পাহাড়ে ত্রাণের জন্য হাহাকার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম, বান্দরবানে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। অনেকে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। এদিকে পাহাড় ধসের পাঁচদিন পর রাঙ্গামাটির জুড়াছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকায় মাটিচাপা পড়া পাহাড়ি দুই তরুণ-তরুণীর লাশ পাওয়া গেছে। রাঙ্গামাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত গতকাল সকালে জুড়াছড়ির দুমদুম্যা ইউনিয়ন থেকে দু’জনের লাশ উদ্ধারের কথা সাংবাদিকদের জানান। নিহতরা হলেন- তিয়ং চাকমা (১৭) ও চিগেচোথা চাকমা (১৭)। অন্যদিকে গতকাল পর্যন্ত এই পার্বত্য জেলাটিতে পাহাড় ধসে মৃতের সংখ্যা ১১৩ জনে দাঁড়াল। সব মিলিয়ে এই দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৯ জন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি এবং অধিক মূল্য দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ এসব আদালত পরিচালনা করছেন। শুক্রবার বিকাল থেকে রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার, বনরূপা বাজার, তবলছড়ি, বাজার, ভেদভেদী বাজারের বিভিন্ন শাক-সবজির দোকান, মুদির দোকানগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর অপরাধে  বিক্রেতাদের আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি  বিনাশ্রশ কারাদণ্ড প্রদান করছেন। এর ফলে গত একদিনের ব্যবধানে রাঙ্গামাটির কাঁচামাল ও মুদি দোকানের বিভিন্ন পণ্যেও মূল্য ক্রেতা  সাধারনের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ জানিয়েছেন রাঙ্গামাটির বিভিন্ন বাজারগুলোতে ভোক্তা সাধারণের সুবিধার্থে ৪টি অভিযোগ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ভোক্তারা বাজারের দ্রব্যমূল্যেও বিষয়ে কোনরূপ অভিযোগ করলে পরবর্তীতে প্রমাণ সহকারে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। টানা বর্ষণে পানি বাড়ায় কাপ্তাই হ্রদের সব গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রীর খাদ্য বিতরণ: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি গতকাল রাঙ্গামাটি শহরের ৪টি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে আশ্রিতদের মাঝে খাবার এবং পানি বিতরণ করেছেন। এই সময় প্রতিমন্ত্রী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দুর্যোগের ভয়াবহতা ধৈর্য্যের সঙ্গে মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন দুর্গতদের পাশে সরকার এবং আওয়ামী লীগ আছে এবং থাকবে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদের সকল প্রকার সহায়তা প্রদানসহ তাদের পুনর্বাসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি ঘোষ, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসানসহ জেলা পরিষদের সদস্যগণ, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এই সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গামাটির বিটিভি উপকেন্দ্রে, রাঙ্গামাটি বেতার, বিএডিসি, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এর আশ্রয়কেন্দ্র সমূহ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালীন প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সৌজন্যে ২ সহস্রাধিক আশ্রিত লোকজনের মাঝে খাবার ও পানি সরবরাহ করেন। আজ রাতেও জেলা পরিষদের উদ্যোগে রাঙ্গামাটির  ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের মাঝে রাতের খাবার এবং পানি সরবরাহ করা  হবে।
চট্টগ্রামে ত্রাণ পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা: পাহাড়ধসের ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, বিপর্যয় এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, খেয়ে না খেয়ে এখন তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম করতে হচ্ছে। কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ডাল-ভাত খেয়ে কোনোভাবে রাত যাপন করার কথা জানিয়েছেন।
প্রশাসন জানিয়েছে, রাঙ্গামাটিতে ইতিমধ্যে সরকারের দেয়া ৩৫ লাখ টাকা নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আর চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশে ত্রাণ হিসেবে দেয়া হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।
যারা আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন, তারা জানিয়েছেন ত্রাণের টাকা ও চাল কিছুই এখনো হাতে আসেনি। এই অবস্থায় কী খেয়ে বাঁচবেন সামনের দিনগুলোয় তা নিয়ে তারা ভীষণ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
রাস্তা মেরামতে সেনাবাহিনী: ত্রাণ কার্যক্রম, চিকিৎসা সেবাসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সড়ক মেরামতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গতকাল সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে, আগামী তিন দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক মাঝারি ধরনের যান চলাচলের উপযোগী হবে। ঘাগরা ও মানিকছড়ির মধ্যবর্তী স্থানের রাস্তাটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই সড়ক মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর