হাওর বার্তা ডেক্সঃ আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন করেছে তা দেখে দেশের মানুষ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে, আমি বিশ্বাস করি, নিশ্চয়ই এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চায়। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। বাংলাদেশের মানুষ আজ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে উন্নয়নটা পাচ্ছে, সেটা প্রত্যেকটা মানুষ উপলব্ধি করছে। একটা সরকারের ধারাবাহিকতা যে একান্তভাবে প্রয়োজন- সেটা আজকে প্রমাণিত।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, লুটেরাদের সংগঠন বিএনপির ওপর জনগণের কোন আস্থা নেই। এই দলটি কেবল হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়েই ক্ষমতা দখল করেছিল এবং জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনে কোন কিছুই করে নাই। ক্ষমতায় থাকাকালে তারা শুধু নিজেদের পকেট ভারি করেছিল। যদিও বিএনপি দাবি করে তারা তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন ছিলো, কিন্তু এটা সত্যি যে, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনে তারা কিছুই করে নাই। তারা সন্ত্রাস ও ভয়-ভীতির রাজত্ব কায়েম করে কেবল নিজেদের ভাগ্য গড়ায় ব্যস্ত ছিলো। যারা নিজেদের জন্য ক্ষমতায় আসতে চায়, তাদের ওপর এদেশের জনগণের আস্থা নেই। বিগত দিনের মতো আগামী নির্বাচনেও জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
১/১১ এর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণের বিষেশ কারাগার পরের বছর ১১ জুন মুক্তি পান শেখ হাসিনা। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ এই দিনটি তার কারামুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। রোববার কারামুক্তি বার্ষিকীতে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রীতম সংগঠনের নেতারা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। গণভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও তার হাতে ফুল তুলে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে দলীয় নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আর্দশ নিয়ে রাজনীতি করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতিবিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা এবং যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকা। জরুরি অবস্থার সময়ে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ক্রিস্ট্রিন ওভারমায়ারকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর দেশে ফিরতে বাধা দেয়ার কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তার মধ্যেই দেশে ফেরার কথা মনে করে তিনি বলেন, মামলা দেবে, ওয়ারেন্ট ইস্যু করবে, আমাকে দেশে আসতে দেবে না। এই খেলাই তারা খেলতে চেয়েছিল। সবাই মামলার ভয়ে পালায়, আমি সেখানে যাচ্ছি মামলা মোকাবেলার করার জন্য।
২০০৭ সালের ৭ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি যেদিন দেশে ফেরেন, তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন হাজারও মানুষ। সেদিনে কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্দেশ ছিল কেউ যেন বিমানবন্দরে না যায়, তারা সংখ্যা বেঁধে দিয়েছিল- ১০/২০ জন, তার বেশি যেতে পারবে না। বাধা উপেক্ষা করে কৌশলে বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষ ছিল। তাদের যেটা উদ্দেশ্য ছিল, হাজার হাজার মানুষ থাকায় তারা সেটা করতে পারেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়েছে। রাজনৈতিক নিপীড়নও সইতে হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, আসলে একটা সরকার যদি ধারাবাহিকভাবে না চলে, তাহলে উন্নয়নটা দেখা যায় না। আমরা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। তার কারণ, আমি দেশের স্বার্থ বিক্রি করতে চাইনি।
জরুরি অবস্থার মধ্যে গ্রেফতার হওয়ার পর সংসদ প্রাঙ্গণে ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনের সেই সাব জেলের দিনগুলো স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, পরিত্যক্ত ঘোষণা করা একটি বাড়ি সেখানে আমাকে রাখা হয়েছিলো ১১টি মাস। দোতলা বাড়ি, নিচে পর্যন্ত নামতে দিত না। এমনকি অসুস্থ হলে ডাক্তারও দেখায়নি। কিন্তু আমি কখনো মনের জোর হারাইনি।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের সে সময় আন্দোলনে শামিল কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেখেছি চেহারা। ভেতরে থাকলে এক চেহারা, বাইরে থাকলে আরেক চেহারা। আওয়ামী লীগ সব সময় তৃণমূলের দল, তারা কখনো সিদ্ধান্তে ভুল করে না।