ঢাকা ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাবি ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের মিল যেখানে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৯:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুলাই ২০১৭
  • ২৯৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ছাত্র সংগঠন যথযাক্রমে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির বর্তমান হাল একই ধরনের। দুটি কমিটিরই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু ঘোষণা হচ্ছে না নতুন কমিটি। এ নিয়ে দুই সংগঠনে নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর এক মাস আগে। ১২ মাসের জন্য দেয়া কমিটি দায়িত্ব পালন করছে ২৫ মাস। নতুন কমিটি কবে হবে সে ধারণা নেই কারও মধ্যে। অন্যদিকে ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আট মাস আগে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটি না দেয়ায় বিক্ষোভও করেছেন নেতা-কর্মীরা।

ছাত্রলীগের অবস্থা

২০১৫ সালের ১৮ জুন আবিদ আল হাসানকে সভাপতি ও মোতাহার হোসেন প্রিন্সকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগে এক বছরের জন্য কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই কমিটির কার্যকারিতা লোপ পাওয়ার কথা ২০১৬ সালের ১৭ জুন। এই সময়ের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদনক্রমে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে নানা অজুহাতে বরাবরই এ বিধানের ব্যত্যয় ঘটে চলেছে।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০(খ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর। উপরিউক্ত সময়ের মধ্যে জেলা শাখার নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদনক্রমে ৯০ দিন সময় বৃদ্ধি করা যাবে। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হলে জেলা কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি বাতিল হবে ও কেন্দ্রীয় সংসদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

গঠনতন্ত্র লংঘন অন্য এক জায়গাতেও হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ১২১ সদস্যের হওয়ার কথা। কিন্তু কমিটি করা হয়েছে ২০১ সদস্যবিশিষ্ট। এর আগে গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে ২৫১ সদস্যের বদলে ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ গঠন করা হয়।

এই কমিটির আগের কমিটিও গঠতন্ত্র লংঘন করে দায়িত্ব পালন করেছে তিন বছর।

নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করা যায়নি কেন- জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের মোবাইল ফোনে একাধিকার যোগাযোগ করা হলেও তারা কল ধরেননি।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ হাওর বার্তাকে বলেন, ‘আমরা অতি শীঘ্র বিশ্ববিদ্যালযের কমিটি দেবো। আমরা এখন সম্মেলনের মাধ্যমে সাড়া বাংলাদেশে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দিচ্ছি। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি খুব তাড়াতাড়ি দিতে পারব।’

ছাত্রদলের অবস্থান

২০১৫ সালের অক্টোবরে আল মেহেদী তালুকদারকে সভাপতি ও আবুল বাসার সিদ্দিকীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি গঠিত হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি দেয়া হয়নি এখনও। এমনকি নির্ধারিত এক বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও করতে পারেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। সম্প্রতি কমিটি দেয়ার দাবিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও করেছে সংগঠনটির নেতারা।

বর্তমান সরকারের আমলে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রদলের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ছাত্রদলের দুই পক্ষ এবং ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে তৎকালীন সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ কয়েকজন আহত হন। এর পর থেকে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এখনো ক্যাম্পাসে প্রবেশের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি সংগঠনটি।

২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মহিদুল হাসান হিরুকে সভাপতি ও মাসুদ খান পারভেজকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাবি ছাত্রদলের ‘সুপারফাইভ কমিটি’ গঠন করেন খালেদা জিয়া। দায়িত্ব পেয়ে এ কমিটি ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়া দূরের কথা, ঢাবি কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি, হল কমিটিও দিতে পারেনি। হিরু-মাসুদ কমিটি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিলে ও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হলে তাদের ওপর নাখোশ হন খালেদা জিয়া।

এ বছর নতুন কমিটি গঠনের আট মাস পরও ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি ছাত্রদল।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী বলেন, ‘ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সংগঠকরা সবাই ঢাবির শিক্ষার্থী, কেউই বহিরাগত নন।’ আট মাস ধরে মেয়াদউত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে চলার বিষয়ে জানতে চাইলে অবশ্য মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ঢাবি ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের মিল যেখানে

আপডেট টাইম : ১২:৫৯:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ছাত্র সংগঠন যথযাক্রমে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির বর্তমান হাল একই ধরনের। দুটি কমিটিরই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু ঘোষণা হচ্ছে না নতুন কমিটি। এ নিয়ে দুই সংগঠনে নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর এক মাস আগে। ১২ মাসের জন্য দেয়া কমিটি দায়িত্ব পালন করছে ২৫ মাস। নতুন কমিটি কবে হবে সে ধারণা নেই কারও মধ্যে। অন্যদিকে ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আট মাস আগে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটি না দেয়ায় বিক্ষোভও করেছেন নেতা-কর্মীরা।

ছাত্রলীগের অবস্থা

২০১৫ সালের ১৮ জুন আবিদ আল হাসানকে সভাপতি ও মোতাহার হোসেন প্রিন্সকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগে এক বছরের জন্য কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই কমিটির কার্যকারিতা লোপ পাওয়ার কথা ২০১৬ সালের ১৭ জুন। এই সময়ের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদনক্রমে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে নানা অজুহাতে বরাবরই এ বিধানের ব্যত্যয় ঘটে চলেছে।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০(খ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর। উপরিউক্ত সময়ের মধ্যে জেলা শাখার নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদনক্রমে ৯০ দিন সময় বৃদ্ধি করা যাবে। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হলে জেলা কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি বাতিল হবে ও কেন্দ্রীয় সংসদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

গঠনতন্ত্র লংঘন অন্য এক জায়গাতেও হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ১২১ সদস্যের হওয়ার কথা। কিন্তু কমিটি করা হয়েছে ২০১ সদস্যবিশিষ্ট। এর আগে গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে ২৫১ সদস্যের বদলে ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ গঠন করা হয়।

এই কমিটির আগের কমিটিও গঠতন্ত্র লংঘন করে দায়িত্ব পালন করেছে তিন বছর।

নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করা যায়নি কেন- জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের মোবাইল ফোনে একাধিকার যোগাযোগ করা হলেও তারা কল ধরেননি।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ হাওর বার্তাকে বলেন, ‘আমরা অতি শীঘ্র বিশ্ববিদ্যালযের কমিটি দেবো। আমরা এখন সম্মেলনের মাধ্যমে সাড়া বাংলাদেশে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দিচ্ছি। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি খুব তাড়াতাড়ি দিতে পারব।’

ছাত্রদলের অবস্থান

২০১৫ সালের অক্টোবরে আল মেহেদী তালুকদারকে সভাপতি ও আবুল বাসার সিদ্দিকীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি গঠিত হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি দেয়া হয়নি এখনও। এমনকি নির্ধারিত এক বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও করতে পারেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। সম্প্রতি কমিটি দেয়ার দাবিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও করেছে সংগঠনটির নেতারা।

বর্তমান সরকারের আমলে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রদলের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ছাত্রদলের দুই পক্ষ এবং ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে তৎকালীন সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ কয়েকজন আহত হন। এর পর থেকে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এখনো ক্যাম্পাসে প্রবেশের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি সংগঠনটি।

২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মহিদুল হাসান হিরুকে সভাপতি ও মাসুদ খান পারভেজকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাবি ছাত্রদলের ‘সুপারফাইভ কমিটি’ গঠন করেন খালেদা জিয়া। দায়িত্ব পেয়ে এ কমিটি ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়া দূরের কথা, ঢাবি কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি, হল কমিটিও দিতে পারেনি। হিরু-মাসুদ কমিটি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিলে ও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হলে তাদের ওপর নাখোশ হন খালেদা জিয়া।

এ বছর নতুন কমিটি গঠনের আট মাস পরও ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি ছাত্রদল।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী বলেন, ‘ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সংগঠকরা সবাই ঢাবির শিক্ষার্থী, কেউই বহিরাগত নন।’ আট মাস ধরে মেয়াদউত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে চলার বিষয়ে জানতে চাইলে অবশ্য মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।