ঢাকা ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যায় ১৩ জেলার সাড়ে ছয় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪৬:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০১৭
  • ২৩৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, বন্যা-কবলিত দেশের ১৩ জেলার ৪৫ উপজেলায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৩ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৪ হাজার টন চাল, ১ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক বরাদ্দ ও নয়টি আইটেম-সমৃদ্ধ ১৮ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণসামগ্রীর অভাব নেই জানিয়ে তিনি ‘বন্যা নিয়ে রাজনীতি’ না করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
আজ বুধবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বন্যা পরিস্থিতি ও সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে মন্ত্রী এসব তথ্য জানান। এসময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের সক্ষমতা রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, গত মার্চ মাসে আগাম বন্যায় ফসলহানির কারণে এর বাইরে সিলেট অঞ্চলের জেলাসমূহে প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার পরিবারকে ভিজিএফ দেয়া হয়েছে যা চলমান রয়েছে। জেলা প্রশাসকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য ও আর্থিক বরাদ্দ দেয়া হবে। একজন লোকও যাতে খাবারের কারণে কষ্ট না পায়, সেজন্য সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে জেলা প্রশাসনকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সিলেট, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। উত্তরের পানি মধ্যাঞ্চলে নেমে আসলে আরও নতুন জেলা প্লাবিত হতে পারে।
ত্রাণমন্ত্রী বলেন, উজানের দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও ভুটানে এবার বন্যা হয়েছে। ভাটির দেশ হিসেবে উজানের প্রভাব আমাদের ওপর পড়বে। এর আলোকে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি ও মানুষের জন্য সহনশীল অবস্থায় রাখতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি জেলার বন্যা পরিস্থিতি সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত বন্যা ও ত্রাণ কার্যক্রমের খোঁজখবর নিচ্ছেন। মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
মায়া বলেন, পানিবাহিত রোগ থেকে দুর্গত মানুষদের রক্ষা করতে হবে। কোন বেড়িবাঁধ যাতে নতুন করে ভাঙ্গা না যায় তার জন্য আন্তরিক চেষ্টা করতে হবে। পশুখাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বন্যা প্লাবিত এলাকার টিউবওয়েলগুলো উঁচু করে দিয়ে, পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি মেডিক্যাল টিমগুলোকে প্রতিদিন বন্যাকবলিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করে সেবাকার্য চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। মন্ত্রী বলেন, প্রতিদিন প্রত্যেক জেলার ক্ষয়ক্ষতি, ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষের পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ১১ জুলাই পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির ৯০টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ১২টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৫৫টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, বন্যা নিয়ে রাজনীতি না করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে আহ্বান জানাব- আসুন আমরা বন্যা প্লাবিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের মানবিক কর্তব্য পালন করি। শুক্রবার থেকে তিনি উত্তরাঞ্চলের প্রত্যেকটি বন্যা প্লাবিত জেলা সফর করে ত্রাণ বিতরণ করবেন। সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকা সফর করে বন্যাপ্লাবিত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের অনুরোধ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মায়া বলেন, সিলেট ও মৌলভীবাজারে ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। উত্তরাঞ্চলেও আশ্রয়কেন্দ্র খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবার বন্যা হবে ধরে নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি ছিল। প্রত্যেক জেলায় প্রচুর ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে। এবার ৯৮ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট তৈরি করে রেখেছি। কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠলে যেন তাৎক্ষণিকভাবে খাবারের চিন্তা করতে না হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যায় ১৩ জেলার সাড়ে ছয় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

আপডেট টাইম : ০৭:৪৬:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, বন্যা-কবলিত দেশের ১৩ জেলার ৪৫ উপজেলায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৩ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৪ হাজার টন চাল, ১ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক বরাদ্দ ও নয়টি আইটেম-সমৃদ্ধ ১৮ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণসামগ্রীর অভাব নেই জানিয়ে তিনি ‘বন্যা নিয়ে রাজনীতি’ না করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
আজ বুধবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বন্যা পরিস্থিতি ও সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে মন্ত্রী এসব তথ্য জানান। এসময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের সক্ষমতা রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, গত মার্চ মাসে আগাম বন্যায় ফসলহানির কারণে এর বাইরে সিলেট অঞ্চলের জেলাসমূহে প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার পরিবারকে ভিজিএফ দেয়া হয়েছে যা চলমান রয়েছে। জেলা প্রশাসকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য ও আর্থিক বরাদ্দ দেয়া হবে। একজন লোকও যাতে খাবারের কারণে কষ্ট না পায়, সেজন্য সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে জেলা প্রশাসনকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সিলেট, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। উত্তরের পানি মধ্যাঞ্চলে নেমে আসলে আরও নতুন জেলা প্লাবিত হতে পারে।
ত্রাণমন্ত্রী বলেন, উজানের দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও ভুটানে এবার বন্যা হয়েছে। ভাটির দেশ হিসেবে উজানের প্রভাব আমাদের ওপর পড়বে। এর আলোকে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি ও মানুষের জন্য সহনশীল অবস্থায় রাখতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি জেলার বন্যা পরিস্থিতি সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত বন্যা ও ত্রাণ কার্যক্রমের খোঁজখবর নিচ্ছেন। মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
মায়া বলেন, পানিবাহিত রোগ থেকে দুর্গত মানুষদের রক্ষা করতে হবে। কোন বেড়িবাঁধ যাতে নতুন করে ভাঙ্গা না যায় তার জন্য আন্তরিক চেষ্টা করতে হবে। পশুখাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বন্যা প্লাবিত এলাকার টিউবওয়েলগুলো উঁচু করে দিয়ে, পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি মেডিক্যাল টিমগুলোকে প্রতিদিন বন্যাকবলিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করে সেবাকার্য চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। মন্ত্রী বলেন, প্রতিদিন প্রত্যেক জেলার ক্ষয়ক্ষতি, ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষের পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ১১ জুলাই পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির ৯০টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ১২টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৫৫টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, বন্যা নিয়ে রাজনীতি না করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে আহ্বান জানাব- আসুন আমরা বন্যা প্লাবিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের মানবিক কর্তব্য পালন করি। শুক্রবার থেকে তিনি উত্তরাঞ্চলের প্রত্যেকটি বন্যা প্লাবিত জেলা সফর করে ত্রাণ বিতরণ করবেন। সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকা সফর করে বন্যাপ্লাবিত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের অনুরোধ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মায়া বলেন, সিলেট ও মৌলভীবাজারে ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। উত্তরাঞ্চলেও আশ্রয়কেন্দ্র খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবার বন্যা হবে ধরে নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি ছিল। প্রত্যেক জেলায় প্রচুর ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে। এবার ৯৮ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট তৈরি করে রেখেছি। কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠলে যেন তাৎক্ষণিকভাবে খাবারের চিন্তা করতে না হয়।