর নির্ভরতা অনেকটা কমে গেছে।’
‘ইতোমধ্যে হাওর উপজেলায় অল ওয়েদার রোড (আভুরা সড়ক) নির্মাণের জন্য টেন্ডার হয়েছে, এজন্য বাজেট প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। সড়কটা নির্মাণ হলে অবহেলিত হাওর হবে পর্যটনের প্রসিদ্ধ জায়গা।’
হাওরের বর্তমান-অতীত ও ভবিষ্যত অবস্থা এবং পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক।
বাবা বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মতো তিনিও হাওরের উন্নয়নে স্বপ্ন দেখেন। আর দশটা এলাকার মতো বর্ষায় টইটুম্বুরের হাওরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে।
হাওরবাসীর ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে, সঙ্গে শিক্ষার আলোও। বাস্তবে হয়েছেও তাই। এরইমধ্যে হাওরের মাঝখানে বিচ্ছিন্ন গ্রামেও সন্ধ্যায় কেরোসিনের কুপির বদলে চারদিক আলোকিত করে জ্বলে ফিলামেন্টের তারে তৈরি বৈদ্যুতিক বাতি।
শীতে ক্ষেতের ধূলোমাখা আইল আর বর্ষায় নৌকা দিয়ে হাস্যোজ্জ্বল ছেলে-মেয়ের স্কুলে যাওয়া আরও বেশি আশাবাদী করে তোলো বাবা মো. আবদুল হামিদ ও ছেলে তৌফিককে।
আলাপকালে হাওর নিয়ে বাবার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে ছেলে তৌফিক বলেন, ‘হাওরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের চিন্তা করে আব্বা (রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ) ১৯৯৬ সালে সংসদের ডেপুটি স্পিকার থাকাকালে সড়কের জন্য রোড অ্যান্ড হাইওয়ের সঙ্গে কথা বলেন।’
‘কিন্তু ওই সময় রোড অ্যান্ড হাইওয়ের লোকজন বলেছিলেন- হাওরে রাস্তা নির্মাণ করা হলে বেশিদিন টিকবে না। কিন্তু আব্বা তাদের বললেন, হাওরে মানুষের ক্ষেতের (কৃষি জমি) আইল তো বছরের পর বছর থাকে। সড়ক থাকবে না কেন?’
‘এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালে বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ইটনা থেকে মৃগা ইউনিয়ন, মিঠামইন উপজেলা হয়ে ঘাগড়া ইউনিয়ন এবং অষ্টগ্রাম থেকে ইকরদিয়া পর্যন্ত রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ সমৃদ্ধ হতে শুরু করে। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে সে কাজ আর এগোয়নি।’
বেশ ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় হাওরে রাস্তা নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে যেন হাওরের মানুষের স্বপ্নও থেমে যায়।‘
‘এরপর ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে আবার তিন হাওর উপজেলায় রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে সাবমার্সেবল রোড দিয়ে হাওরের মানুষ জেলা থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে গ্রাম পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছেন।’
আভুরা সড়ক নিয়ে এমপি তৌফিক বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ সড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হবে। আর এতে হাওরের মানুষ সারা বছর ইচ্ছেমতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবেন। হাওরের জীব-বৈচিত্র্য দেখতে ছুটে আসবেন পর্যটকরাও। এভাবে পর্যটনেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে হাওর।’
বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে টানা দুইবারের এমপি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক বলেন, অষ্টগ্রাম-ইটনা ও মিঠামইনের অনেক গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। আগামী ২ বছরে বাকি গ্রামগুলোকে বিদ্যুতের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
হাওরে স্বাস্থ্য সেবার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, হাওরের তিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ চলছে। প্রতি ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। সেখান থেকে প্রায় ৬১ ধরনের ওষুধও দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে।
‘তিন উপজেলার দুস্থ প্রসূতিদের জন্য বিনামূল্যে সিজারের (অস্ত্রোপচার) ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা হাওরে চিকিৎসায় সরকারের বড় সাফল্য,’ যোগ করেন আশাবাদী তৌফিক।
‘হাওর এলাকা শিক্ষাতেও বেশ এগিয়েছে’ উল্লেখ করে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, বর্তমানে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে হাই স্কুল আছে। কোনো ইউনিয়নে ৩টি হাই স্কুল রয়েছে। আর বেশিরভাগ গ্রামে প্রাইমারি স্কুল আছে, যেখানে নেই সেখানে স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর