দফতর বদলের পর থেকে ক্রমেই সরকার এবং দলে তুলনামূলক সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
বর্তমান সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকাকালে নিজের দফতরে বসে একদিনও অফিসিয়াল কাজ করেননি। কিন্তু জনপ্রশাসনমন্ত্রী হওয়ার পর নিজের রুম প্রস্তুত না হওয়ার পরও সচিবের রুমে বসে তিন দিন দাফতরিক কাজ করেছেন বলে জানা গেছে।
একই সঙ্গে আগস্ট মাসকে কেন্দ্র করে দলীয় কার্যক্রমেও সক্রিয় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
তার সাম্প্রতিক কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতারাও বিষয়টি চোখে পড়ার মতো বলে মন্তব্য করেছেন। তবে, কোনো মন্ত্রীই নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে চাননি।
গত ৯ জুলাই তাকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ৭ দিন দফতরবিহীন মন্ত্রী থাকার পর ১৬ জুলাই তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তার কাজের সক্রিয়তা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দুইজন মন্ত্রী পরিষদ সদস্য।
গত ২৭ জুলাই মন্ত্রিসভার ৭০তম বৈঠকে প্রথম জনপ্রশাসনমন্ত্রী হিসেবে অংশ নেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওইদিনের বৈঠকে তিনি অন্যান্য মন্ত্রিসভা বৈঠকের চেয়ে বেশী তৎপর ছিলেন বলে দ্য রিপোর্টকে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন মন্ত্রী। সেদিন আশরাফুল ইসলাম তেল-গ্যাস ব্যবস্থাপনা ও মাংস উৎপাদন নিয়ে কথা বলেছিলেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়।
৩ জুলাই মন্ত্রিসভার ৭১তম বৈঠকেও সেই ধারা বজায় রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে ওই মন্ত্রিসভা সদস্যের কথা বলতে গেলে এই প্রতিবেদকে জানান, ‘আমি দশটা বাজার বিশ মিনিট আগেই কেবিনেট রুমে ঢুকি। দেখলাম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মনোযোগ দিয়ে কেবিনেটের এজেন্ডা দেখছেন। তখন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানও ছিলেন। সচরাচর জ্যেষ্ঠ এই নেতাকে এত আগে কেবিনেট রুমে দেখা যায় না।’
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন প্রতিমন্ত্রী জানান, সোমবারের মন্ত্রিসভায় ‘রাষ্ট্রপতির অবসরভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধার বিষয়ে যখন আলোচনা হচ্ছিল, তখন সৈয়দ আশরাফুল সংসদ সদস্যদের জন্য অবসরভাতার প্রস্তাবও করেছিলেন।
দফতর বদলের পর থেকে সরকারের সঙ্গে দলের মধ্যেও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আগের চেয়ে তৎপর হচ্ছেন বলে আলোচনা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর চল্লিশতম শাহাদাৎ-বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সম্পাদকদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন তিনি। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো কর্মসূচিকে সামনে রেখে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে এভাবে মিডিয়া হাউসের শীর্ষ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বসতে দেখা যায়নি।
শুধু তাই নয়, শোকের মাস হিসেবে আগস্টের শুরুর দিনে আওয়ামী লীগ বিটের রিপোর্টারদের নিয়ে টুঙ্গীপাড়া সফর করেছেন। ওই সফরে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরীসহ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন।
তবে, কাজে সক্রিয় হলেও মিডিয়ায় উপস্থিতির বিষয়ে আগের ধারাই বজায় রেখেছেন তিনি। সাধারণত রাজনৈতিক দলের তার পর্যায়ের অনেক নেতা মিডিয়া কভারেজ পাওয়ার জন্য আলাদা চেষ্টা, তদবির করেন। কিন্তু আশরাফুল ইসলাম বরাবরের মতো মিডিয়ায় এড়িয়ে যান।
টুঙ্গীপাড়ায় তার সঙ্গে সফরকারী একজন সাংবাদিক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ওইখানের মিলাদ মাহফিল শেষ হওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হয়ে কয়েকজন সিনিয়র নেতা অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়ান। কিন্তু, আশরাফুল ইসলাম মসজিদ থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই চলে যান।’
সাংবাদিকরা কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানালে আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘চল্লিশ দিনের কর্মসূচির শুরু হল কেবল। আরও অনেক অনুষ্ঠান আছে। তখন কথা বলব।’
দলের দ্বিতীয় প্রধান এই ব্যক্তির সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘এটি খুবই ভাল লক্ষণ। দলের জন্য ভাল, সরকারের জন্যও ভাল।’
মন্ত্রণালয়ে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম ‘মন্ত্রিসভা বৈঠকসহ অন্যান্য পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে স্যার অংশগ্রহণ করছেন।’
‘মন্ত্রণালয়ে স্যারের কোনো রুম না থাকায় সচিব স্যারের রুমে বসেন তিনি। প্রয়োজনীয় ফাইলে স্বাক্ষর করেন। স্যারের (মন্ত্রী) জন্য রুম তৈরী করা হচ্ছে’– জানান ওই কর্মকর্তা।
এই বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও কেউ রিসিভ করেননি। তার সহকারী একান্ত সচিবের মোবাইল নাম্বারও বন্ধ পাওয়া গেছে।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাম্প্রতিক অবস্থার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক আলম কোহিনূর দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘তার সঙ্গে নেতাকর্মীরা যোগাযোগ করতে পারুক বা না পারুক— দল নিয়ে সবার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস আছে যে, জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মতো নেতা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’