ঢাকা ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জিএসটির প্রতিবাদে উত্তাল ভারত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৫:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুলাই ২০১৭
  • ৩৭০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  জিএসটির প্রতিবাদে গোটা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ব্যবসায়ীরা সোচ্চার হয়ে উঠেছে। গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স জিএসটি চালু হওয়ার বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছেন তারা। কলকাতাসহ একাধিক রাজ্যে ধর্মঘটে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে দেশটির কর ব্যবস্থায় আসতে চলেছে বড়সড় পরিবর্তন। এদিনই মধ্যরাতে সংসদের সেন্ট্রাল হলে বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করে জিএসটি বা গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স চালু করার কথা ঘোষণা করা হবে। তবে জিএসটি চালু হওয়া নিয়ে অনেকদিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, এই নয়া কর চালু হলে একাধিক সমস্যায় পড়তে হবে ব্যবসায়ীদের। লাভের অঙ্ক তো কমবেই, পাশাপাশি মাসে তিনবার ব্যবসার আয়-ব্যয়ের সমস্ত হিসেব অনলাইনে তুলে ধরতে হবে সরকারের সামনে। ক্ষুদ্র বস্ত্র ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা এখনও প্রযুক্তিগতভাবে অনেকটাই পিছিয়ে। ফলে গোটা বিষয়টি তাদের কাছে অত্যন্ত জটিল হয়েই দাঁড়াচ্ছে। আর সেই কারণেই প্রতিবাদে সরব তারা। সকাল থেকেই যাদবপুর থেকে বড়বাজার, চাঁদনি চক থেকে নিউমার্কেটের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। নিউমার্কেটে প্রতিবাদ মিছিলে পা মিলিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু দেশটির কলকাতাই নয়, দিলি­, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটের সুরাটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জিএসটির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান তারা। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, গোটা দেশে এই কর ব্যবস্থা চালু হলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হবেন। খবরে বলা হয়, ভারতে পণ্য ও পরিষেবা করের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে শামিল হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা জিএসটি নামে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই কর কাঠামো গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয়। সংসদের সেন্ট্রাল হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে জিএসটি’র সূচনা। সংসদের সেন্ট্রাল হলে জিএসটি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, বিএসপি, বামদলসহ বিভিন্ন বিরোধী দল। সমাজবাদী পার্টি জিএসটিকে কালা আইন বলে অভিহিত করে বলেছে, দেশে আবারও ক্রীতদাস প্রথা ফিরে আসবে। এদিকে, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু সংসদের অনুষ্ঠানে প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের না যাওয়ার সিদ্ধান্তকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছেন। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, আমরা জিএসটি’র সমর্থক। কিন্তু, মোদি সরকার যে জিএসটি নিয়ে এসেছে এবং যা নিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে তাকে আমরা সমর্থন করি না। এটা গ্রেট সেলফ প্রোমোটিং তামাশা। জনগণের ওপর বোঝা চাপানো হচ্ছে। ভারত হবে সেই দেশ যেখানে সবচেয়ে বেশি হারে জিএসটি বসবে। লোকসভার কংগ্রেস নেতা মলি­কার্জুন খাড়গে ওই সংসদের অনুষ্ঠানকে মধ্যরাতের নাটক বলে অভিহিত করেছেন। সিপিআইএম এমপি ও পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম সংসদে জিএসটি চালুর অনুষ্ঠানকে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেছেন। জিএসটি চালু করা প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য- অপ্রয়োজনীয়ভাবে তড়িঘড়ি করায় নোট বাতিলের পর ফের মহাকাব্যিক ভুল করছে কেন্দ্রীয় সরকার। তৃণমূল মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন গোটা বিষয়টিকেই ‘নাটক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আজ বলেন, ‘বহুবছর ধরে জিএসটি’র বিরোধিতা করেছে বিজেপি। সংসদেও তারা বিরোধিতা করেছে। আর এখন ওরা জিএসটি’র সমর্থক। মেগা ইভেন্টের নাটক বন্ধ করে জিএসটি চালু করার সময় পিছিয়ে দেয়া হোক। গত শুক্রবার মধ্যরাতে ভারতীয় পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জিএসটির বাস্তবায়ন ঘোষণা করেন দেশটির প্রণব মুখার্জি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এসময় প্রণব মুখার্জি নতুন এ কর ব্যবস্থাকে ভারতীয় গণতন্ত্রের পরিপক্বতা ও বিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন। নরেন্দ্র মোদি বলেন, অনেক বছর পরে ভারতে নতুন ধারার অর্থনীতি ও ফেডারেল ব্যবস্থার নতুন শক্তির প্রকাশ ঘটেছে। আর এজন্য পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলের বিকল্প নেই। এ জায়গাটি ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সাক্ষী। আজ এখান থেকেই ভারতের নতুন ভবিষ্যতের সূচনা হলো। মধ্যরাতের এ আয়োজনে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া, উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, লোকসভার স্পিকার সুমিতা মহাজন, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, জিএসটি কাউন্সিলের সদস্যসহ প্রায় আঁ শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংসহ প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। জিএসটির তীব্র সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস ছাড়াও পশ্চিম বঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস, বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), তামিলনাড়ুর ডিএমকে এবং বাম দলগুলো এ আয়োজন বয়কট করেছে। জিএসটিকে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী করনীতি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কর কাঠামোয় ৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ ও ২৮ শতাংশ করসীমায় ধরা হয়েছে পণ্য ও সেবা খাতকে। এনডিটিভি, পিটিআই, টাইমস অফ ইনডিয়া।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

জিএসটির প্রতিবাদে উত্তাল ভারত

আপডেট টাইম : ০৯:৪৫:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  জিএসটির প্রতিবাদে গোটা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ব্যবসায়ীরা সোচ্চার হয়ে উঠেছে। গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স জিএসটি চালু হওয়ার বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছেন তারা। কলকাতাসহ একাধিক রাজ্যে ধর্মঘটে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে দেশটির কর ব্যবস্থায় আসতে চলেছে বড়সড় পরিবর্তন। এদিনই মধ্যরাতে সংসদের সেন্ট্রাল হলে বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করে জিএসটি বা গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স চালু করার কথা ঘোষণা করা হবে। তবে জিএসটি চালু হওয়া নিয়ে অনেকদিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, এই নয়া কর চালু হলে একাধিক সমস্যায় পড়তে হবে ব্যবসায়ীদের। লাভের অঙ্ক তো কমবেই, পাশাপাশি মাসে তিনবার ব্যবসার আয়-ব্যয়ের সমস্ত হিসেব অনলাইনে তুলে ধরতে হবে সরকারের সামনে। ক্ষুদ্র বস্ত্র ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা এখনও প্রযুক্তিগতভাবে অনেকটাই পিছিয়ে। ফলে গোটা বিষয়টি তাদের কাছে অত্যন্ত জটিল হয়েই দাঁড়াচ্ছে। আর সেই কারণেই প্রতিবাদে সরব তারা। সকাল থেকেই যাদবপুর থেকে বড়বাজার, চাঁদনি চক থেকে নিউমার্কেটের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। নিউমার্কেটে প্রতিবাদ মিছিলে পা মিলিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু দেশটির কলকাতাই নয়, দিলি­, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটের সুরাটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জিএসটির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান তারা। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, গোটা দেশে এই কর ব্যবস্থা চালু হলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হবেন। খবরে বলা হয়, ভারতে পণ্য ও পরিষেবা করের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে শামিল হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা জিএসটি নামে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই কর কাঠামো গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয়। সংসদের সেন্ট্রাল হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে জিএসটি’র সূচনা। সংসদের সেন্ট্রাল হলে জিএসটি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, বিএসপি, বামদলসহ বিভিন্ন বিরোধী দল। সমাজবাদী পার্টি জিএসটিকে কালা আইন বলে অভিহিত করে বলেছে, দেশে আবারও ক্রীতদাস প্রথা ফিরে আসবে। এদিকে, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু সংসদের অনুষ্ঠানে প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের না যাওয়ার সিদ্ধান্তকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছেন। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, আমরা জিএসটি’র সমর্থক। কিন্তু, মোদি সরকার যে জিএসটি নিয়ে এসেছে এবং যা নিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে তাকে আমরা সমর্থন করি না। এটা গ্রেট সেলফ প্রোমোটিং তামাশা। জনগণের ওপর বোঝা চাপানো হচ্ছে। ভারত হবে সেই দেশ যেখানে সবচেয়ে বেশি হারে জিএসটি বসবে। লোকসভার কংগ্রেস নেতা মলি­কার্জুন খাড়গে ওই সংসদের অনুষ্ঠানকে মধ্যরাতের নাটক বলে অভিহিত করেছেন। সিপিআইএম এমপি ও পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম সংসদে জিএসটি চালুর অনুষ্ঠানকে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেছেন। জিএসটি চালু করা প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য- অপ্রয়োজনীয়ভাবে তড়িঘড়ি করায় নোট বাতিলের পর ফের মহাকাব্যিক ভুল করছে কেন্দ্রীয় সরকার। তৃণমূল মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন গোটা বিষয়টিকেই ‘নাটক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আজ বলেন, ‘বহুবছর ধরে জিএসটি’র বিরোধিতা করেছে বিজেপি। সংসদেও তারা বিরোধিতা করেছে। আর এখন ওরা জিএসটি’র সমর্থক। মেগা ইভেন্টের নাটক বন্ধ করে জিএসটি চালু করার সময় পিছিয়ে দেয়া হোক। গত শুক্রবার মধ্যরাতে ভারতীয় পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জিএসটির বাস্তবায়ন ঘোষণা করেন দেশটির প্রণব মুখার্জি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এসময় প্রণব মুখার্জি নতুন এ কর ব্যবস্থাকে ভারতীয় গণতন্ত্রের পরিপক্বতা ও বিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন। নরেন্দ্র মোদি বলেন, অনেক বছর পরে ভারতে নতুন ধারার অর্থনীতি ও ফেডারেল ব্যবস্থার নতুন শক্তির প্রকাশ ঘটেছে। আর এজন্য পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলের বিকল্প নেই। এ জায়গাটি ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সাক্ষী। আজ এখান থেকেই ভারতের নতুন ভবিষ্যতের সূচনা হলো। মধ্যরাতের এ আয়োজনে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া, উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, লোকসভার স্পিকার সুমিতা মহাজন, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, জিএসটি কাউন্সিলের সদস্যসহ প্রায় আঁ শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংসহ প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। জিএসটির তীব্র সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস ছাড়াও পশ্চিম বঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস, বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), তামিলনাড়ুর ডিএমকে এবং বাম দলগুলো এ আয়োজন বয়কট করেছে। জিএসটিকে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী করনীতি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কর কাঠামোয় ৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ ও ২৮ শতাংশ করসীমায় ধরা হয়েছে পণ্য ও সেবা খাতকে। এনডিটিভি, পিটিআই, টাইমস অফ ইনডিয়া।