ঢাকা ০৮:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশ স্বাধীন করেছি কী কথা না বলার জন্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৭:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ অগাস্ট ২০১৫
  • ৪৮৫ বার

চলচ্চিত্রের এক জীবন্ত কিংবদন্তি কবরী। ষাটের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় এ অভিনেত্রীর জন্ম চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে। তবে তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রাম নগরীতে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ও আজীবন সম্মাননায় ভূষিত কবরীর আসল নাম মিনা পাল। পিতা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব কবরীর। এরপর থেকে ধীরে ধীরে টেলিভিশন এবং সিনেমা জগতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। ’৬৪ সালে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ ছবির নায়িকা হিসেবে অভিনয় জীবনের শুরু। এরপর থেকে প্রায় ১০০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। প্রথম ছবির সাফল্যের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কবরীকে। একের পর এক ছবিতে অসাধারণ অভিনয় উপহার দিয়েছেন। অর্জন করেন দারুণ জনপ্রিয়তা। দর্শকের ভালবাসায় পেয়েছেন ‘মিষ্টি মেয়ে’ খেতাব।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৯শে এপ্রিল পরিবারের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি। সেখান থেকে ভারত পাড়ি দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও চলচ্চিত্র জগতে মনোনিবেশ করেন কবরী। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এ বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাওনা ১ লাখ টাকা কবরী দান করছেন প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে। মানবজমিনকে দেয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে কবরী কথা বলেছেন, তার জীবনের নানা অধ্যায় নিয়ে। তিনি বলেন, অভিনয় করে আমি অনেক কিছুই পেয়েছি। মানুষের ভালবাসা তার মধ্যে অন্যতম। এর কোন তুলনা নেই। জীবনে চলার পথে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট আমাকে সব সময় পীড়া দিয়েছে। সব সময় চেষ্টা করেছি তাদের পাশে থাকার। এ টাকা হয়তো তাদের জন্য কম, তবুও তাদের সামান্য উপকারে এলে আমার অর্জন সার্থক হবে।
রাজনীতির কারণে কবরীর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৮ সালে। আওয়ামী লীগের টিকিটে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় স্বামী শফিউদ্দিন সারোয়ার ওরফে বাবু সারোয়ার কবরীকে তালাক দেন। এতে ৩০ বছরের সংসার জীবনের ইতি ঘটে। তারপরও পিছপা হননি তিনি। নির্বাচনে জয়ী হন কবরী। রুপালি পর্দার সাড়া জাগানো স্বপ্নের নায়িকাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাছে পেয়ে বেজায় খুশি হন ফতুল্লাবাসী। কবরীও মিশে যান সাধারণ মানুষের সঙ্গে। কিন্তু ৫ বছর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের শিকার হয়েছেন তিনি। সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হয়েছেন নিজ দলের লোকজন দ্বারা। হুমকি-ধামকি কোন কিছুই দমাতে পারেনি তাকে। তবে তার আক্ষেপ, অসহযোগিতা আর অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে তিনি তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারেননি। এ জন্য তিনি ব্যথিত। তার অতীত ও বর্তমান সংগ্রামের তুলনা করতে গিয়ে কবরী বলেন, দেশের জন্য লড়াই করতে পেরেছিলাম বলে আমি গর্ববোধ করি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কবরী তার আজীবন সম্মাননার পুরস্কারটি উৎসর্গ করেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সব মুক্তিযোদ্ধাকে।
ব্যক্তিগত জীবনের প্রসঙ্গ টেনে কবরী বলেন, প্রতিটা দিন তো আর একরকম যায় না। তবে সকালটা শুরু হয় পত্রিকা দেখে। তাতে খুঁজে দেখি কোন সুখবর বা দুঃখের খবর আছে কিনা? সেগুলো চেক করি। কাজ থাকলে কাজে চলে যাই। পেশাগত কাজের চেয়ে দেশের কাজকে বেশি গুরুত্ব দেই। আমার মন যখন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে তখন ইচ্ছা হয় সব তোলপাড় করে সব কথা বলে মনের জ্বালা নেভাই। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য থাকার ৫ বছর একটা রুটিন হয়ে গিয়েছিল আমার নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া। প্রচণ্ড যানজট অতিক্রম করে নিত্যদিনের আসা-যাওয়ায় কখনও ক্লান্ত হইনি। দলের লোকদের অসহযোগিতার কারণে হয়তো কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারিনি। কিন্তু আমি তো দেশের জন্য ভূমিকা রেখেছি। কিন্তু পরবর্তীতে কোন সুযোগ দেয়া হলো না। আসলে আমার মনে হয় বাংলাদেশে বেশি মূল্যায়ন হয় চাটুকারদের। সেখানে মেধার কোন দাম নেই। যে যত বেশি চাটুকারিতা করতে পারবে সে তত বেশি সুযোগ পাবে। এটাই মনে হয় রাজনীতিতে নিয়ম হয়ে গেছে। আমি যে ৫ বছর কাজ করলাম, ভাল না মন্দ, প্রধানমন্ত্রী কী আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন?
