সাহায্য পাচ্ছেন না হাওরের অনেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

চৈত্রের আগাম বন্যায় ফসল হারিয়ে হাওরের কৃষক পরিবার খাদ্য সংকটে পড়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরে সরকারি হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের সংখ্যা এক লাখ ৫০ হাজার। তাদের মধ্যে ৫০ হাজার পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে সরকারিভাবে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা। যারা সাহায্যের বাইরে রয়েছেন, তারা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারি সাহায্য অপ্রতুলতার কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা এ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। স্বজনপ্রীতি ও দলপ্রীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ পরিবার রয়েছে তালিকার বাইরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত গড়ে তিন পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার সরকারি খাদ্য সুবিধা পাচ্ছে না। এসব পরিবারের ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে অভাব। বিশেষ করে বছরের এ সময় হাওরে কাজ না থাকায় কৃষি শ্রমিক ও বর্গাচাষিরা বেকার সময় কাটাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, সরকারি সাহায্য ক্ষতিগ্রস্ত সবাই পাচ্ছে না। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যে তালিকা তৈরি করেছেন, তাতে আত্মীয়স্বজন ও কাছের লোকজনকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ফলে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সরকারি সাহায্যের তালিকায় নেই। ইটনা উপজেলার ফসল হারানো কৃষক ইলিয়াস মিয়া, মস্তোফা মিয়া, পূর্বগ্রামের আইয়ুব আলী, রহমত আলী, বড়আঁটি গ্রামের হযরত আলী ও বানিয়া গ্রামের আলম মিয়াসহ অন্তত ২৫ কৃষক জানান, পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা চরম বিপদে আছেন; কিন্তু এখনো তাদের সরকারি খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা
মেলেনি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ পড়েছে। পরে যোগাযোগ করেও তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি।
মিঠামইন উপজেলার ফুলপুর গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন, কাঞ্চনপুর গ্রামের জসিমউদ্দিন, নূরুল অনিক, রাসেল মিয়া, বুলবুল মিয়া, কেওয়ারজোর গ্রামের তপন কুমার দাস, মৃণাল কান্তি দাসসহ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা যে নামের তালিকা তৈরি করেছেন, সেই তালিকায় তাদের নাম নেই। চেয়ারম্যান ও সদস্যরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের নাম আগে তালিকাভুক্ত করছেন। ফলে শত শত প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাহায্য থেকে বাদ পড়েছেন।
কেওয়ারজোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া বলেন, সরকারি সাহায্য অপ্রতুল থাকার পরও চেয়ারম্যান-মেম্বাররা নিজেদের লোকজনকে আগে তালিকাভুক্ত করায় অনেক কৃষক বাদ পড়েছে।
তবে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরীফুল রেজা চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা বেশি, সে তুলনায় সরকারি সাহায্য কম। আমি ও পরিষদের সদস্যরা সঠিক তালিকা করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা যদি দ্বিগুণ হয়, আমাদের কী করার আছে। কীভাবে তাদের তালিকায় আনব। যারা আগে যোগাযোগ করেছে, তারা তালিকায় এসেছে।’
ইটনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খলিলুর রহমান জানান, ইটনার ৯টি ইউনিয়নে ৮১টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা গড়ে ৬০০র বেশি। সরকারের সাহায্যের অপ্রতুলতার কারণে অনেক কৃষক পরিবার বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আগে ত্রাণ সহায়তা বাড়ানো জরুরি।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট অশোক সরকার বলেন, সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও জেলে পরিবারের যে তালিকা করা হয়েছে, তাতে ৫০ হাজারেরও বেশি পরিবার এখনও সাহায্যের তালিকায় আসেনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সফিকুল ইসলামও তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না। আমরা সরেজমিনে তা দেখব। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কেউ বাদ থাকবে না। প্রয়োজনে তালিকায় আরও নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর