হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নেতাদের নিয়ে দুই জোটের বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি উত্থানের চেষ্টা করছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এ উদ্দেশে দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বৃহস্পতিবার চা-চক্রের মাধ্যমে মতবিনিময় সভা করেছেন তিনি। নাগরিকদের প থেকে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে নাগরিকদের পক্ষ থেকে ‘জাতীয় সনদ’ তৈরির যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে চা-চক্রে উপস্থিত নেতাদের সমর্থন থাকবে বলেও জানিয়েছেন ড. কামাল হোসেন।
ড. কামাল বলেন, ‘১৯৫২ সালে আমরা কতগুলো মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে এসেছিলাম। এটা সারা জাতির মধ্যে নাড়া দিয়েছিল। এবারও আমাদের ন্যূনতম কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হতে হবে। তাহলে ১৯৫২ সালের ঐকমত্যে যেমন ১৯৫৪ সালে আমাদের বিজয় এনেছিল। এবারও আমার বিজয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘অন্যায় মাথা পেতে না নেওয়া বাংলার চরিত্র। আমরা কখনই অন্যায়ের কাছে মাথা পেতে নেইনি। স্বৈরাচাররা ভাবে, জনগণকে ভয় দেখালেই তারা চুপ হয়ে যাবে। কিন্তু স্বৈরাচাররা জানে না, ব্যতিক্রম ছাড়া তারা কখনই টিকে থাকতে পারে না।’
ড. কামাল বলেন, ‘আমার জীবন থেকে রিটায়ার্ড করার সময় এসেছে কিন্তু আমি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে পারি না। আমাদের দেখে অনেকে বলতে পারেন, এটা ১৯৫২ না, এটা ২০১৫। আমি বলব, ২০১৫ সালের বাংলাদেশ ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। এই দেশ কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে।’
এ সময় ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘একদলীয় শাসন যেমন আমরা ঘৃণা করি, তেমনি এক ব্যক্তির শাসনও আমরা ঘৃণা করি। এ থেকে মুক্তির জন্য নাগরিকরা জাতীয় সনদ তৈরি করছে। সেখানে আমাদের সমর্থন থাকবে।’
তবে ২০১২, ১৩, ১৪ সালের মতো সরাসরি কোনও রাজনৈতিক-জোট গঠনের ডাক দেননি। এবার ‘ন্যূনতম মৌলিক সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় সনদ তৈরির’ প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সমমনা রাজনীতিকদের চা চক্রে নিমন্ত্রণ করে উপস্থিত নেতাদের তিনি এ প্রস্তাব দেন। ঐক্য-প্রস্তাবে অংশগ্রহণকারী নেতারা তাৎক্ষণিক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও তারা বরাবরের মতো চা-চক্র থেকে বের হয়েই সটকে পড়তে শুরু করেছেন। তবে সরাসরি চা-চক্রে না গেলেও ড. কামালের সরকারবিরোধী নতুন উদ্যোগে খুশি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। শুক্রবার বিএনপি ও জোটের ৭ শীর্ষ নেতা ও চা-চক্রে অংশ নেওয়া কয়েক জন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপ করে এমন আভাস মিলেছে।
এদিকে, ড. কামাল হোসেনের জাতীয় সনদ তৈরির আহ্বানে অন্য দলগুলোর সাড়া যেমনই হোক না কেন, বিএনপি বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার মতে, সরকারের বিরুদ্ধে অনেকটা চুপচাপ কাটছে সময়টা। ঠিক এমন ক্রান্তিকালে ড. কামালের মুখ খোলার বিষয়টি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের জন্য একটি বিশেষ বার্তা। এ কারণে বিএনপিও মনে করছে, আগামী দিনের সরকারবিরোধী মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবির আন্দোলনে রাজপথে স্বজন হিসেবে পাওয়া যাবে এক সময়ের আওয়ামী লীগের এই নেতাকে।
তবে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি উত্থানের চেষ্টা ড. কামাল হোসেনের এই পথম নয়। প্রতিবারই ড. কামাল হোসেন ঐক্যের ডাক দেন। এরপরই বিদেশ চলে যান। এ কারণে প্রতিবারই ঐক্যচেষ্টা ব্যহত হয়েছে। এবারও হবে কি না, কে জানে। এর আগে বিকল্প ধারা সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে বৃহৎ ঐক্য করার চেষ্টা করেছে সেলিম। ২০১২ সালের ২১ অক্টোবরে হোটেল রেডিসনে এবং ২০১৩ সালে নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদের শেষ দিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নির্বাচনের রূপরেখা তৈরি করে সক্রিয় হওয়ার কথা বলেছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল। যদিও ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর ড. কামালকে বাদ দিয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট- এনডিএফ গঠন করেন বি. চৌধুরী। ওই জোটে তার সঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-এর (জেএসডি) আসম আবদুর রব যোগ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফের ড. কামাল হোসেন ঐক্যের আওয়াজ তোলেন। তার বেইলি রোডের বাসা ও মতিঝিলের চেম্বারে বৈঠক করেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে। ওই বৈঠকগুলোয় নাগরিক ঐক্য, সিপিবি, বাসদ, জেএসডি অংশ নেয়। পরবর্তী সময়ে এই উদ্যোগও ভেস্তে যায়।