ঢাকা ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যৌনতায় আগ্রহ হারাচ্ছেন জাপানের যুবক-যুবতীরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০১৭
  • ৩০২ বার

হাওর বার্তা ডেস্ক ঃ  শারীরিক আকর্ষণ হারাচ্ছেন জাপানের তরুণ, যুব প্রজন্ম। ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী জাপানি যুবতীদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার আগ্রহ নেই বললেই চলে। পুরুষদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশের বেশির অবস্থা একই। সাংবাদিক অ্যাবিগিল হ্যারোথের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব বিষয়। আর এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে লন্ডনের অভিজাত পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, যৌন জীবনের সম্পর্ক বিষয়ে পরামর্শ দেন আই আয়োয়ামা নামে একজন কাউন্সেলর। তিনি টোকিওর একটি তিনতলা ভবনে তার কাজ চালিয়ে যান। জাপানি ভাষায় তার নামের প্রথম অংশের অর্থ হলো ভালোবাসা। এখন থেকে ১৫ বছর আগে তিনি ছিলেন কুইন আয়োয়ামা বা ভালোবাসার রাণী। তিনি নারী-পুরুষের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করতে স্বাভাবিক সবই করতেন। এমনকি একজন যুবতীকে আকর্ষণীয় করে তুলতে তার বিশেষ বিশেষ অঙ্গসজ্জা করে দিতেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে তার কাজ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। এখন তার বয়স ৫২ বছর। জাপানে শুরু হয়েছে শারীরিক আকর্ষণহীনতা। ৪০ বছরের নিচে বয়স এমন জাপানির শারীরিক আকর্ষণ বা শারীরিক সম্পর্কের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। লাখ লাখ যুবক, যুবতী আছেন তারা এমনকি ডেটিং পর্যন্ত করছেন না। তারা যৌন জীবন নিয়েও ভাবিত নন। এমন যুবক-যুবতীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এ প্রবণতার নাম দেয়া হয়েছে ‘সেলিবেসি সিনড্রোম’। সরকার এটাকে জাতীয় পর্যায়ে একরকম মহামারী হিসেবে দেখছে। এরই মধ্যে এমনিতেই বিশ্বে সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। এর জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬০ লাখ, যা গত এক দশক ধরে সঙ্কুচিত হচ্ছে। এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে এ সংখ্যা ২০৬০ সালে এক-তৃতীয়াংশে এসে দাঁড়াবে। এ জন্য দেশ কঠিন এক সংকটে পড়তে যাচ্ছে। তাই আয়োয়ামা মনে করেন, এক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে। তিনি যে ভবনে বসেন তার বাইরে লেখা ‘ক্লিনিক’। তিনি ১৯৯০-এর দশকে উত্তর কোরিয়া সফর করেছেন। সে সময়কার একজন শীর্ষ জেনারেলকে তিনি কিভাবে শাস্তি দিয়েছেন তাও শেয়ার করেছেন। তার প্রথম কাজ হলো তার কাছে যাওয়া ক্লায়েন্টকে উৎসাহিত করা। ক্লায়েন্টরা যাতে নিজের শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ না করেন সে বিষয়ে উৎসাহ দেন তিনি। জাপানে সিঙ্গেল মানুষ বা অবিবাহিত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড গড়েছে। ২০১১ সালে এ বিষয়ে একটি জরিপ চালানো হয়। তাতে দেখা যায়, জাপানে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে শতকরা ৬১ ভাগই অবিবাহিত। নারীদের মধ্যে এ হার শতকরা ৪৯। এমনকি এসব যুবক-যুবতী কোনো প্রেমের সম্পর্কেও যুক্ত নন। বিগত ৫ বছরের তুলনায় এ হার শতকরা ১০ ভাগ বেশি। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ বছরের নিচে যেসব যুবক বা যুবতী আছেন তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ কখনোই ডেটিং বা প্রেম করেন নি। সমকামী সম্পর্কের ঘটনা তো নেই-ই। অর্থাৎ জাপানে যুবক-যুবতীরা ভালোবাসা বা যৌনজীবন সম্পর্কে উদাসীন। এক্ষেত্রে ধর্মীয় কোনো বিধিনিষেধ নেই। এ বছরের শুরুর দিকে জাপানের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সংস্থা জেএফপিএ জরিপ চালিয়ে দেখতে পেয়েছে যে, নারীদের মধ্যে ১৬ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে বয়স যাদের তারা মোটেও যৌন সম্পর্কে আগ্রহী নয়। আয়োয়ামা বলেন, তার কাছে যেসব মানুষ আসেন তাদের অনেকেই গভীরভাবে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। কেউ কেউ জীবনসঙ্গী খোঁজেন। আবার অনেকেই অবিবাহিত থাকতে থাকেন। দু’একজন আছেন যারা স্বাভাবিক ভালোবাসা বা বিয়ে করতে চান। তিনি বলেন, জাপানে এখনো টিকে আছে সেই ধারা- যেখানে স্বামী হবেন ভালো বেতনভোগী আর স্ত্রী থাকবেন বাসায়।
সরকারিভাবে যে সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে তাও কোনো সহায়ক হিসেবে কাজ করছে না। যেকোনো বছরের তুলনায় ২০১২ সালে খুবই কম সংখ্যক শিশু জন্ম নিয়েছে সেখানে। এটাই এক নতুন রেকর্ড গড়েছে। তাই জেএফপিএ’র প্রধান কুনিও কিতামুরা বলেছেন, জনসংখ্যাতত্ত্বে এতটাই সংকট সৃষ্টি হয়েছে যে, এতে জাপান একরকম অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। যুদ্ধপরবর্তী প্রজন্মের মতো ৪০ বছরের নিচে বয়সী জাপানিরা বেশি কাজ করতে চায় না। ২০ বছরের অর্থনৈতিক স্থবিরতার পর জাপানে বড় ধরনের সামাজিক বিবর্তন হতে যাচ্ছে। ২০১১ সালের ভূমিকম্প, সুনামি ও তেজস্ক্রিয় পদার্থের গলনের ফলে যে প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে জাপান। তবে তারা পশ্চাৎদিকে ধাবিত হচ্ছে না। আয়োয়ামা বলেন, নারী এবং পুরুষরা আমাকে বলেন, তারা ভালোবাসার কোনো কারণ খুঁজে পান না। তারা মনে করেন না, ভালোবাসা কোনো ভালো কিছুর দিকে ধাবিত করবে। এই জাপানে ভালোবাসা, প্রেম খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিয়ে হয়ে পড়েছে খুব বেশি অনাকর্ষণীয় বিষয়। পুরুষরা খুব বেশি ক্যারিয়ারহীনতার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তাদের আর্থিক সক্ষমতা কমেছে। সেখানে লাইফটাইম চাকরির নিশ্চয়তা কমে গেছে। উল্টোটা ঘটেছে নারীদের ক্ষেত্রে। তারা বেশি বেশি আত্মনির্ভরশীল ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠছেন। তবে কর্মক্ষেত্রে ও বাড়িতে রয়েছে রক্ষণশীল আবহ। আয়োয়ামা বলেন, জাপানের বড় বড় শহরগুলোতে নারী-পুরুষের মাঝ থেকে যৌন আকাঙ্ক্ষা উবে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে দীর্ঘ সময় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় না। তারা এক্ষেত্রে বেছে নেন ক্যাজুয়াল সেক্স। এক্ষেত্রে তাদের ভরসা হয় অনলাইন পর্নোগ্রাফি, ভার্চুয়াল গার্লফ্রেন্ড, অ্যানিমেশন করা কার্টুন। জাপানে এখন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ অবিবাহিত যুবক, যুবতী আছেন। তারা বর্তমানে বসবাস করেন পিতা-মাতাদের সঙ্গে। এর মধ্যে আবার প্রায় ৩০ লাখের বয়স ৩৫ বছরের ওপরে।  এমন অনেক পুরুষ যান আয়োয়ামার কাছে। তাদের একজন ৩০ বছর বয়স্ক। তিনি কুমার। তিনি কোনো নারী রোবট না দেখা পর্যন্ত তার মধ্যে পুরুষত্ব জাগে না। তার বিষয়ে আয়োয়ামা বলেন, তাকে আমি মানব শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকর্ম বোঝাই। বাড়তি ফি’র বিনিময়ে এমন ব্যক্তিদের সামনে নগ্ন হয়ে শারীরিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেন আয়োয়ামা। তবে অবশ্যই তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন না। তাকে শুধু নারী দেহের প্রতি তার দায়িত্ব সম্পর্কে বোঝান।
রিপোর্টে ইরি তোমিতা (৩২) নামে এক যুবতীর কথা বলা হয়েছে। তার বাস টোকিওর ইবিসু’তে। তিনি ফরাসি একটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাবে চাকরি করেন। ভালো ফরাসি ভাষা বলতে পারেন। আছে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি। তিনি কাজে মনোযোগ দেয়ার জন্য যেকোনো রোমান্টিক বা প্রেমময় সম্পর্ক এড়িয়ে চলেন। ইরি তোমিতা বলেন, তিন বছর আগে এক বয়ফ্রেন্ড আমাকে  প্রোপোজ করেছিল। আমি তা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, আমার মনে হয়েছিল আমাকে আমার চাকরির প্রতি বেশি যত্নবান হতে হবে। তারপর আমি প্রেমের আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। তবে আমি সচেতন হয়ে উঠেছি যখন আমার সামনে ভবিষ্যতের চিন্তা এলো। তিনি বলেন, জাপানে একজন যুবতী যখনই বিয়ে করে ফেলেন তখনই তার পদোন্নতির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আর যখন একটি সন্তানের মা হন ওই নারী তখন তার কাছে সবকিছু ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় একজন নারীকে চাকরিতে রিজাইন করতে হয়। তখন তাকে হয়ে পড়তে হয় একজন গৃহবধূ বা হাউজওয়াইফ। তার কোনো ব্যক্তিগত আয় থাকে না। আমার মতো একজন নারীর এ পথটা বেছে নেয়ার কথা নয়।
গার্ডিয়ান লিখেছে, জাপানের শতকরা ৭০ ভাগ নারী তাদের প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার পর চাকরি ছেড়ে দেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এরই মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসমতার দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ দেশের মধ্যে জাপানকে রেখেছে। এক্ষেত্রে সামাজিকতাও সহায়ক নয়। বিবাহিত ও কর্মজীবী নারীদেরকে মাঝে মাঝে ‘ডেভিল ওয়াইভস’ বা অশুভ স্ত্রী হিসেবে দেখা হয়। তাই প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সম্প্রতি কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নত করে এবং ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণকে উৎসাহী করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তোমিতা বলেছেন, তিনি যদি একই সঙ্গে একজন বিবাহিত স্ত্রী এবং একজন মা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন তাহলে নাটকীয়ভাবে তার উন্নতি ঘটতো। তিনি বলেন, আমার একটা গ্রেট জীবন আছে। মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আমি বাইরে যাই। তারা আমার মতোই চাকরিজীবী। আমরা ফ্রেঞ্চ বা ইতালিয়ান রেস্তরাঁয় যাই। ইচ্ছে হলেই স্টাইল করা পোশাক কিনি। ছুটি কাটাতে যাই। এখন আমি আমার স্বাধীনতাকে ভীষণ পছন্দ করছি। কখনো কখনো বার-এ রাত কাটান তোমিতা। তবে সেখানে যৌনতাকে অগ্রাধিকার দেন না তিনি। তিনি বলেন, অফিসে অনেক বিবাহিত পুরুষ আমাকে বাইরে যাওয়ার আহ্বান জানান। তারা মনে করেন, আমি অবিবাহিত। তাই আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাবো। এটা খুব বিরক্তিকর। আমি অন্যের দ্বারা বিরক্ত হতে চাই না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

যৌনতায় আগ্রহ হারাচ্ছেন জাপানের যুবক-যুবতীরা

আপডেট টাইম : ১২:১৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্ক ঃ  শারীরিক আকর্ষণ হারাচ্ছেন জাপানের তরুণ, যুব প্রজন্ম। ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী জাপানি যুবতীদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার আগ্রহ নেই বললেই চলে। পুরুষদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশের বেশির অবস্থা একই। সাংবাদিক অ্যাবিগিল হ্যারোথের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব বিষয়। আর এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে লন্ডনের অভিজাত পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, যৌন জীবনের সম্পর্ক বিষয়ে পরামর্শ দেন আই আয়োয়ামা নামে একজন কাউন্সেলর। তিনি টোকিওর একটি তিনতলা ভবনে তার কাজ চালিয়ে যান। জাপানি ভাষায় তার নামের প্রথম অংশের অর্থ হলো ভালোবাসা। এখন থেকে ১৫ বছর আগে তিনি ছিলেন কুইন আয়োয়ামা বা ভালোবাসার রাণী। তিনি নারী-পুরুষের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করতে স্বাভাবিক সবই করতেন। এমনকি একজন যুবতীকে আকর্ষণীয় করে তুলতে তার বিশেষ বিশেষ অঙ্গসজ্জা করে দিতেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে তার কাজ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। এখন তার বয়স ৫২ বছর। জাপানে শুরু হয়েছে শারীরিক আকর্ষণহীনতা। ৪০ বছরের নিচে বয়স এমন জাপানির শারীরিক আকর্ষণ বা শারীরিক সম্পর্কের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। লাখ লাখ যুবক, যুবতী আছেন তারা এমনকি ডেটিং পর্যন্ত করছেন না। তারা যৌন জীবন নিয়েও ভাবিত নন। এমন যুবক-যুবতীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এ প্রবণতার নাম দেয়া হয়েছে ‘সেলিবেসি সিনড্রোম’। সরকার এটাকে জাতীয় পর্যায়ে একরকম মহামারী হিসেবে দেখছে। এরই মধ্যে এমনিতেই বিশ্বে সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। এর জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬০ লাখ, যা গত এক দশক ধরে সঙ্কুচিত হচ্ছে। এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে এ সংখ্যা ২০৬০ সালে এক-তৃতীয়াংশে এসে দাঁড়াবে। এ জন্য দেশ কঠিন এক সংকটে পড়তে যাচ্ছে। তাই আয়োয়ামা মনে করেন, এক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে। তিনি যে ভবনে বসেন তার বাইরে লেখা ‘ক্লিনিক’। তিনি ১৯৯০-এর দশকে উত্তর কোরিয়া সফর করেছেন। সে সময়কার একজন শীর্ষ জেনারেলকে তিনি কিভাবে শাস্তি দিয়েছেন তাও শেয়ার করেছেন। তার প্রথম কাজ হলো তার কাছে যাওয়া ক্লায়েন্টকে উৎসাহিত করা। ক্লায়েন্টরা যাতে নিজের শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ না করেন সে বিষয়ে উৎসাহ দেন তিনি। জাপানে সিঙ্গেল মানুষ বা অবিবাহিত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড গড়েছে। ২০১১ সালে এ বিষয়ে একটি জরিপ চালানো হয়। তাতে দেখা যায়, জাপানে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে শতকরা ৬১ ভাগই অবিবাহিত। নারীদের মধ্যে এ হার শতকরা ৪৯। এমনকি এসব যুবক-যুবতী কোনো প্রেমের সম্পর্কেও যুক্ত নন। বিগত ৫ বছরের তুলনায় এ হার শতকরা ১০ ভাগ বেশি। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ বছরের নিচে যেসব যুবক বা যুবতী আছেন তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ কখনোই ডেটিং বা প্রেম করেন নি। সমকামী সম্পর্কের ঘটনা তো নেই-ই। অর্থাৎ জাপানে যুবক-যুবতীরা ভালোবাসা বা যৌনজীবন সম্পর্কে উদাসীন। এক্ষেত্রে ধর্মীয় কোনো বিধিনিষেধ নেই। এ বছরের শুরুর দিকে জাপানের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সংস্থা জেএফপিএ জরিপ চালিয়ে দেখতে পেয়েছে যে, নারীদের মধ্যে ১৬ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে বয়স যাদের তারা মোটেও যৌন সম্পর্কে আগ্রহী নয়। আয়োয়ামা বলেন, তার কাছে যেসব মানুষ আসেন তাদের অনেকেই গভীরভাবে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। কেউ কেউ জীবনসঙ্গী খোঁজেন। আবার অনেকেই অবিবাহিত থাকতে থাকেন। দু’একজন আছেন যারা স্বাভাবিক ভালোবাসা বা বিয়ে করতে চান। তিনি বলেন, জাপানে এখনো টিকে আছে সেই ধারা- যেখানে স্বামী হবেন ভালো বেতনভোগী আর স্ত্রী থাকবেন বাসায়।
সরকারিভাবে যে সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে তাও কোনো সহায়ক হিসেবে কাজ করছে না। যেকোনো বছরের তুলনায় ২০১২ সালে খুবই কম সংখ্যক শিশু জন্ম নিয়েছে সেখানে। এটাই এক নতুন রেকর্ড গড়েছে। তাই জেএফপিএ’র প্রধান কুনিও কিতামুরা বলেছেন, জনসংখ্যাতত্ত্বে এতটাই সংকট সৃষ্টি হয়েছে যে, এতে জাপান একরকম অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। যুদ্ধপরবর্তী প্রজন্মের মতো ৪০ বছরের নিচে বয়সী জাপানিরা বেশি কাজ করতে চায় না। ২০ বছরের অর্থনৈতিক স্থবিরতার পর জাপানে বড় ধরনের সামাজিক বিবর্তন হতে যাচ্ছে। ২০১১ সালের ভূমিকম্প, সুনামি ও তেজস্ক্রিয় পদার্থের গলনের ফলে যে প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে জাপান। তবে তারা পশ্চাৎদিকে ধাবিত হচ্ছে না। আয়োয়ামা বলেন, নারী এবং পুরুষরা আমাকে বলেন, তারা ভালোবাসার কোনো কারণ খুঁজে পান না। তারা মনে করেন না, ভালোবাসা কোনো ভালো কিছুর দিকে ধাবিত করবে। এই জাপানে ভালোবাসা, প্রেম খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিয়ে হয়ে পড়েছে খুব বেশি অনাকর্ষণীয় বিষয়। পুরুষরা খুব বেশি ক্যারিয়ারহীনতার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তাদের আর্থিক সক্ষমতা কমেছে। সেখানে লাইফটাইম চাকরির নিশ্চয়তা কমে গেছে। উল্টোটা ঘটেছে নারীদের ক্ষেত্রে। তারা বেশি বেশি আত্মনির্ভরশীল ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠছেন। তবে কর্মক্ষেত্রে ও বাড়িতে রয়েছে রক্ষণশীল আবহ। আয়োয়ামা বলেন, জাপানের বড় বড় শহরগুলোতে নারী-পুরুষের মাঝ থেকে যৌন আকাঙ্ক্ষা উবে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে দীর্ঘ সময় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় না। তারা এক্ষেত্রে বেছে নেন ক্যাজুয়াল সেক্স। এক্ষেত্রে তাদের ভরসা হয় অনলাইন পর্নোগ্রাফি, ভার্চুয়াল গার্লফ্রেন্ড, অ্যানিমেশন করা কার্টুন। জাপানে এখন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ অবিবাহিত যুবক, যুবতী আছেন। তারা বর্তমানে বসবাস করেন পিতা-মাতাদের সঙ্গে। এর মধ্যে আবার প্রায় ৩০ লাখের বয়স ৩৫ বছরের ওপরে।  এমন অনেক পুরুষ যান আয়োয়ামার কাছে। তাদের একজন ৩০ বছর বয়স্ক। তিনি কুমার। তিনি কোনো নারী রোবট না দেখা পর্যন্ত তার মধ্যে পুরুষত্ব জাগে না। তার বিষয়ে আয়োয়ামা বলেন, তাকে আমি মানব শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকর্ম বোঝাই। বাড়তি ফি’র বিনিময়ে এমন ব্যক্তিদের সামনে নগ্ন হয়ে শারীরিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেন আয়োয়ামা। তবে অবশ্যই তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন না। তাকে শুধু নারী দেহের প্রতি তার দায়িত্ব সম্পর্কে বোঝান।
রিপোর্টে ইরি তোমিতা (৩২) নামে এক যুবতীর কথা বলা হয়েছে। তার বাস টোকিওর ইবিসু’তে। তিনি ফরাসি একটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাবে চাকরি করেন। ভালো ফরাসি ভাষা বলতে পারেন। আছে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি। তিনি কাজে মনোযোগ দেয়ার জন্য যেকোনো রোমান্টিক বা প্রেমময় সম্পর্ক এড়িয়ে চলেন। ইরি তোমিতা বলেন, তিন বছর আগে এক বয়ফ্রেন্ড আমাকে  প্রোপোজ করেছিল। আমি তা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, আমার মনে হয়েছিল আমাকে আমার চাকরির প্রতি বেশি যত্নবান হতে হবে। তারপর আমি প্রেমের আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। তবে আমি সচেতন হয়ে উঠেছি যখন আমার সামনে ভবিষ্যতের চিন্তা এলো। তিনি বলেন, জাপানে একজন যুবতী যখনই বিয়ে করে ফেলেন তখনই তার পদোন্নতির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আর যখন একটি সন্তানের মা হন ওই নারী তখন তার কাছে সবকিছু ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় একজন নারীকে চাকরিতে রিজাইন করতে হয়। তখন তাকে হয়ে পড়তে হয় একজন গৃহবধূ বা হাউজওয়াইফ। তার কোনো ব্যক্তিগত আয় থাকে না। আমার মতো একজন নারীর এ পথটা বেছে নেয়ার কথা নয়।
গার্ডিয়ান লিখেছে, জাপানের শতকরা ৭০ ভাগ নারী তাদের প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার পর চাকরি ছেড়ে দেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এরই মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসমতার দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ দেশের মধ্যে জাপানকে রেখেছে। এক্ষেত্রে সামাজিকতাও সহায়ক নয়। বিবাহিত ও কর্মজীবী নারীদেরকে মাঝে মাঝে ‘ডেভিল ওয়াইভস’ বা অশুভ স্ত্রী হিসেবে দেখা হয়। তাই প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সম্প্রতি কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নত করে এবং ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণকে উৎসাহী করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তোমিতা বলেছেন, তিনি যদি একই সঙ্গে একজন বিবাহিত স্ত্রী এবং একজন মা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন তাহলে নাটকীয়ভাবে তার উন্নতি ঘটতো। তিনি বলেন, আমার একটা গ্রেট জীবন আছে। মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আমি বাইরে যাই। তারা আমার মতোই চাকরিজীবী। আমরা ফ্রেঞ্চ বা ইতালিয়ান রেস্তরাঁয় যাই। ইচ্ছে হলেই স্টাইল করা পোশাক কিনি। ছুটি কাটাতে যাই। এখন আমি আমার স্বাধীনতাকে ভীষণ পছন্দ করছি। কখনো কখনো বার-এ রাত কাটান তোমিতা। তবে সেখানে যৌনতাকে অগ্রাধিকার দেন না তিনি। তিনি বলেন, অফিসে অনেক বিবাহিত পুরুষ আমাকে বাইরে যাওয়ার আহ্বান জানান। তারা মনে করেন, আমি অবিবাহিত। তাই আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাবো। এটা খুব বিরক্তিকর। আমি অন্যের দ্বারা বিরক্ত হতে চাই না।