সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপি সহায়ক সরকারের রূপরেখা দিবে বলে জানিয়েছেন দলটির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদে এই ধরনের নির্বাচনী ব্যবস্থা বলা হয়েছে। আর বাংলাদেশ ওই সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে আমরা এই ধরনের নির্বাচন প্রত্যাশা করি। কবে নাগাদ বিএনপির প্রস্তাবিত সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সহায়ক সরকারের প্রস্ততি প্রায় শেষ। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার চোখ ও হাটুর চিকিৎিসার জন্য বাইরে (লন্ডন) যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি না গেলে ঈদুল ফিতর শেষে এই রূপরেখা ঘোষণা করা হতে পারে। অন্যথায় তিনি দেশে ফিরলে দেয়া হবে বলেও আলাল জানান।
রোববার রাজধানীর মহাখালী এলাকায় তার নিজ বাসভবনে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। সুবক্তা আর জনপ্রিয় টেলিভিশন টক শো ব্যাক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন জাগো দল থেকে জাতীয়তাবাদের রাজনীতি শুরু। বরিশাল জেলা জাগো যুবলের (জাতীয়তাবাদী যুবদল) প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। এরপর কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বরিশাল জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক হিসেবে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারন সম্পাদক, সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ন পদেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তিনি বিএনপির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিবের পদে দায়িত্ব পান। দলের যে কোন কর্মসূচিতে তিনি অগ্রনি ভ’মিকা পালন করেন বলে বিগত দিনে তিনি ১৩৪টি রাজনৈতিক মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে। যার মধ্যে ৮৮টি মামলায় ইতিমধ্যে চাজশিট দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি সহায়ক সরকারের রূপরেখা দিবে। ওই প্রস্তাবনায় কি ধরনের বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির সহায়ক সরকারের প্রস্তাবনায় আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠ ও অবাধে করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কিংবা বিকল্প প্রস্তাব থাকবে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদে সুষ্ঠু নির্বাচনের যে সংগা দেয়া আছে তা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ওই নির্বাচনকালীন সময়ে যে সরকার দেশ পরিচালনা করা জন্য থাকবে রুটিন ওয়ার্ক বলি বা যে ওয়ার্কই বলি একটা প্রভাব থাকে আমাদো মতো দেশে। আমরা চাচ্ছি ওই সময়ে যে সরকার থাকে তা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার হোক বা রুটিনওয়ার্ক পরিচালনাকারী সরকার হোক- নামে কিছু যায় আসে না। তাদের নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক স্বার্থ থাকবে না এটা হচ্ছে মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। নির্বাচন বা নির্বাচন পরবর্তি সময়ে কোন রাজনৈতিক স্বার্থ তাদের থাকবে না এমন সরকার ব্যবস্থাই আমরা চাচ্ছি।
মানবাধিকার সনদে কি রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, এটা একটি চমৎকার বিষয়। যা আমাদের দেশের অনেক সুশিলরাও বলেন না। সেখানে বলা হয়েছে- সুষ্ঠু নির্বাচনের অর্থ শুধুমাত্র সকলের অংশগ্রহনে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং আনুষ্ঠানিক ফলাফলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সুষ্ঠু নির্বাচ বলতে প্রকৃত অর্থে বোঝায় যে নির্বাচনে সকল দল এবং গোষ্ঠি উৎসাহের সাথে অংশগ্রহন করবে, আনন্দমুখর হবে এবং ফলাফল মেনে নেয়ার মতো মানষিকতা থাকতে হবে।
এসময়ে তিনি বলেন, আমাদেও দেশে উৎসবমুখর পরিেেবশে নির্বাচন তো দূরের কথা পিটাইয়া তিন মাইল দুরে সরিয়ে দেয়া হয়।
সহায়ক সরকার রূপরেখায় কি কি থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রস্তাবনায় মুল যে বিষয়টি থাকবে তা হলো বর্তমানে যিনি প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন তিনি নির্বাচনকালীন সময়ে থাকতে পারবেন না। তার অধীনে বিএনপি যাবে না। দ্বিতীয় বিষয় হলো নির্বাচন কমিশনের অধিনে এখন অনেক লোকবল রয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের লোকবল দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। জেলা প্রশাসক, উপজেলা কর্মকর্তাদের নির্বাচনকালে দায়িত্ব দেয়ার পরিবর্তে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করতে হবে। এরপরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে অতি উৎসাহি এবং সরকারের অনুকূল্য লাভ করা কর্মকর্তাদের মধ্যে চিহ্নিতদেরকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে দুরে রাখতে হবে। একইভাবে সিভিল প্রশাসনকেও নিরপেক্ষ করতে হবে। এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় রয়েছে আমাদের সহায়ক সরকারের প্রস্তাবনায়। তা হলো- ভোটারদেরকে ভোটদানে উদ্বদ্ধ করা এবং আশ্বস্থ করা। এটা নির্বাচনকালীন সরকারকেই করতে হবে। কারন বর্তমান সরকার বিগত দিনে যেভাবে গুম খুন নির্যাতন আর ভোট ডাকাতির প্রবনতা চালু করেছে তাতে ভোটাররা আগের মতো উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে সাহস করবে না। তাই তাদেরকে নিরাপত্তা আশ্বস্থ করে ভোটদানে উৎসাহ দিতে হবে।
ক্ষমতাসীন সরকার আপনাদের সহায়ক সরকারের প্রস্তাবনা না মানলে আওয়ামী লীগ সরকারের অধিনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে কি না এবং এ ধরনের গুঞ্জনও রয়েছে- শেখ হাসিনার অধিনে সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থায় বিএনপি নির্বাচনে যাবে। এমন প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, সরকার আমাদের প্রস্তাবনা না মানলে আমরাতো আর যুদ্ধ করতে পারবো না। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা আন্দোলন করতে পারবো। কিন্তু সরকার না মানলে এবং ২০১৪ সালে মতো আরেকটি নির্বাচন করলে তারা দেশের জনগন আর আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। দেশের সম্মানহানি হবে। শেথ হাসিনার অধিনে সর্বদলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে কি না তা আলোচনার বিষয়। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীয় শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে খর্ব করে অন্যের কাছে ন্যাস্ত করা হলে কিংবা সে ছুটিতে থাকলে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রস্ততি কেমন এমেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির নির্বাচনমূখি রাজনৈতিক দল। এই দলকে ১৫দিন সময় দিয়ে নির্বাচনের জন্য বলা হলেও তা করতে পারবে। সারাদেশের দলীয় মনোনয়ন বাছাই সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা চলছে। নির্বাচনী সময় ঘনিয়ে আসায় তা দ্রুত চলছে।
ডবএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বয়সের ভাওে অনেকটা ন্যূজ এবং অসুস্থ। অন্যদিকে দলের অপর কর্নধার তারেক রহমান মামলা জটিলতায় লন্ডন রয়েছেন। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন পরিচালনায় সমস্যা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বয়স হয়েছে, অসুস্থ। এটা সত্য। তবে তার মতো মনোবল আমাদের কারো নেই। তিনি এখনো পুরো দল পরিচালনা করছেন। এটা একেমাত্র তার পক্ষেইে সম্ভব। আগামী নির্বাচনেও তিনি আমাদের অভিভাবক হিসেবেই আমাদের গাইডলাইন দিবেন।
গারাদেশের নেতাকর্মীদেও নামে অসংখ্য মামলা নির্বাচনে প্রভাব পড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে এসব মামলা আমাদেও জন্য খড়্গ সৃষ্টি করবে। তবে ইতিমধ্যে অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এসকল মামলাকে নির্বাচন উপলক্ষ্যে অন্তত ২বছরের জন্য স্থগিত রাখার কথা বলছেন। আমাদেও সহায়ক সরকার প্রস্তবনাতেও এসকল বিষয় উল্লেখ থাকবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গতকাল এক ইফতার মাহফিলে ঈদেও পর জনগনকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন। এর মানে কি আবারো আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক দরবস্থা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে তিনি সোচ্চার হতে আহ্বান জানিয়েছেন। আর বিএনপি তো আন্দোলনের মধ্যে আছেই।
দলের আভ্যন্তরীন কোন্দল আর অঙ্গসংগঠনসহ সারাদেশের কমিটি নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপির কোন্দলকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখছি। সরকারের সীমাহিন নির্যাতনের পরও এখনো এই দলে পদের জন্য হাহাকার চলছে। বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। এসব বিসয় আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না উল্লেখ কওে বলেন, নির্বাচনে সবাই ধানের শীষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের প্রতি অনাস্থা দিতেই তৎপর থাকবে। তখন আভ্যন্তরীন কোন্দল মাথায় থাকবে না।
সারাদেশের কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কমিটি পূনর্গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাকি কাজও শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।