ঢাকা ১১:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিলয়ের স্ত্রী থাকার খবর জানে না তার পরিবার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ অগাস্ট ২০১৫
  • ৩৬১ বার

আটমাস আগে পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের চলিশা গ্রামে নিজের বাড়িতে গিয়েছিলেন ব্লগার নিলয় নীল। ঈদের এক সপ্তাহ পর বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। তাকে ঢাকায় ফিরতে নিষেধ করেছিলেন তার মা। কিন্তু বিসিএসের প্রস্তুতির কথা বলে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। আর তার বোন জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় গোপা দাবি করেন,‘ নিলয় বিয়ে করেছে এই খবর আমরা জানিনা’।
জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় গোপা বলেন, ‘বলা হচ্ছে আমার ভাইয়ের স্ত্রী এবং তা শ্যালিকা আছে। কিন্তু এসব সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ আমরা জানি আমার ভাই এখন পর্যন্ত বিয়েই করেনি।’ সংবাদ মাধ্যমের খবরেকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন,‘ আমার ভাই বিয়ে করলে আমরা জানবনা?’
তবে রাজধানীর গোড়ানের বাসায় নিলয় স্ত্রী সহ থাকতেন। হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে যে মামলা হয়েছে তার বাদী আশামনি। তিনি নিলয়ের স্ত্রী হিসেবে মামলাটি করেছেন। আশামনির বাবার নাম শামসুদ্দিন। মামলার এজাহারে নিলয় নীলের নাম লেখা হয়েছে নীলাদ্রি চ্যাটার্জি। বাবার নাম তারাপদ চ্যাটিার্জি।

নিলয়ের গ্রামের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে । তার মা অপর্ণা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার ছেলে তো কোনো দিন কারো কোনো ক্ষতি করে নাই। আমার এমন নিরপরাধ ছেলেকে এভাবে হত্যা করল কারা?’ ছেলে হারানোর শোকে বিহ্বল মা বিলাপ করতে করতে একটু পরপরই মূর্ছা যাচ্ছিলেন। আর বলছিলেন,‘‘আমার এখন কী হবে? তোমরা আমাকে একটু বিষ এনে দাও। ওরে ঢাকায় ফিরে যেতে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম, বাড়িতে বসে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে।’
বাবা তারাপদ চট্টোপাধ্যায় শোকে যেন নির্বাক হয়ে গেছেন।

নিলয় চলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তেজদাসকাঠি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক এবং সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যামিক পাস করেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বাবা সাধারণ গৃহস্থ হলেও বাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই শিক্ষক-আইনসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। এলাকাবাসী জানান, নীলাদ্রি সবার কাছেই খুব ভদ্র ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল।
নিলয়ের বোন জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় গোপা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের এলাকায় কোনো শত্রু ছিল না। সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘ আট মাস পরে সে বাড়ি আসে। কী কারণে তাঁকে হত্যা করা হলো তা আমরা জানি না। আমরা চাই, সরকার এর সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করুক। না হলে তাঁর আত্মা শান্তি পাবে না।’

‘নিলয় নীল’ নামে ফেসবুক ও ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করা নিলয় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের একজন সংগঠক ছিলেন। গত ১৬ এপ্রিল পিরোজপুরে ‘পাল্টা আঘাত’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে একটি মানববন্ধন করেছিলেন ছাত্রনেতা ও বন্ধু দীপক শীলের সঙ্গে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে বাংলা নববর্ষে নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নিলয়ের স্ত্রী থাকার খবর জানে না তার পরিবার

আপডেট টাইম : ১২:৪৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ অগাস্ট ২০১৫

আটমাস আগে পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের চলিশা গ্রামে নিজের বাড়িতে গিয়েছিলেন ব্লগার নিলয় নীল। ঈদের এক সপ্তাহ পর বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। তাকে ঢাকায় ফিরতে নিষেধ করেছিলেন তার মা। কিন্তু বিসিএসের প্রস্তুতির কথা বলে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। আর তার বোন জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় গোপা দাবি করেন,‘ নিলয় বিয়ে করেছে এই খবর আমরা জানিনা’।
জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় গোপা বলেন, ‘বলা হচ্ছে আমার ভাইয়ের স্ত্রী এবং তা শ্যালিকা আছে। কিন্তু এসব সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ আমরা জানি আমার ভাই এখন পর্যন্ত বিয়েই করেনি।’ সংবাদ মাধ্যমের খবরেকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন,‘ আমার ভাই বিয়ে করলে আমরা জানবনা?’
তবে রাজধানীর গোড়ানের বাসায় নিলয় স্ত্রী সহ থাকতেন। হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে যে মামলা হয়েছে তার বাদী আশামনি। তিনি নিলয়ের স্ত্রী হিসেবে মামলাটি করেছেন। আশামনির বাবার নাম শামসুদ্দিন। মামলার এজাহারে নিলয় নীলের নাম লেখা হয়েছে নীলাদ্রি চ্যাটার্জি। বাবার নাম তারাপদ চ্যাটিার্জি।

নিলয়ের গ্রামের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে । তার মা অপর্ণা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার ছেলে তো কোনো দিন কারো কোনো ক্ষতি করে নাই। আমার এমন নিরপরাধ ছেলেকে এভাবে হত্যা করল কারা?’ ছেলে হারানোর শোকে বিহ্বল মা বিলাপ করতে করতে একটু পরপরই মূর্ছা যাচ্ছিলেন। আর বলছিলেন,‘‘আমার এখন কী হবে? তোমরা আমাকে একটু বিষ এনে দাও। ওরে ঢাকায় ফিরে যেতে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম, বাড়িতে বসে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে।’
বাবা তারাপদ চট্টোপাধ্যায় শোকে যেন নির্বাক হয়ে গেছেন।

নিলয় চলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তেজদাসকাঠি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক এবং সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যামিক পাস করেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বাবা সাধারণ গৃহস্থ হলেও বাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই শিক্ষক-আইনসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। এলাকাবাসী জানান, নীলাদ্রি সবার কাছেই খুব ভদ্র ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল।
নিলয়ের বোন জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় গোপা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের এলাকায় কোনো শত্রু ছিল না। সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘ আট মাস পরে সে বাড়ি আসে। কী কারণে তাঁকে হত্যা করা হলো তা আমরা জানি না। আমরা চাই, সরকার এর সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করুক। না হলে তাঁর আত্মা শান্তি পাবে না।’

‘নিলয় নীল’ নামে ফেসবুক ও ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করা নিলয় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের একজন সংগঠক ছিলেন। গত ১৬ এপ্রিল পিরোজপুরে ‘পাল্টা আঘাত’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে একটি মানববন্ধন করেছিলেন ছাত্রনেতা ও বন্ধু দীপক শীলের সঙ্গে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে বাংলা নববর্ষে নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে।