হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছেন ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও সংগীত পরিচালক জিৎ গাঙ্গুলী। গতকাল শনিবার এটিএন বাংলার ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এদিন রাতে চ্যানেল লাইভ এন্টারটেইনমেন্ট আয়োজিত ‘শর্মিলা ঠাকুর-জিৎ গাঙ্গুলি লাইভ ইন ঢাকা’-পাওয়ার্ড বাই ভিশন কনসার্টে অংশ নিতেই তার বাংলাদেশে আসা। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জিৎ গাঙ্গুলী। সেখানে তিনি নিজের কথা ছাড়াও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সেই আলাপচারিতার চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো-
এক নজরে জিৎ গাঙ্গুলী
২০০০ সালে ‘তেরে লিয়ে’ চলচ্চিত্র দিয়ে বলিউডে সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন জিৎ গাঙ্গুলী। এরপর ‘হামারি আধুরি কাহানি’, ‘আশিকি-২’, ‘খামোশিয়ান’, ‘সিটিলাইটস’, ‘রাজ রিবোট’, ‘অ্যালোন’ এবং ‘সিংগাম রিটার্নস’র মতো বলিউডে অনেক চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছেন। আর ২০০৪ সালে ‘প্রেমী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে টালিগঞ্জ অভিযাত্রা শুরু করে ‘সাথী’, ‘বাপি বাড়ি যা’, ‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট লাভ’, ‘জোশ’, ‘হিরো’, ‘অমানুষ’সহ অসংখ্য সুপারহিট চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেন তিনি।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করছেন, এখন পর্যন্ত অনুভূতি কী।
অবশেষে প্রতীক্ষা শেষ হলো। কতদিন আমি বাংলাদেশে গান করার অপেক্ষা করেছি। বাংলাদেশের প্রতি আলাদা টান আছে আমার। এখানে আসার অনুভূতিও এককথায় অসাধারণ। আমি যখন ঢাকায় পা রাখলাম মনেই হয়নি কলকাতার বাইরে এসেছি। শুধু যে ভাষার সাদৃশ্য এজন্য নয়; পোশাক, যানবাহন, পথঘাট ও মানুষজনে তেমন কোনো পার্থক্য চোখে পড়ছে না। বিশেষ করে আতিথেয়তায় মুগ্ধ আমি। মুম্বাইয়েই থাকি আমি নিয়মিত। সেখান থেকেই কাজ করি বলিউড ও টালিউডে। আমার কাছে ঢাকাকে মুম্বাইয়ের থেকেও কাছের মনে হয়েছে। সেটা যেমন দূরত্বে তেমনি ভালো লাগার জায়গা থেকেও। তাছাড়া, বাংলাদেশের সঙ্গে আমার অনেক যোগাযোগ। পূর্ব পুরুষের যোগাযোগ আছে, গানের যোগাযোগ আছে। সুযোগ হলে বারবার আসতে চাই।
বাংলাদেশি গান কি শোনা হয়? এপারের গান নিয়ে আপনার ভাবনার কথা শুনতে চাই।
বাংলাদেশি গান নিয়মিতই শোনা হয়। বিশেষ করে এপারের ব্যান্ড গানের দারুণ জনপ্রিয়তা রয়েছে কলকাতায়। তাছাড়া দুই বাংলার সংগীতের যোগাযোগটা বেশ পুরনো এবং অনেক দিনের। আজকাল অনেকের গানই ভালো লাগে। আইয়ুব বাচ্চু লিজেন্ডারি একজন গানের মানুষ। খুব ভালো লাগে তার গান। এ ছাড়া অর্ণব আমার বন্ধু মানুষ। চমৎকার গান করে সে। আর নতুনদের অনেক গান শোনা হয়েছে। ভালো লাগে। তবে এপারের গান নিয়ে বলতে গেলে আমি যে বিষয়টি বিশেষভাবে বলতে চাই সেটা হলো এখানকার গীতিকারেরা অসাধারণ। তাদের লেখা গানগুলোতে কী দারুণভাবে গল্পকে উপস্থাপন করা হয়। আমি শুনতে শুনতে অভিভূত হয়ে যাই। বাংলাদেশের সব গীতিকারকে আমি স্যালুট দিচ্ছি। আমি উনাদের সঙ্গে যদি গান করতে পারতাম খুব ভালো লাগত।
বাংলাদেশে কাজ করা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে আপনার।
অবশ্যই, কেন নয় বলুন তো। দুই বাংলাতেই দুই বাংলার গানের জনপ্রিয়তা আছে। আমি খুব করে চাই বাংলাদেশে কাজ করতে। এখানকার গীতিকারদের সঙ্গে গান করতে মুখিয়ে আছি আমি। সেটা দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনার অ্যালবাম হতে পারে, এখানকার গীতিকারদের আয়োজনে লোকাল অ্যালবাম হতে পারে, চলচ্চিত্রে হতে পারে। মোট কথা, আমি বাংলাদেশে কাজ করতে চাই।
সংগীতে দুই বাংলাতেই বিভিন্নরকম রিয়েলিটি শোর জনপ্রিয়তা আছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় এখান থেকে খুব বেশি শিল্পীরা টিকে থাকতে পারছেন না। আপনার মতে এর কী কারণ আছে বলে মনে হয়।
রিয়েলিটি শো আপাতত একটি প্ল্যাটফর্ম দেয়। কিন্তু অধ্যবসায় আর সাধনাই সংগীতের ভুবনে টিকে থাকার ‘একমাত্র প্ল্যাটফর্ম’ বলে মনে করি আমি। ভারতে বা বাংলাদেশে এ মুহূর্তে প্রচুর রিয়েলিটি শো হচ্ছে। শ্রেয়া ঘোষাল, কুনাল গাঞ্জাওয়ালাদের মতো শিল্পীরাও উঠে আসছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা হচ্ছে- ল্যাক অফ প্র্যাকটিস। একদমই চর্চা করে না আর ওরা। রিয়েলিটি শোর এই প্ল্যাটফর্ম পেয়ে ওরা সো লাকি, কিন্তু ওদের তো চর্চা ধরে রাখতে হবে। আর সেটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ শিল্পীদের উদ্দেশ্যে বলব- সবসময় কিন্তু ভাগ্য, চ্যানেল হাতে থাকবে না, হাতে যা থাকবে তা হলো চর্চা।
আপনার ভাবনায় শর্মিলা ঠাকুর সম্পর্কে জানতে চাই।
শর্মিলা ঠাকুর একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। বাঙালি মেয়ে হয়ে তিনি বাংলাকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ২০০৯ সালে অরূপ দত্ত পরিচালিত ‘মর্নিং ওয়াক’ সিনেমার সংগীত পরিচালনার সময় শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ। প্রথমবারের মতো তার সঙ্গে একমঞ্চে উপস্থিত হতে যাচ্ছি। এটা আমার জন্য চিরস্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে।