হাওর বার্তা ডেস্কঃ অকাল বন্যায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাওড়ের ধান পচে মাছের মড়কের ক্ষতি পোষাতে ৩৯ টন পোনা অবমুক্ত করা হচ্ছে। এ পোনা অবমুক্তকরণ কার্যক্রমেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, অনিয়মের কারণে পোনা অবমুক্তকরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মত্স্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাবমতে, গত এপ্রিলে অকাল বন্যায় পানি দূষিত হয়ে সিলেটের বিভিন্ন হাওড়ে মারা যায় ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ। এতে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয় ৪১ কোটি টাকা। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুনামগঞ্জ। এ জেলায় হাওড়ের সংখ্যাও বেশি। তাই সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পোনা ছাড়া হচ্ছে সুনামগঞ্জের হাওড়গুলোয়।
সিলেট বিভাগীয় মত্স্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাওড়গুলোয় রুই, কাতলা, মৃগেল, শিং, কইসহ দেশীয় বিভিন্ন ছোট মাছের পোনা অবমুক্ত করা হচ্ছে। স্থানীয় নার্সারিগুলো থেকে গড়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে এসব পোনা কেনা হচ্ছে। মত্স্য কর্মকর্তারা জানান, পোনা অবমুক্তের জন্য ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের হাওড়গুলোয় ৬০ লাখ টাকার, মৌলভীবাজারে ৩০ লাখ টাকার, হবিগঞ্জে ১৮ লাখ টাকার ও সিলেটে ৮ লাখ টাকার পোনা অবমুক্ত করা হচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম থেকে পোনা অবমুক্তের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা এ সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে।
তবে এরই মধ্যে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন হাওড়ে পোনা সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় পছন্দের ঠিকদারকে পোনা অবমুক্তকরণের কাজ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা জ্যেষ্ঠ মত্স্য কর্মকর্তা ও সহকারী মত্স্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উন্মুক্ত জলাশয়ে বিল নার্সারি স্থাপন ও পোনা অবমুক্তকরণ প্রকল্পের আওতায় ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপজেলা পোনা মাছ সংগ্রহ কমিটির সদস্য পাঁচজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সভাপতি এ কমিটির এবং জ্যেষ্ঠ উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা সদস্য সচিব। গত মাসের শেষ সপ্তাহে পোনা সংগ্রহ নিয়ে ওই কমিটির সভা হয়। এতে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে পোনা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দরপত্রের নিয়ম না মেনে ঘুষের বিনিময়ে গত সপ্তাহে জ্যেষ্ঠ উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তিকে ১ হাজার ৬৭৮ কেজি রুইজাতীয় পোনা ছাড়ার দায়িত্ব দেন।
কমিটির সভাপতি ও ইউএনও মামুন খন্দকার অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা ও সহকারী উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঠিকাদার নির্বাচন, পোনা সংগ্রহ করাসহ পোনা অবমুক্তির যাবতীয় কার্যক্রম তদারকি করছেন। স্বচ্ছতার অভাব থাকায় আমি এ কাজে অংশ নিইনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা জ্যেষ্ঠ মত্স্য কর্মকর্তা আরাফাত সিদ্দিকী বলেন, সবই বিধি অনুযায়ী করা হয়েছে। এতে কোনোরকম অনিয়ম হয়নি। পোনা অবমুক্তির কাজে কারো কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
সহকারী উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, পোনা ক্রয়সহ অবমুক্তির কার্যক্রম নিয়ম মোতাবেক করা হয়েছে।
এদিকে হাওড়ে ৬ ইঞ্চির নিচে কোনো পোনা না ছাড়ার কথা থাকলেও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওড়ে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পোনা ছাড়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে জেলা মত্স্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস আখন্দ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে ইউএনও চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বলেন, মাছের পোনা ছাড়ায় অনিয়ম থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পোনা অবমুক্তকরণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পোনা উত্পাদন ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে দরপত্র আহ্বান না করেই কেনা হচ্ছে পোনা। বিক্রেতার কাছ থেকে কৌশলে বেশি দামে এসব পোনা কেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা রমনী মোহন পাল বলেন, দাম কম হওয়ায় কোটেশন ছাড়াই পোনা কিনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
তবে এসব অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মত্স্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের উপপরিচালক মোশারেফ হোসেন। তিনি বলেন, অনিয়মের কোনো সুযোগই নেই। ঢাকা ও সিলেটের একাধিক টিম পোনা অবমুক্তের কার্যক্রম মনিটর করছে। ফলে কেউ চাইলেও অনিয়ম করতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, এবারের বন্যায় হাওড়ের মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রথমে চুন ঢেলে নষ্ট হয়ে যাওয়া পানি বিশুদ্ধ করেছি। এখন ক্ষতি পোষাতে পোনা ছাড়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে হাওড়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন, সঠিকভাবে ও নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাওড়ের ফসল তলিয়ে যায়। এসব অভিযোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।