হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাকিস্তানের সংবিধানের ৬২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সৎ হতে হবে। আর এ জায়গাতেই ধরাটা খেয়েছেন নওয়াজ শরিফ। গতকাল শুক্রবার আদালতে অযোগ্য ঘোষণার পর তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। আদালত নওয়াজের কোনো দোষের কথা বলেননি। শুধু বলেছে, সংসদের সৎ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের যোগ্য নওয়াজ নন।
নওয়াজ শরিফ সামান্য কৌশলগত ভুল করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় মনোনয়ন পত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য দেননি। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জেবেল আলী ফ্রি জোন অথোরিটিতে ২০০৬ সালের ৭ আগস্ট থেকে ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন নওয়াজ। এজন্য প্রতিমাসে ২,১৯,৫২৮ টাকা পেতেন। এ তথ্য তিনি মনোনয়ন পত্রে দেননি। যেটি যৌথ তদন্ত দলের কাছে ধরা পড়ে। আর সেজন্যই নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয়েছে।
পানামা পেপারস মামলার রায়ে গতকাল শুক্রবার পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে ‘পদে থাকার অযোগ্য’ ঘোষণা করার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ করেন। এযাবৎকালে পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকার চালিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব কার ওপর বর্তাবে— তা এখনো স্পষ্ট নয়।
গত বছর (২০১৬) ফাঁস হওয়া পানামা পেপারসে নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম ও ছেলে হাসান-হোসাইনের নাম আসে। তারা তিনজন ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্তি বিভিন্ন অফশোর কোম্পানির নামে লন্ডনে সম্পত্তি কেনেন বলে ফাঁস হওয়া নথিতে জানা যায়। এর পরই বিরোধীরা নওয়াজ পরিবারের সম্পত্তির হিসাব ও দুর্নীতির তদন্ত করতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে দাবি জানান। গত জুনে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অপসারণ করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ মেলেনি। তাই নওয়াজ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে আদালত একটি যৌথ দল গঠনের নির্দেশ দেয়। সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা সদস্যদের নিয়ে গঠিত ছয় সদস্যের এ তদন্ত দলকে নওয়াজ পরিবারের তিন পুরুষের সম্পত্তির হিসাব নিতে বলা হয়, একই সঙ্গে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নওয়াজ শরিফ ও তার সন্তানরা শুরু থেকেই তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন।
তাদের দাবি, পরিবারের সব সম্পত্তিই বৈধ উপায়ে কেনা। যৌথ তদন্ত দলের জিজ্ঞাসাবাদেও প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার সন্তানরা একই কথা বলেন। প্রসঙ্গত, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) দলের নেতা নওয়াজ শরিফের বাবা ছিলেন দেশটির খ্যাতিমান শিল্পপতি। এর আগে ১৯৯০ ও ‘৯৯ সালে দুবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় কোনোবারই তিনি মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশান্তরিত হয়েছিলেন নওয়াজ। তখন বেশিরভাগ সময় তিনি থাকতেন সৌদি আরবে।
২০১৩ সালের নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় আসেন। এদিকে নওয়াজ পদত্যাগ করলেও তার দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) ক্ষমতায় থাকছে। এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে হবে দলটিকে। দলটির মুখপাত্র জানিয়েছেন, আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনি ও সাংবিধানিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।