হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘বৃক্ষরোপণ করে যে সম্পদশালী হয় সে’ এ স্লোগান সামনে রেখে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাণিজ্য মেলার মাঠে শুরু হওয়া মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা শেষ হচ্ছে আজ। আগারগাঁও বন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এ মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করবেন।
বন অধিদফতর আয়োজিত মেলা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলেও নার্সারি মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে এ মেলা চলবে এ মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত।
শেষদিকে এসে মেলায় পুরোদমে বিক্রি হচ্ছে ফুল, ফল ও ঘরের শোভা বর্ধনকারী নানান গাছ। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছের পাশাপাশি প্রাণঘাতী ক্যান্সার প্রতিরোধী গাছও বিক্রি হচ্ছে।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, এবার মেলায় বিক্রি হচ্ছে ব্যতিক্রমী নানা গাছ। আর ক্রেতা-দর্শনার্থীদের নজরও এসব গাছের ওপর। ডিসি নার্সারিতে ক্যান্সার প্রতিরোধী ‘টক আতা’ গাছটির বৈশিষ্ট্যে লেখা আছে- এটি ক্যান্সারের জীবাণুর চেয়ে দশ গুণ শক্তিশালী। এটি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। একই স্টলে বিক্রি হচ্ছে এবারের মেলায় প্রথম আসা ব্যতিক্রমী গাছ ভুজ্জপত্র। এর অন্য নাম পনচ ট্রি। এর পাতা থেকে ব্যথানাশক তেল তৈরি করা যায়; যা শিশু এবং বাতব্যথা রোগীর জন্য খুবই উপকারী। গাছটির দাম ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠছে; কিন্তু ৪ লাখ টাকার কম বিক্রি করবেন না বলে জানান নার্সারির মালিক দীপক কুমার নাথ।
অন্যদিকে ডিসি নার্সারিতেই বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের সুগন্ধি পারফিউম, ক্রিম ও লোশন তৈরির গাছ শ্বেত চন্দন। এর গায়েও ৩ লাখ টাকা দাম লেখা। নার্সারির মালিক দীপক বলেন, এ গাছগুলোর প্রতি ক্রেতা-দর্শনার্থীর আগ্রহ অনেক।
মেলায় বিশেষ ধরনের ফলের গাছের মধ্যে দেখা যায় ওয়ার্ল্ড কিং ম্যাংগো। আমেরিকান প্রজাতির প্রতিটি আমের ওজন প্রায় ২ কেজি হয় বলে জানান কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারির বিক্রেতা রানা। এটি ছাদে কিংবা বাগানে চাষ করা যায়। এর প্রতিটি গাছ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকায়।
একই নার্সারিতে এবার প্রথম আসা নতুন জাতের আম ব্রুনায় সুন্দরী কিং। প্রতিটি আমের ওজন ৫ কেজি পর্যন্ত হয় বলে জানান নার্সারি কর্তৃপক্ষ। তবে মেলায় গাছটির কলম করা চারা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা করে। ফল ছাড়াও কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারিতে বিক্রি হচ্ছে ইন্ডিয়ান অরিজিনের সম্পূর্ণ নতুন ফুল ফুলমারিয়া। এর গায়ে মূল্য লেখা আছে ৪ হাজার টাকা।
এছাড়া মেলার বেলি নার্সারিতে দেখা যায় সম্পূর্ণ নতুন জাতের আমের চারা হাই টু টু, কিং চাকাপাত ও চোষা ইন্ডিয়ান; যা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ৫০০ টাকায়। এর বৈশিষ্ট্যে দেখা যায়, এর প্রতিটি আমের ওজন হয় ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম। স্বাদেও অনেক মিষ্টি।
অন্যদিকে মেলার বিএডিসি নার্সারিতে দেখা যায় ব্যতিক্রমী ফল জাবটিকাবা। এটি ব্রাজিলিয়ান ফল। ফলগুলো দেখতে অনেকটা কালো জামের মতো হলেও এর ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হলো ফলগুলো গুচ্ছাকারে গাছের প্রধান কাণ্ডে ধরে। এর চারাও ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া বনরূপা নার্সারিতেও দেখা যায় ব্যতিক্রমী খাট প্রজাতির ভিয়েতনামের নারিকেলের জাত বিয়েদ নারিকেল। গাছটির বৈশিষ্ট্যে দেখা যায়, তিন বছর হলেই ফল দেয়। এর উচ্চতা সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় হাত হয়। ভিয়েতনামের এ প্রজাতির প্রতিটি ডাবে ৩ থেকে ৫০০ গ্রাম পানি হয়। এর প্রতিটি চারা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা করে। এছাড়াও মেলায় ৩ বছরেই খেজুর ধরে এমন ব্যতিক্রমী খেজুর গাছও বিক্রি হচ্ছে। মেলায় গাছের চারা ছাড়াও এগুলোর পরিচর্যার জন্য বিক্রি হচ্ছে জৈব সার, বীজ, কীটনাশক, বাগান পরিচর্যার সরঞ্জাম, ফুলের টব এবং গাছের খাবার ভিটামিন। তাছাড়া মিলছে গাছসংক্রান্ত বইও। এবারের বৃক্ষমেলায় সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ১০০টি স্টল অংশ নিয়েছে। ১৩ জুলাই পর্যন্ত ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭২২টি চারা বিক্রি হয়েছে ৫ কোটি ২২ লাখ ৩৮ হাজার ১৬৭ টাকায়।
জানা যায়, মেলা আজ সরকারিভাবে শেষ হলেও নার্সারি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে মেলা এ মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত চলবে। এ ব্যাপারে নার্সারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম মিয়া বলেন, রোজার মাসে বেচাকেনা ভালো না হওয়ায় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে মেলা চালিয়ে যাওয়া হবে। মেলার দায়িত্বে থাকা সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা শেষ হবে। এতে বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারের ১০টি ক্যাটাগরিতে দেয়া দ্বিতীয়, তৃতীয় পুরস্কার দেবেন। এছাড়া জাতীয় বৃক্ষমেলায় চারটি ক্যাটাগরিতে দেয়া প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার দেবেন তিনি। মেলার সময় বাড়ানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, নার্সারি কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে থাকতে চাইলে তাদের নিজ নিজ দায়িত্বে থাকতে হবে।