দেশী খাবার বরাবরই পছন্দ কবরীর। বলেন, মা যখন চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা বানাতেন, খেজুরের গুড় দিয়ে চুলার পাশে বসে খাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ সেটা কী পেস্টি আর পিজাতে পাওয়া যায়? বিদেশী খাবার তো ওয়ান টাইম। বড় মাছ পছন্দ। তবে সব সময় না। ঝাল অনেক পছন্দ। রান্না করতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু এখন করি না। সবাইকে নিয়ে আড্ডা খুব পছন্দ করি। অতীতকে মনে রাখি না। যেমন কারও সঙ্গে যদি কোন কারণে মান-অভিমান হয়, তাহলে সেটা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। জীবনটা কয়দিনের? আফ্রিকা আর চীন ছাড়া আর সব দেশই ভ্রমণ করেছি। পছন্দের পোশাক শাড়ি। তবে ইদানীং ওয়েস্টার্ন কাপড় পছন্দ করি। কারণ, একটা প্যান্ট আর শার্ট পরেই চলা যায়। আর শাড়ি পরে বড় বড় এয়ারপোর্টে হাঁটা যায় না। জীবনের শুরুটাই তো হয়েছে গাঢ় মেকআপ আর সাজসজ্জার মধ্য দিয়ে। তবে ব্যবহার করার চেয়ে দেখতে বেশি ভাল লাগে। কারা তৈরি করেছে, কোন ব্র্যান্ড ইত্যাদি।
কবরী বলেন, নির্বাচনের সময় আমার স্বামী আমাকে ডিভোর্স দিয়েছেন। আমি তো মরে যেতে পারতাম। কিন্তু তা করিনি। কারণ, এক্স ওয়াই জেড কেউ কিছু করলে কিছু যায় আসে না। কিন্তু কবরী করলে যায় আসে। তাই করিনি। তারা চেয়েছে ডিভোর্স দিলে আমি ঘরে ঢুকে যাবো। বসে বসে কান্না করবো। কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না। সুইসাইড করবো। কিন্তু আমি এর কিছুই করিনি। আল্লাহ আমার মনটাকে কঠিন করে দিয়েছেন। আমাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়ার জন্য, আমার স্বামীকে প্ররোচনা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের তার আত্মীয়স্বজনরা। সে একা এ কাজ করতে পারেন না। এটা করেছেন। আমি সোজা চলে গেছি নারায়ণগঞ্জে। মাঠে নেমে গেছি। মানুষের ভালবাসায় জয়ী হয়ে এসেছি।
একটা আত্মজীবনী লিখবেন কবরী। এখন নাটক ও ছবির স্ক্রিপ্ট লিখছেন। ধারাবাহিক নাটক বানাচ্ছেন। কবরী বলেন, নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে আমি দেশ থেকে সহযোগিতা না পাই। আমি যখন অনুদান চাই, তখন মন্ত্রী বলেন এটা আমার হাতে নেই। তাহলে কার হাতে আছে? আমি যখন ওই সেক্টরের দায়িত্বে ছিলাম তখন তো জানি কার হাতে আছে আর কার হাতে নেই। আমি কী টাকাটা নিজের কাজের জন্য নিচ্ছি? আমাকে আরও পরীক্ষা দিতে হবে? আমি ভাল ছবি বানাতে পারি? ৫০ বছরেও কী আমার পরীক্ষা শেষ হয়নি? আমার খুব কষ্ট লেগেছে। কিন্তু আমি তো আমার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। এখন কী আমাকে টেনে নামাতে পারবে? আমার মতো মানুষ ২৪ ঘণ্টা হাত-পা নাচিয়ে কাজ করতে চাই। আজকে আমি কষ্ট করে এখানে এসেছি। আমার যে কী ভাল লাগে। একটা প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াতাম, সেই মিনা পাল গ্রামের মেঠো প্রান্তে। আজ আমি কোথায় এসে পৌঁছেছি।
মানবজমিনকে দেয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে কবরী বলেন, আমার ছেলেরা যখন ভাল রেজাল্ট করে, আমি যখন সেমিনারে যাই, তখন খুব ভাল লাগে। আমি একজন প্রতিনিধি হয়ে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছি। জুনিয়র শিল্পীদের সম্পর্কে বলেন, আমি চাই তারা যেন আমার চেয়েও ভাল করে। নামকরা শিল্পী হতে পারে। সবাই যেন বলতে পারে কবরী যাকে এনেছেন সে কবরীর চেয়ে ভাল করছেন। সৃষ্টি আমাকে আনন্দ দেয়। ছোটবেলা থেকেই আমি সোশ্যাল ওয়ার্ক করি। আমার দ্বিতীয় বা তৃতীয় ছবির সময় লাহোরে একজন লোক মারা গেছে। অবজারভার পত্রিকার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। আমি তখন ৮০০ টাকা সাহায্য করেছিলাম। সেই থেকে আমার সোশ্যাল ওয়ার্ক শুরু।
কবরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তলে তলে করাপশন করবেন, এটা কোন চেতনা? আমাদের দেশটা সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেন উদ্ভাসিত হয়। শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করলে হবে না। আমার সেক্টরকে আপনি তালাবদ্ধ করে রাখছেন। গ্রামের স্কুলগুলো সম্পূর্ণ রাজনীতি দিয়ে চালিত করা হচ্ছে। এটা চেতনা হলো মুক্তিযুদ্ধের? এতে মুক্তিযুদ্ধকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এই কথা যদি বলি আমাকে মেরে ফেলবেন? মেরে ফেলেন, আমি চাই মেরে ফেলাই ভাল। এরকম ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে আমাদের মতো লোকদের ব্রাশফায়ারে মেরে ফেলা ভাল। যারা মুক্তিযুদ্ধকে ভাঙ্গিয়ে এবং বিক্রি করে খাচ্ছে, তারা কী করবেন? তারা আরও টাকা বানাবেন, মিথ্যা কথা বলবেন। আমাদের অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন কত টাকা আছে। কী সম্পদ বানিয়েছি। একটা স্বাধীন দেশে যদি আমি কথা বলতে না পারি তাহলে কিভাবে চলবো। বিএনপি জ্বালাইছে না? কম জ্বালায় নাই। যখন জুরিবোর্ড আমাদের ছবি সিলেক্ট করেছে, তখন কবরী আওয়ামী লীগ করে বলে আমাদের ছবি রিলিজ দেয়নি। টেলিভিশনে একটা কথা বলতে দেয়নি। ওরা কী রাজনীতি করে জানি না।
বাংলাদেশে যা উন্নয়ন হচ্ছে এগুলো কী উন্নয়ন? এগুলো উন্নয়নের একটা পার্ট। আমার ছেলেটা, মেয়েটা যদি দু’বেলা খেতে না পারে, নিশ্চিন্তে যদি স্কুলে যেতে না পারে, সুন্দর একটা কাপড় পরতে না পারে, নিজেকে নিয়ে সে ভাবতে না পারে, তাহলে সে কী দেবে দেশকে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আপনারা রাজনীতির বলয়ের মধ্যে বন্ধ করে রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। সর্বত্র এবং সব সেক্টরের মানুষের কাছে। তাহলে মানুষ বুঝবে কোনটা জঙ্গি আর কোনটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কিভাবে কম্পেয়ার করবে?
রাজনীতি করতে গিয়ে লোভের একটা আগ্রহ পয়দা হয়। আমি যদি গাড়ি কিনতে না পারি, বাড়ি করতে না পারি, ড্রয়িং রুম যদি সাজাতে না পারি। গান্ধীজী যে লেংটি পরেছেন, তিনি রাজনীতির কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। তিনি তো মরতে চাননি। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু তার স্বপ্ন তিনি বাস্তবায়ন করেছেন।
আমি যদি মরে যাই, আমি যে দুইটা কথা বলতে পেরেছি, কোন লেখনী যদি থাকে, কখনো যদি পুরনো কাগজ ঘাঁটতে ঘাঁটতে নতুন প্রজন্ম আমার সম্পর্কে জানতে পারে এ মানুষটি দেশ এবং দেশের মানুষের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছেন, এর চেয়ে বড় আর কী চেতনা হতে পারে। এটা তো টাকা দিয়ে কেনা যাবে না। আমরা কী কখনও এভাবে ভাবি? লক্ষ লক্ষ শহীদের কথা চিন্তা করতে হবে। যে মা নিজে না খেয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন, যে বাবা নিজের প্লেটের মাছ সন্তানদের পাতে তুলে দিয়েছেন, সেই সন্তানকে আর ফিরে পাবেন? সেই চিঠিগুলো পড়ে চোখের পানি রাখা যায় না। ভাত কাপড় দিতে না পারলে একটা মানুষের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেও তার কিছুটা স্বস্তি আসে। কিন্তু আমরা সেটা করছি!
কেউ যখন বলেন আপনি খেতাব নিলেন না কেন? তখন বলি, আমার দেশ আমার মা। মার জন্য আমার কর্তব্য ছিল করেছি। আমি কেন সার্টিফিকেট নেবো? আমি কেন ওটা ভাঙ্গিয়ে খাবো? আমি তো জানি আমি দেশের কাজ করেছি। আজ আমার মা নেই। আমি মাকে খুব মনে করি। আমার মাকে কতটুকু ভালবাসি। ১৩ বছর বয়সে আমি মাকে ফেলে চলে এসেছি। আমি পাইনি আমার সোসাইটি। পাইনি স্কুল, কলেজ। বিনিময়ে দিয়েছি। আজ আমি গর্ব করি, আমি এত মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি। এত মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। আমার লাইফটাইম এডুকেশন থেকে আমি এটা পেয়েছি।
রাজনীতিতে আদর্শ মহাত্মা গান্ধী ও ইন্দিরা গান্ধী। আর একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বহুগুণের মানুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধু আমার রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা। চলচ্চিতে আদর্শ সুচিত্রা সেন, উত্তম কুমার। কবরী বলেন, আমি চাই এমন পরিবেশ যেন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি, নিরাপদে ঘুমাতে পারি। রাজনীতি পছন্দ না হোক, আমাকে যাতে বলা হয় আপনি এসব কথা বলবেন না। কিন্তু আমাকে যেন মেরে ফেলা না হয়। আবার বলবো না সেটা বলিইবা কিভাবে? দেশ স্বাধীন করেছি কী কথা না বলার জন্য? তাহলে বোবারা যেমন চুপ করে থাকে সেভাবে থাকতে হবে? মুক্তিযুদ্ধের সময় যে মায়েরা তাদের সন্তানদের ফেরত পায়নি, আমরা যদি কথা বলি তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশ স্বাধীন করেছি কী কথা না বলার জন্য

আপডেট টাইম : ১০:৪৭:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ অগাস্ট ২০১৫

চলচ্চিত্রের এক জীবন্ত কিংবদন্তি কবরী। ষাটের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় এ অভিনেত্রীর জন্ম চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে। তবে তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রাম নগরীতে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ও আজীবন সম্মাননায় ভূষিত কবরীর আসল নাম মিনা পাল। পিতা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব কবরীর। এরপর থেকে ধীরে ধীরে টেলিভিশন এবং সিনেমা জগতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। ’৬৪ সালে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ ছবির নায়িকা হিসেবে অভিনয় জীবনের শুরু। এরপর থেকে প্রায় ১০০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। প্রথম ছবির সাফল্যের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কবরীকে। একের পর এক ছবিতে অসাধারণ অভিনয় উপহার দিয়েছেন। অর্জন করেন দারুণ জনপ্রিয়তা। দর্শকের ভালবাসায় পেয়েছেন ‘মিষ্টি মেয়ে’ খেতাব।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৯শে এপ্রিল পরিবারের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি। সেখান থেকে ভারত পাড়ি দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও চলচ্চিত্র জগতে মনোনিবেশ করেন কবরী। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এ বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাওনা ১ লাখ টাকা কবরী দান করছেন প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে। মানবজমিনকে দেয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে কবরী কথা বলেছেন, তার জীবনের নানা অধ্যায় নিয়ে। তিনি বলেন, অভিনয় করে আমি অনেক কিছুই পেয়েছি। মানুষের ভালবাসা তার মধ্যে অন্যতম। এর কোন তুলনা নেই। জীবনে চলার পথে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট আমাকে সব সময় পীড়া দিয়েছে। সব সময় চেষ্টা করেছি তাদের পাশে থাকার। এ টাকা হয়তো তাদের জন্য কম, তবুও তাদের সামান্য উপকারে এলে আমার অর্জন সার্থক হবে।
রাজনীতির কারণে কবরীর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৮ সালে। আওয়ামী লীগের টিকিটে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় স্বামী শফিউদ্দিন সারোয়ার ওরফে বাবু সারোয়ার কবরীকে তালাক দেন। এতে ৩০ বছরের সংসার জীবনের ইতি ঘটে। তারপরও পিছপা হননি তিনি। নির্বাচনে জয়ী হন কবরী। রুপালি পর্দার সাড়া জাগানো স্বপ্নের নায়িকাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাছে পেয়ে বেজায় খুশি হন ফতুল্লাবাসী। কবরীও মিশে যান সাধারণ মানুষের সঙ্গে। কিন্তু ৫ বছর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের শিকার হয়েছেন তিনি। সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হয়েছেন নিজ দলের লোকজন দ্বারা। হুমকি-ধামকি কোন কিছুই দমাতে পারেনি তাকে। তবে তার আক্ষেপ, অসহযোগিতা আর অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে তিনি তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারেননি। এ জন্য তিনি ব্যথিত। তার অতীত ও বর্তমান সংগ্রামের তুলনা করতে গিয়ে কবরী বলেন, দেশের জন্য লড়াই করতে পেরেছিলাম বলে আমি গর্ববোধ করি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কবরী তার আজীবন সম্মাননার পুরস্কারটি উৎসর্গ করেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সব মুক্তিযোদ্ধাকে।
ব্যক্তিগত জীবনের প্রসঙ্গ টেনে কবরী বলেন, প্রতিটা দিন তো আর একরকম যায় না। তবে সকালটা শুরু হয় পত্রিকা দেখে। তাতে খুঁজে দেখি কোন সুখবর বা দুঃখের খবর আছে কিনা? সেগুলো চেক করি। কাজ থাকলে কাজে চলে যাই। পেশাগত কাজের চেয়ে দেশের কাজকে বেশি গুরুত্ব দেই। আমার মন যখন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে তখন ইচ্ছা হয় সব তোলপাড় করে সব কথা বলে মনের জ্বালা নেভাই। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য থাকার ৫ বছর একটা রুটিন হয়ে গিয়েছিল আমার নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া। প্রচণ্ড যানজট অতিক্রম করে নিত্যদিনের আসা-যাওয়ায় কখনও ক্লান্ত হইনি। দলের লোকদের অসহযোগিতার কারণে হয়তো কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারিনি। কিন্তু আমি তো দেশের জন্য ভূমিকা রেখেছি। কিন্তু পরবর্তীতে কোন সুযোগ দেয়া হলো না। আসলে আমার মনে হয় বাংলাদেশে বেশি মূল্যায়ন হয় চাটুকারদের। সেখানে মেধার কোন দাম নেই। যে যত বেশি চাটুকারিতা করতে পারবে সে তত বেশি সুযোগ পাবে। এটাই মনে হয় রাজনীতিতে নিয়ম হয়ে গেছে। আমি যে ৫ বছর কাজ করলাম, ভাল না মন্দ, প্রধানমন্ত্রী কী আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন?
দেশী খাবার বরাবরই পছন্দ কবরীর। বলেন, মা যখন চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা বানাতেন, খেজুরের গুড় দিয়ে চুলার পাশে বসে খাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ সেটা কী পেস্টি আর পিজাতে পাওয়া যায়? বিদেশী খাবার তো ওয়ান টাইম। বড় মাছ পছন্দ। তবে সব সময় না। ঝাল অনেক পছন্দ। রান্না করতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু এখন করি না। সবাইকে নিয়ে আড্ডা খুব পছন্দ করি। অতীতকে মনে রাখি না। যেমন কারও সঙ্গে যদি কোন কারণে মান-অভিমান হয়, তাহলে সেটা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। জীবনটা কয়দিনের? আফ্রিকা আর চীন ছাড়া আর সব দেশই ভ্রমণ করেছি। পছন্দের পোশাক শাড়ি। তবে ইদানীং ওয়েস্টার্ন কাপড় পছন্দ করি। কারণ, একটা প্যান্ট আর শার্ট পরেই চলা যায়। আর শাড়ি পরে বড় বড় এয়ারপোর্টে হাঁটা যায় না। জীবনের শুরুটাই তো হয়েছে গাঢ় মেকআপ আর সাজসজ্জার মধ্য দিয়ে। তবে ব্যবহার করার চেয়ে দেখতে বেশি ভাল লাগে। কারা তৈরি করেছে, কোন ব্র্যান্ড ইত্যাদি।
কবরী বলেন, নির্বাচনের সময় আমার স্বামী আমাকে ডিভোর্স দিয়েছেন। আমি তো মরে যেতে পারতাম। কিন্তু তা করিনি। কারণ, এক্স ওয়াই জেড কেউ কিছু করলে কিছু যায় আসে না। কিন্তু কবরী করলে যায় আসে। তাই করিনি। তারা চেয়েছে ডিভোর্স দিলে আমি ঘরে ঢুকে যাবো। বসে বসে কান্না করবো। কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না। সুইসাইড করবো। কিন্তু আমি এর কিছুই করিনি। আল্লাহ আমার মনটাকে কঠিন করে দিয়েছেন। আমাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়ার জন্য, আমার স্বামীকে প্ররোচনা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের তার আত্মীয়স্বজনরা। সে একা এ কাজ করতে পারেন না। এটা করেছেন। আমি সোজা চলে গেছি নারায়ণগঞ্জে। মাঠে নেমে গেছি। মানুষের ভালবাসায় জয়ী হয়ে এসেছি।
একটা আত্মজীবনী লিখবেন কবরী। এখন নাটক ও ছবির স্ক্রিপ্ট লিখছেন। ধারাবাহিক নাটক বানাচ্ছেন। কবরী বলেন, নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে আমি দেশ থেকে সহযোগিতা না পাই। আমি যখন অনুদান চাই, তখন মন্ত্রী বলেন এটা আমার হাতে নেই। তাহলে কার হাতে আছে? আমি যখন ওই সেক্টরের দায়িত্বে ছিলাম তখন তো জানি কার হাতে আছে আর কার হাতে নেই। আমি কী টাকাটা নিজের কাজের জন্য নিচ্ছি? আমাকে আরও পরীক্ষা দিতে হবে? আমি ভাল ছবি বানাতে পারি? ৫০ বছরেও কী আমার পরীক্ষা শেষ হয়নি? আমার খুব কষ্ট লেগেছে। কিন্তু আমি তো আমার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। এখন কী আমাকে টেনে নামাতে পারবে? আমার মতো মানুষ ২৪ ঘণ্টা হাত-পা নাচিয়ে কাজ করতে চাই। আজকে আমি কষ্ট করে এখানে এসেছি। আমার যে কী ভাল লাগে। একটা প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াতাম, সেই মিনা পাল গ্রামের মেঠো প্রান্তে। আজ আমি কোথায় এসে পৌঁছেছি।
মানবজমিনকে দেয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে কবরী বলেন, আমার ছেলেরা যখন ভাল রেজাল্ট করে, আমি যখন সেমিনারে যাই, তখন খুব ভাল লাগে। আমি একজন প্রতিনিধি হয়ে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছি। জুনিয়র শিল্পীদের সম্পর্কে বলেন, আমি চাই তারা যেন আমার চেয়েও ভাল করে। নামকরা শিল্পী হতে পারে। সবাই যেন বলতে পারে কবরী যাকে এনেছেন সে কবরীর চেয়ে ভাল করছেন। সৃষ্টি আমাকে আনন্দ দেয়। ছোটবেলা থেকেই আমি সোশ্যাল ওয়ার্ক করি। আমার দ্বিতীয় বা তৃতীয় ছবির সময় লাহোরে একজন লোক মারা গেছে। অবজারভার পত্রিকার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। আমি তখন ৮০০ টাকা সাহায্য করেছিলাম। সেই থেকে আমার সোশ্যাল ওয়ার্ক শুরু।
কবরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তলে তলে করাপশন করবেন, এটা কোন চেতনা? আমাদের দেশটা সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেন উদ্ভাসিত হয়। শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করলে হবে না। আমার সেক্টরকে আপনি তালাবদ্ধ করে রাখছেন। গ্রামের স্কুলগুলো সম্পূর্ণ রাজনীতি দিয়ে চালিত করা হচ্ছে। এটা চেতনা হলো মুক্তিযুদ্ধের? এতে মুক্তিযুদ্ধকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এই কথা যদি বলি আমাকে মেরে ফেলবেন? মেরে ফেলেন, আমি চাই মেরে ফেলাই ভাল। এরকম ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে আমাদের মতো লোকদের ব্রাশফায়ারে মেরে ফেলা ভাল। যারা মুক্তিযুদ্ধকে ভাঙ্গিয়ে এবং বিক্রি করে খাচ্ছে, তারা কী করবেন? তারা আরও টাকা বানাবেন, মিথ্যা কথা বলবেন। আমাদের অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন কত টাকা আছে। কী সম্পদ বানিয়েছি। একটা স্বাধীন দেশে যদি আমি কথা বলতে না পারি তাহলে কিভাবে চলবো। বিএনপি জ্বালাইছে না? কম জ্বালায় নাই। যখন জুরিবোর্ড আমাদের ছবি সিলেক্ট করেছে, তখন কবরী আওয়ামী লীগ করে বলে আমাদের ছবি রিলিজ দেয়নি। টেলিভিশনে একটা কথা বলতে দেয়নি। ওরা কী রাজনীতি করে জানি না।
বাংলাদেশে যা উন্নয়ন হচ্ছে এগুলো কী উন্নয়ন? এগুলো উন্নয়নের একটা পার্ট। আমার ছেলেটা, মেয়েটা যদি দু’বেলা খেতে না পারে, নিশ্চিন্তে যদি স্কুলে যেতে না পারে, সুন্দর একটা কাপড় পরতে না পারে, নিজেকে নিয়ে সে ভাবতে না পারে, তাহলে সে কী দেবে দেশকে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আপনারা রাজনীতির বলয়ের মধ্যে বন্ধ করে রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। সর্বত্র এবং সব সেক্টরের মানুষের কাছে। তাহলে মানুষ বুঝবে কোনটা জঙ্গি আর কোনটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কিভাবে কম্পেয়ার করবে?
রাজনীতি করতে গিয়ে লোভের একটা আগ্রহ পয়দা হয়। আমি যদি গাড়ি কিনতে না পারি, বাড়ি করতে না পারি, ড্রয়িং রুম যদি সাজাতে না পারি। গান্ধীজী যে লেংটি পরেছেন, তিনি রাজনীতির কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। তিনি তো মরতে চাননি। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু তার স্বপ্ন তিনি বাস্তবায়ন করেছেন।
আমি যদি মরে যাই, আমি যে দুইটা কথা বলতে পেরেছি, কোন লেখনী যদি থাকে, কখনো যদি পুরনো কাগজ ঘাঁটতে ঘাঁটতে নতুন প্রজন্ম আমার সম্পর্কে জানতে পারে এ মানুষটি দেশ এবং দেশের মানুষের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছেন, এর চেয়ে বড় আর কী চেতনা হতে পারে। এটা তো টাকা দিয়ে কেনা যাবে না। আমরা কী কখনও এভাবে ভাবি? লক্ষ লক্ষ শহীদের কথা চিন্তা করতে হবে। যে মা নিজে না খেয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন, যে বাবা নিজের প্লেটের মাছ সন্তানদের পাতে তুলে দিয়েছেন, সেই সন্তানকে আর ফিরে পাবেন? সেই চিঠিগুলো পড়ে চোখের পানি রাখা যায় না। ভাত কাপড় দিতে না পারলে একটা মানুষের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেও তার কিছুটা স্বস্তি আসে। কিন্তু আমরা সেটা করছি!
কেউ যখন বলেন আপনি খেতাব নিলেন না কেন? তখন বলি, আমার দেশ আমার মা। মার জন্য আমার কর্তব্য ছিল করেছি। আমি কেন সার্টিফিকেট নেবো? আমি কেন ওটা ভাঙ্গিয়ে খাবো? আমি তো জানি আমি দেশের কাজ করেছি। আজ আমার মা নেই। আমি মাকে খুব মনে করি। আমার মাকে কতটুকু ভালবাসি। ১৩ বছর বয়সে আমি মাকে ফেলে চলে এসেছি। আমি পাইনি আমার সোসাইটি। পাইনি স্কুল, কলেজ। বিনিময়ে দিয়েছি। আজ আমি গর্ব করি, আমি এত মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি। এত মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। আমার লাইফটাইম এডুকেশন থেকে আমি এটা পেয়েছি।
রাজনীতিতে আদর্শ মহাত্মা গান্ধী ও ইন্দিরা গান্ধী। আর একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বহুগুণের মানুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধু আমার রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা। চলচ্চিতে আদর্শ সুচিত্রা সেন, উত্তম কুমার। কবরী বলেন, আমি চাই এমন পরিবেশ যেন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি, নিরাপদে ঘুমাতে পারি। রাজনীতি পছন্দ না হোক, আমাকে যাতে বলা হয় আপনি এসব কথা বলবেন না। কিন্তু আমাকে যেন মেরে ফেলা না হয়। আবার বলবো না সেটা বলিইবা কিভাবে? দেশ স্বাধীন করেছি কী কথা না বলার জন্য? তাহলে বোবারা যেমন চুপ করে থাকে সেভাবে থাকতে হবে? মুক্তিযুদ্ধের সময় যে মায়েরা তাদের সন্তানদের ফেরত পায়নি, আমরা যদি কথা বলি তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত