ঢাকা ১২:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মদিনা থেকে হজ পালন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৩:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০১৭
  • ৫২৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। পথিমধ্যে মদিনাবাসীর মিকাত জুল হুলায়ফা অতিক্রম করার সময় গাড়িতে অবস্থান করেই ইহরাম (হজের নিয়ত) বেঁধে নিলাম সবাই। মধ্যরাতে মক্কায় পৌঁছলাম। কাবার প্রান্তর লোকে লোকারণ্য। ভিড়ের কারণে তাওয়াফ করতে সময় লাগলো প্রায় ৩ ঘণ্টা। এত দীর্ঘসময় হাঁটাহাঁটি করায় পায়ে ব্যথা ও শরীর ক্লান্ত হয়ে গেল। তাওয়াফ শেষে ফজরের নামাজ পড়ে বাসের নিজ নিজ আসনে বসলাম। বাস যাত্রা শুরু করল। চলল মিনার পথে। দুপুরের আগেই পৌঁছলাম গন্তব্যে।

মিনায় ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সুন্নত। গন্তব্যে পৌঁছার পর আস্তে আস্তে নেমে পড়লাম বাস থেকে। চললাম তাঁবুর দিকে। কী আলিশান অবস্থা! লাল গালিচায় আবৃত তাঁবুর ভেতরের রাস্তাগুলো। উভয় পাশে প্লাস্টিকের ফুল শোভা পাচ্ছে। কয়েক হাত পরপর পানীয় ভর্তি ফ্রিজ আর চা ও কফি সাজানো রয়েছে। যে যার মতো সেল্ফ সার্ভিসে বিনামূল্যে পান করছেন। তাঁবুর ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম বিছানাগুলো সাজানো রয়েছে। যেন মেহমানদের অপেক্ষায়।
সবাই ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিল। ক্লান্ত-শ্রান্ত সবাই একেকটি বিছানায় ঠাঁই নিল। বিশ্রাম নিতে শুরু করল। জোহরের আজানের পর প্রধান দায়িত্বশীল আমাদের শ্রদ্ধাভাজন ওস্তাদ শাইখ আবু আলী সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলেন। নামাজ শেষে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করলেন। এভাবেই কাটল ৮ ও ৯ জিলহজ।
আরাফার দিন। ফজরের নামাজ শেষে জিকির-আজকার ও কোরআন তেলাওয়াত শেষে নাস্তা সেরে ৯ জিলহজ অর্থাৎ আরাফার দিনের প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে ওস্তাদ আবু আলী দিকনির্দেশনা প্রদান করলেন। দিকনির্দেশনার এক পর্যায়ে বললেন, এদিন বছরে মাত্র একবার আসে। তোমাদের জীবনে এই প্রথম এসেছে এ দিন। আজ তোমরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করবে। যেখানে রাসুল (সা.) হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
লক্ষাধিক সাহাবায়ে কেরাম সেখানে অবস্থান করেছিলেন। কোনোভাবেই অবহেলায় দিনটি কাটানো যাবে না। এটাই তোমাদের জন্য মহান সুযোগ। সুযোগকে কাজে                 লাগাতে হবে।
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে। আরাফার মূল সীমানার আগেই গাড়ি থামল। হেঁটে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর দুপুরের দিকে তাঁবুতে পৌঁছলাম। জোহরের আজান শেষে খুতবা শুরু হলো। খুতবা শেষে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করে সবাই দুপুরের খাবার সেরে নিল। আরাফার দিন জোহর ও আসরের নামাজ জোহরের ওয়াক্তে এক আজান ও দুই একামতে একসঙ্গে আদায় করতে হয়।
ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমেই কাটল জীবনের প্রথম হজের পবিত্র আরাফার দিন। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। সূর্যাস্তের পর আস্তে আস্তে আরাফার মাঠ থেকে প্রত্যাবর্তনের পালা। দায়িত্বশীলরা সবাইকে জড়ো করে প্রয়োজনীয় বিছানাপত্র প্রদান করে দলের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির দিকে ছুটে যেতে বললেন। গাড়িতে সবাই উঠে বসল। সবার মুখে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’Ñ গাড়ি চলছে মুজদালিফার দিকে।
রাতের প্রথম প্রহরেই গাড়ি পৌঁছল মুজদালিফায়। এসেই সব ছাত্রের সহযোগিতায় ওস্তাদ নিজেই খোলা আকাশের নিচে তাঁবু গাড়লেন। পরে এক আজান ও দুই একামতে মাগরিব ও এশা একসঙ্গে জামাতে আদায় করলাম। আরাফার মাঠ থেকে প্রস্থানের সময় আমাদের প্রত্যেককে রাতের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছিল। নামাজ শেষে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে আকাশের তারকারাজি আর বিশাল আকাশকে কত না উদার মনে হলো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই দৃশ্য অবলোকন করছেন। সবাই আল্লাহর জন্য দুনিয়ার সব ঝামেলামুক্ত হয়ে সাদা দুই টুকরো কাপড় পরিধান করে বিছানা ছাড়া শুধু একটি পাটির ওপর শুয়ে আছে। যে মানুষটি ফাইভ স্টার হোটেল আর কোমল বিছানায় গা বিছিয়ে দিত, সেও এখানে শুয়ে আছে খোলা আকাশের নিচে।
১০ জিলহজ। ফজরের নামাজ মুজদালিফায় জামাতে আদায় করলাম। রাতে জামারায় পাথর নিক্ষেপের জন্য কংকর কুড়ানোর অনুভূতি ছিল অন্যরকম। সূর্যোদয় হলে গাড়ি ছেড়ে দিল। আস্তে আস্তে গাড়ি জামারার অদূরবর্তী স্থানে এসে থামল। এরপরও প্রায় ঘণ্টাখানেক হাঁটতে হলো লাখ লাখ মানুষের স্রোতে। সেই স্রোতে ভেসে গিয়ে জামারা কুবরায় সাতটি পাথর নিক্ষেপ করলাম। পাথর নিক্ষেপের শুরুতেই তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিলাম। পরে শুরু হলো তাকবির ধ্বনি। তাকবির ধ্বনি দিতে দিতে পৌঁছলাম আমাদের নির্ধারিত তাঁবুর মধ্যে।
এ পর্যায়ে কোরবানির জন্য টাকা জমা দিলাম ব্যাংকের বুথগুলোতে। অপেক্ষায় থাকলাম আমার কোরবানির মেসেজ আসে কিনা। কোরবানি হয়ে গেছে এ সংবাদ পাওয়ার পর আমরা মাথা ন্যাড়া করলাম।
ক্লান্ত সবাই। কেউ বলছে বিশ্রাম নিতে আবার কেউবা বিশ্রাম ছাড়া চুল কেটে ফ্রেশ হতে চাচ্ছে। এর মধ্যে চোখে পড়ল এক বিশাল লাইন। লাইন আর কোনো কিছুর নয়। সবাই মাথা ন্যাড়া করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। হজের পর মাথা ন্যাড়া অথবা চুল ছোট করতে হয়। লাইনের যে প্রান্তে যিনি মাথা ন্যাড়া করে দিচ্ছেন তিনি আর কেউ নন, আমাদের ওস্তাদ শাইখ আবু আলী। কতইনা অমায়িক। নিজ হাতে শত শত ছাত্রের মাথা ন্যাড়া করে দিচ্ছেন। লাইন লম্বা দেখে শঙ্কিত হলাম। ছাত্রদের মধ্যে যারা চুল ন্যাড়া করতে জানত, তারাও শুরু করল ছাত্রদের মাথা ন্যাড়া করে দিতে। আমাদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাত্র প্রিয় আযীয ফুরকান ভাই আমার মাথা ন্যাড়া করে দিলেন। গোসল করে সাধারণ কাপড় পরে সুগন্ধি মেখে ঈদের দিনটা উপভোগ করলাম। বিকেলবেলা সবাইকে নিয়ে যাওয়া হলো পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করতে। এটাই হচ্ছে হজের তাওয়াফ। আগে যারা সাঈ করে নিয়েছিল তাদের আর সাঈ করতে হয়নি। তবে যারা সাঈ করেনি তারা তাওয়াফ শেষে সাঈ করে নিল।
মিনায় পৌঁছতে রাত ৯টা বেজে গেল। মিনায় পৌঁছে আমাদের প্রধান দায়িত্বশীল সবাইকে জড়ো করে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করলেন। তেলাওয়াত, নাশিদ, কবিতা আবৃত্তি, বক্তব্য আর বিভিন্ন দেশের ছাত্রদের কাছ থেকে নিজ নিজ দেশের ঈদের আনন্দ শেয়ার করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত করে তোলা হলো। হজের ক্লান্তিভাবের ভেতরই সবার মধ্যে ফিরে এলো সজীবতা। পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে রাতের প্রোগ্রাম শেষ হলো।
১১ জিলহজ মিনায় অবস্থান করলাম। ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে জামারায় কংকর নিক্ষেপ শেষে মক্কায় এসে পৌঁছলাম। বিদায়ী তাওয়াফ শেষে ছুটলাম প্রাণের শহর, যেখানে রয়েছে জান্নাত, যেখানে প্রশান্তি, নবীর শহর, প্রিয়ভূমি মদিনা মোনাওয়ারা পানে। মুখ জপতে শুরু করল ‘আসসালাতু আস-সালাম আলাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মদিনা থেকে হজ পালন

আপডেট টাইম : ১২:৪৩:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। পথিমধ্যে মদিনাবাসীর মিকাত জুল হুলায়ফা অতিক্রম করার সময় গাড়িতে অবস্থান করেই ইহরাম (হজের নিয়ত) বেঁধে নিলাম সবাই। মধ্যরাতে মক্কায় পৌঁছলাম। কাবার প্রান্তর লোকে লোকারণ্য। ভিড়ের কারণে তাওয়াফ করতে সময় লাগলো প্রায় ৩ ঘণ্টা। এত দীর্ঘসময় হাঁটাহাঁটি করায় পায়ে ব্যথা ও শরীর ক্লান্ত হয়ে গেল। তাওয়াফ শেষে ফজরের নামাজ পড়ে বাসের নিজ নিজ আসনে বসলাম। বাস যাত্রা শুরু করল। চলল মিনার পথে। দুপুরের আগেই পৌঁছলাম গন্তব্যে।

মিনায় ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সুন্নত। গন্তব্যে পৌঁছার পর আস্তে আস্তে নেমে পড়লাম বাস থেকে। চললাম তাঁবুর দিকে। কী আলিশান অবস্থা! লাল গালিচায় আবৃত তাঁবুর ভেতরের রাস্তাগুলো। উভয় পাশে প্লাস্টিকের ফুল শোভা পাচ্ছে। কয়েক হাত পরপর পানীয় ভর্তি ফ্রিজ আর চা ও কফি সাজানো রয়েছে। যে যার মতো সেল্ফ সার্ভিসে বিনামূল্যে পান করছেন। তাঁবুর ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম বিছানাগুলো সাজানো রয়েছে। যেন মেহমানদের অপেক্ষায়।
সবাই ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিল। ক্লান্ত-শ্রান্ত সবাই একেকটি বিছানায় ঠাঁই নিল। বিশ্রাম নিতে শুরু করল। জোহরের আজানের পর প্রধান দায়িত্বশীল আমাদের শ্রদ্ধাভাজন ওস্তাদ শাইখ আবু আলী সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলেন। নামাজ শেষে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করলেন। এভাবেই কাটল ৮ ও ৯ জিলহজ।
আরাফার দিন। ফজরের নামাজ শেষে জিকির-আজকার ও কোরআন তেলাওয়াত শেষে নাস্তা সেরে ৯ জিলহজ অর্থাৎ আরাফার দিনের প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে ওস্তাদ আবু আলী দিকনির্দেশনা প্রদান করলেন। দিকনির্দেশনার এক পর্যায়ে বললেন, এদিন বছরে মাত্র একবার আসে। তোমাদের জীবনে এই প্রথম এসেছে এ দিন। আজ তোমরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করবে। যেখানে রাসুল (সা.) হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
লক্ষাধিক সাহাবায়ে কেরাম সেখানে অবস্থান করেছিলেন। কোনোভাবেই অবহেলায় দিনটি কাটানো যাবে না। এটাই তোমাদের জন্য মহান সুযোগ। সুযোগকে কাজে                 লাগাতে হবে।
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে। আরাফার মূল সীমানার আগেই গাড়ি থামল। হেঁটে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর দুপুরের দিকে তাঁবুতে পৌঁছলাম। জোহরের আজান শেষে খুতবা শুরু হলো। খুতবা শেষে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করে সবাই দুপুরের খাবার সেরে নিল। আরাফার দিন জোহর ও আসরের নামাজ জোহরের ওয়াক্তে এক আজান ও দুই একামতে একসঙ্গে আদায় করতে হয়।
ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমেই কাটল জীবনের প্রথম হজের পবিত্র আরাফার দিন। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। সূর্যাস্তের পর আস্তে আস্তে আরাফার মাঠ থেকে প্রত্যাবর্তনের পালা। দায়িত্বশীলরা সবাইকে জড়ো করে প্রয়োজনীয় বিছানাপত্র প্রদান করে দলের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির দিকে ছুটে যেতে বললেন। গাড়িতে সবাই উঠে বসল। সবার মুখে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’Ñ গাড়ি চলছে মুজদালিফার দিকে।
রাতের প্রথম প্রহরেই গাড়ি পৌঁছল মুজদালিফায়। এসেই সব ছাত্রের সহযোগিতায় ওস্তাদ নিজেই খোলা আকাশের নিচে তাঁবু গাড়লেন। পরে এক আজান ও দুই একামতে মাগরিব ও এশা একসঙ্গে জামাতে আদায় করলাম। আরাফার মাঠ থেকে প্রস্থানের সময় আমাদের প্রত্যেককে রাতের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছিল। নামাজ শেষে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে আকাশের তারকারাজি আর বিশাল আকাশকে কত না উদার মনে হলো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই দৃশ্য অবলোকন করছেন। সবাই আল্লাহর জন্য দুনিয়ার সব ঝামেলামুক্ত হয়ে সাদা দুই টুকরো কাপড় পরিধান করে বিছানা ছাড়া শুধু একটি পাটির ওপর শুয়ে আছে। যে মানুষটি ফাইভ স্টার হোটেল আর কোমল বিছানায় গা বিছিয়ে দিত, সেও এখানে শুয়ে আছে খোলা আকাশের নিচে।
১০ জিলহজ। ফজরের নামাজ মুজদালিফায় জামাতে আদায় করলাম। রাতে জামারায় পাথর নিক্ষেপের জন্য কংকর কুড়ানোর অনুভূতি ছিল অন্যরকম। সূর্যোদয় হলে গাড়ি ছেড়ে দিল। আস্তে আস্তে গাড়ি জামারার অদূরবর্তী স্থানে এসে থামল। এরপরও প্রায় ঘণ্টাখানেক হাঁটতে হলো লাখ লাখ মানুষের স্রোতে। সেই স্রোতে ভেসে গিয়ে জামারা কুবরায় সাতটি পাথর নিক্ষেপ করলাম। পাথর নিক্ষেপের শুরুতেই তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিলাম। পরে শুরু হলো তাকবির ধ্বনি। তাকবির ধ্বনি দিতে দিতে পৌঁছলাম আমাদের নির্ধারিত তাঁবুর মধ্যে।
এ পর্যায়ে কোরবানির জন্য টাকা জমা দিলাম ব্যাংকের বুথগুলোতে। অপেক্ষায় থাকলাম আমার কোরবানির মেসেজ আসে কিনা। কোরবানি হয়ে গেছে এ সংবাদ পাওয়ার পর আমরা মাথা ন্যাড়া করলাম।
ক্লান্ত সবাই। কেউ বলছে বিশ্রাম নিতে আবার কেউবা বিশ্রাম ছাড়া চুল কেটে ফ্রেশ হতে চাচ্ছে। এর মধ্যে চোখে পড়ল এক বিশাল লাইন। লাইন আর কোনো কিছুর নয়। সবাই মাথা ন্যাড়া করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। হজের পর মাথা ন্যাড়া অথবা চুল ছোট করতে হয়। লাইনের যে প্রান্তে যিনি মাথা ন্যাড়া করে দিচ্ছেন তিনি আর কেউ নন, আমাদের ওস্তাদ শাইখ আবু আলী। কতইনা অমায়িক। নিজ হাতে শত শত ছাত্রের মাথা ন্যাড়া করে দিচ্ছেন। লাইন লম্বা দেখে শঙ্কিত হলাম। ছাত্রদের মধ্যে যারা চুল ন্যাড়া করতে জানত, তারাও শুরু করল ছাত্রদের মাথা ন্যাড়া করে দিতে। আমাদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাত্র প্রিয় আযীয ফুরকান ভাই আমার মাথা ন্যাড়া করে দিলেন। গোসল করে সাধারণ কাপড় পরে সুগন্ধি মেখে ঈদের দিনটা উপভোগ করলাম। বিকেলবেলা সবাইকে নিয়ে যাওয়া হলো পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করতে। এটাই হচ্ছে হজের তাওয়াফ। আগে যারা সাঈ করে নিয়েছিল তাদের আর সাঈ করতে হয়নি। তবে যারা সাঈ করেনি তারা তাওয়াফ শেষে সাঈ করে নিল।
মিনায় পৌঁছতে রাত ৯টা বেজে গেল। মিনায় পৌঁছে আমাদের প্রধান দায়িত্বশীল সবাইকে জড়ো করে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করলেন। তেলাওয়াত, নাশিদ, কবিতা আবৃত্তি, বক্তব্য আর বিভিন্ন দেশের ছাত্রদের কাছ থেকে নিজ নিজ দেশের ঈদের আনন্দ শেয়ার করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত করে তোলা হলো। হজের ক্লান্তিভাবের ভেতরই সবার মধ্যে ফিরে এলো সজীবতা। পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে রাতের প্রোগ্রাম শেষ হলো।
১১ জিলহজ মিনায় অবস্থান করলাম। ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে জামারায় কংকর নিক্ষেপ শেষে মক্কায় এসে পৌঁছলাম। বিদায়ী তাওয়াফ শেষে ছুটলাম প্রাণের শহর, যেখানে রয়েছে জান্নাত, যেখানে প্রশান্তি, নবীর শহর, প্রিয়ভূমি মদিনা মোনাওয়ারা পানে। মুখ জপতে শুরু করল ‘আসসালাতু আস-সালাম আলাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ।