হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাম্প্রতিক কালে রাজধানী ও বিভিন্ন শহরে চিকুনগুনিয়া নামের ভাইরাস জ্বরের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ রোগে জ্বর ও গিরাব্যথার সঙ্গে একটা উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হচ্ছে ত্বকে নানা ধরনের র্যাশ ও চুলকানি। ত্বকের কিছু কিছু সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং বেশ জটিলতার সৃষ্টি করে।
বর্ষার আরেক সাধারণ ভাইরাস জ্বর ডেঙ্গু জ্বরের সঙ্গেও ত্বকে র্যাশ দেখা দিয়ে থাকে। তবে চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে এর কিছু পার্থক্য আছে। ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত র্যাশ দেখা দেয় জ্বরের তিন বা চার দিন পর, জ্বর নেমে যাওয়ার সময়। চিকুনগুনিয়ায় জ্বর কমে যাওয়ার পর এমনকি জ্বরের শুরুতেই র্যাশ দেখা দিতে পারে। লাল বর্ণের ছোট ছোট গোটা, হাত-বুক-পিঠজুড়ে উঠতে দেখা যায়। এগুলো বেশ চুলকায় ও চুলকানির মাত্রা মাঝে মাঝে তীব্র। এটাও ডেঙ্গুর সঙ্গে এই র্যাশের তফাত। সাধারণত চার বা পাঁচ দিন পর র্যাশ কমে যায়।
কিন্তু অনেক রোগীর র্যাশ কমে যাওয়ার পর শরীরের বিভিন্ন স্থানে, যেমন মুখ, কান, হাত, পায়ে বিভিন্ন আকৃতির কালো দাগ বা পিগমেন্টেশন দেখা দিতে পারে। এগুলো দেহের অনাবৃত অংশেই হয়। তাই ধারণা করা হয়, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে হচ্ছে। এ ধরনের কালো দাগ দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে তাই আগের তুলনায় কালো দেখাচ্ছে বলে মনে হয়। চিকুনগুনিয়া রোগে ত্বক সূর্যের রশ্মির প্রতি অতিসংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে। ফলে সূর্যের আলোতে গেলে ত্বক জ্বালা করে ও বেশি চুলকায়।
ত্বকে র্যাশ ও পিগমেন্টেশন ছাড়াও চিকুনগুনিয়ার কারণে ত্বক অত্যন্ত শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় ঠোঁট, হাতের তালু ও পায়ের তলার চামড়া ফেটে গিয়ে চামড়া উঠতে পারে। এমনকি কোথাও কোথাও জলবসন্তের মতো দানাদার পানিযুক্ত গোটাও দেখা দিতে পারে।
ঠোঁটের কোণ, জননেন্দ্রিয় ও বিভিন্ন ভাঁজে ঘা হতে পারে, যা অত্যন্ত ব্যথাদায়ক এবং দু-তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে রোগীকে ভোগান্তির মাঝে ফেলে দেয়। মুখের ভেতর, মাড়ি ও জিবেও ঘা হতে পারে।
কী করবেন?
চিকুনগুনিয়াজনিত ত্বকের এসব সমস্যা ব্যথা ও কষ্টদায়ক বটে, তবে এগুলো তেমন কোনো জটিলতা বয়ে আনে না। এসব সমস্যা জ্বর ও গিরাব্যথার মতোই নিজে নিজে সেরে যাবে। চুলকানি তীব্র হলে অ্যান্টি-হিস্টামিনজাতীয় ওষুধ বা স্টেরয়েড মলম ব্যবহার করা যায়। ত্বকের শুষ্কতার জন্য পর্যাপ্ত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। সানব্লক ক্রিম ব্যবহার করলে সূর্যের আলোতে জ্বালাপোড়া কমবে। মনে রাখবেন, চিকুনগুনিয়া ছাড়াও ডেঙ্গু, হাম, জলবসন্ত, টাইফয়েড ও অন্যান্য সংক্রমণজনিত রোগেও ত্বকে র্যাশ হতে পারে। তাই ত্বকে র্যাশ হলেই তা চিকুনগুনিয়া নয়। জ্বরের সঙ্গে ত্বকে র্যাশ থাকলে তা চিকিৎসককে অবহিত করুন বা ছবি তুলে রাখুন। যথেষ্ট পানি ও অন্যান্য তরল পান করুন। পানিশূন্য হতে দেবেন না। পুষ্টিকর ও ভিটামিনযুক্ত ফলমূল খান।
ডা. মো. আসিফুজ্জামান
চর্ম বিশেষজ্ঞ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল