হাওর বার্তা ডেস্কঃ টানা বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বেড়ে বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দুটি উপজেলায় দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া উত্তরের তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমে লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পূর্বাঞ্চল সিলেটে বন্যায় প্লাবিত হওয়া অঞ্চলগুলোর পানি এখনও কমেনি। সিলেটের বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যে বলা হয়েছে, মাতামুহুরী নদী লামা ও চিরিঙ্গি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লামা পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। যমুনা নদীর পানি আরও তিন দিন বৃদ্ধি পেতে পারে। আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, তিন দিনের টানা বর্ষণে বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার প্রধান সড়ক পানিতে তালিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বান্দরবানের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। পাহাড়ধসের কারণে বান্দরবানের সঙ্গে রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। বান্দরবানে প্রবল বর্ষণে সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে জেলা শহরের আর্মিপাড়া, ইসলামপুর, বাসস্টেশন এলাকার নিম্নাঞ্চল। লামা বাজার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপজেলা অফিস, থানা ভবনসহ অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতও পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। এসব এলাকার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তিন দিনের ভারি বর্ষণে পাহাড়ধসে লামায় অর্ধশত বাড়িঘর মাটির নিচে চাপা পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে কেউ হতাহত খবর পাওয়া যায়নি। বন্যায় ঘরবাড়ি ও হাটবাজার ডুবে যাওয়ায় খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ২০ দিনের ব্যবধানে লামা বাজারে পানি ওঠায় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা দুর্দশায় পড়েছে। দুর্গতরা বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিবার-পরিজনসহ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লোকজনের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে দুর্গতরা জানিয়েছে। আলীকদমে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক মানুষ। মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করেছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম জানান, গত তিন দিনের ভারি বর্ষণে লামা পৌর এলাকার বাজার ৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে তিন শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপজেলা অফিস, থানা ভবনসহ অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতও তালিয়ে গেছে। উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। দুর্গতদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ত্রাণ, নিরাপদ পানি ও শুকনো খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জানান, বন্যাকবলিতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়নগুলোতে মাইকিং করে জনসাধারণকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নায়িরুজ্জামান জানান, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিস্থিতির অবনতি হলে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হবে। চকরিয়া সংবাদদাতা জানান, টানা তিন দিনের ভারি বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রায় ২০ হাজার একর চিংড়ি ঘেরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। কয়েক কোটি টাকার মত্স্য সম্পদ ভেসে যাওয়ায় চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে থাকায় উপজেলার সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। আমাদের গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় বসবাসরত মানুষজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এই বাঁধের ১৫টি পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানি বৃদ্ধির নদী তীরবর্তী এলাকা এবং নিচু অংশগুলো তলিয়ে যাওয়ায় উঠতি ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, জেলায় বন্যা পরিস্থিতির গতকাল আরও উন্নতি হয়েছে। কমে গেছে তিস্তা ও ধরলার প্রবল স্রোত। বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করলেও নদী তীরবর্তী এলাকায় এখনও কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ধুবনি, ভূতরাম ও ইটাপোতা গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। সিলেট অফিস জানায়, জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। তবে হাওর এলাকার পানি স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে পানিবন্দি সিলেটের ছয় উপজেলার সাধারণ মানুষ এখনও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বন্যাকবলিতদের মধ্যে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, আমাশয়, ভাইরাস জ্বরসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও জকিগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার কারণে এসব উপজেলার আড়াই শতাধিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বেশিরভাগ সড়ক পানির নিচে। এসব উপজেলার অফিসে পানিতে তলিয়ে গেছে। দক্ষিণ সুরমা, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের অনেক অংশে বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব উপজেলার ৫ লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার জানান, এসব এলাকায় ৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৮৯টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
সংবাদ শিরোনাম
উত্তরে উন্নতি পূর্বাঞ্চলে অপরিবর্তিত
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ১০:২৭:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০১৭
- ৩২৮ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