ঢাকা ১০:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোলায় বেড়িবাঁধে ধস, পানিবন্দি অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৩০:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুন ২০১৭
  • ২২৪ বার

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর পানি। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে অবিরাম বর্ষায় জেলার দৌলতখানে রবিবার গভীর রাতে বেড়িবাঁধ ধসে গেছে।

জোয়ারের পানি ঢুকে মনপুরা, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশনের নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের পন্টুন।

ফলে ওই ঘাট দিয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে উভয় পাড়ের শতাধিক যানবাহন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এটি।

স্থানীয়রা জানায়, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ ধসে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধটি ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভোলা ২ আসনের এমপি আলী আজম মুকুলের নির্দেশে দৌলতখান উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বেড়িবাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছেন।

এ ব্যাপারে দৌলতখান উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম খাঁন বলেন, “অস্বাভাবিক পানির কারণে বেড়িবাঁধের ১৬ শতাংশের মধ্যে ১৪ শতাংশই ধসে গেছে। এতে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে পাউবোর এ বেড়িবাঁধটি। যে কোনো সময় সম্পূর্ণ বাঁধটি ভেঙে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জোয়ারের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

হয়েছে। ” তিনি বলেন, “ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধটি রবিবার রাত দেড়টা পর্যন্ত স্থানীয় এমপি আলী আজম মুকুল নিজে উপস্থিত থেকে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছিলেন। ” তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার বলেন, “পাউবোর কোনো বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার কোনো খবর আমরা এখনো পাইনি। ”

এদিকে মনপুরা উপজেলার ১ নম্বর মনপুরা ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজারসংলগ্ন পশ্চিম পাশ এবং হাজিরহাট ইউনিয়নের পূর্ব সোনার চর এলাকায় ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ওই এলাকার চরাঞ্চলের ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। পানিতে নলকূপ ও পুকুর ডুবে যাওয়ায় ওই এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ হাওলাদার জানান, তিনি পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন শেষে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসাননগর ইউনিয়নের হাকিমুদ্দিন লঞ্চঘাট ও বাজারসহ অন্তত পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ঘাটে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ পন্টুনটি নদীর পানিতে ডুবে যায়। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন লঞ্চযাত্রী, বাজার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।

লঞ্চঘাটের দায়িত্বরত ইজারাদার মো, নূরু মিয়া জানান, সরকারিভাবে নতুন পন্টুন স্থাপন না করায় মেঘনার প্রবল স্রোত ও লঞ্চের প্রচণ্ড ধাক্কায় ব্যবহার অনুপযোগী লক্কর-ঝক্কর এ পন্টুনটি এখন ব্যবহার করতে হচ্ছে। হাকিমুদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী নূরে আলম জানান, জোয়ারের পানিতে তার ব্যবসায়ী মালামাল সব ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। তার মতো অনেক ব্যবসায়ীর মালামাল ভিজে গেছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, ওই উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডসংলগ্ন এলাকায় তেঁতুলিয়া নদীর স্রোতের তোড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের প্রায় পাঁচটি স্থানে ধসে যায়। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছোট মানিকা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা। প্রাচীন এ প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, মাদ্রাসাটি একেবারেই নদীর কাছাকাছি এসে পড়েছে।

কুতুবা ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জোবায়েদ জানান, বিষয়টি তিনি পাউবো কর্মকর্তাদেরকে অবহিত করেছেন। বোরহানউদ্দিনের পৌর মেয়র ও ছোট মানিকা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সভাপতি রফিকুল ইসলাম প্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসীকে বাঁচাতে অবিলম্বে তিনি বেড়িবাঁধ সংস্কার করে ব্লকবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

জোয়ারের পানিতে চরফ্যাশনের নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলের ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের পন্টুন। এতে করে ওই ঘাট দিয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের যানবাহন ঠিকমতো ওঠা-নামা করতে পারছে না।

ফলে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে যাত্রী, যান চালক ও শ্রমিকরা। পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে উভয় পাড়ের শতাধিক যানবাহন। এ ব্যাপারে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ফেরির ব্যবস্থাপক আবু আলম বলেন, “আমি বিষয়টি বিআইডাব্লিউটিএ’র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভোলায় বেড়িবাঁধে ধস, পানিবন্দি অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

আপডেট টাইম : ০২:৩০:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুন ২০১৭

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর পানি। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে অবিরাম বর্ষায় জেলার দৌলতখানে রবিবার গভীর রাতে বেড়িবাঁধ ধসে গেছে।

জোয়ারের পানি ঢুকে মনপুরা, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশনের নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের পন্টুন।

ফলে ওই ঘাট দিয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে উভয় পাড়ের শতাধিক যানবাহন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এটি।

স্থানীয়রা জানায়, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ ধসে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধটি ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভোলা ২ আসনের এমপি আলী আজম মুকুলের নির্দেশে দৌলতখান উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বেড়িবাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছেন।

এ ব্যাপারে দৌলতখান উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম খাঁন বলেন, “অস্বাভাবিক পানির কারণে বেড়িবাঁধের ১৬ শতাংশের মধ্যে ১৪ শতাংশই ধসে গেছে। এতে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে পাউবোর এ বেড়িবাঁধটি। যে কোনো সময় সম্পূর্ণ বাঁধটি ভেঙে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জোয়ারের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

হয়েছে। ” তিনি বলেন, “ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধটি রবিবার রাত দেড়টা পর্যন্ত স্থানীয় এমপি আলী আজম মুকুল নিজে উপস্থিত থেকে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছিলেন। ” তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার বলেন, “পাউবোর কোনো বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার কোনো খবর আমরা এখনো পাইনি। ”

এদিকে মনপুরা উপজেলার ১ নম্বর মনপুরা ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজারসংলগ্ন পশ্চিম পাশ এবং হাজিরহাট ইউনিয়নের পূর্ব সোনার চর এলাকায় ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ওই এলাকার চরাঞ্চলের ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। পানিতে নলকূপ ও পুকুর ডুবে যাওয়ায় ওই এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ হাওলাদার জানান, তিনি পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন শেষে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসাননগর ইউনিয়নের হাকিমুদ্দিন লঞ্চঘাট ও বাজারসহ অন্তত পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ঘাটে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ পন্টুনটি নদীর পানিতে ডুবে যায়। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন লঞ্চযাত্রী, বাজার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।

লঞ্চঘাটের দায়িত্বরত ইজারাদার মো, নূরু মিয়া জানান, সরকারিভাবে নতুন পন্টুন স্থাপন না করায় মেঘনার প্রবল স্রোত ও লঞ্চের প্রচণ্ড ধাক্কায় ব্যবহার অনুপযোগী লক্কর-ঝক্কর এ পন্টুনটি এখন ব্যবহার করতে হচ্ছে। হাকিমুদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী নূরে আলম জানান, জোয়ারের পানিতে তার ব্যবসায়ী মালামাল সব ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। তার মতো অনেক ব্যবসায়ীর মালামাল ভিজে গেছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, ওই উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডসংলগ্ন এলাকায় তেঁতুলিয়া নদীর স্রোতের তোড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের প্রায় পাঁচটি স্থানে ধসে যায়। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছোট মানিকা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা। প্রাচীন এ প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, মাদ্রাসাটি একেবারেই নদীর কাছাকাছি এসে পড়েছে।

কুতুবা ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জোবায়েদ জানান, বিষয়টি তিনি পাউবো কর্মকর্তাদেরকে অবহিত করেছেন। বোরহানউদ্দিনের পৌর মেয়র ও ছোট মানিকা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সভাপতি রফিকুল ইসলাম প্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসীকে বাঁচাতে অবিলম্বে তিনি বেড়িবাঁধ সংস্কার করে ব্লকবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

জোয়ারের পানিতে চরফ্যাশনের নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলের ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের পন্টুন। এতে করে ওই ঘাট দিয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের যানবাহন ঠিকমতো ওঠা-নামা করতে পারছে না।

ফলে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে যাত্রী, যান চালক ও শ্রমিকরা। পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে উভয় পাড়ের শতাধিক যানবাহন। এ ব্যাপারে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ফেরির ব্যবস্থাপক আবু আলম বলেন, “আমি বিষয়টি বিআইডাব্লিউটিএ’র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।