বাঙালি মেয়েরা সবচেয়ে বেশি লজ্জা বোধহয় নিজের শরীরকে ঘিরেই পায়। অথচ, নারী হিসেবে এই লজ্জাই তাদের সৌন্দর্য। কিন্তু হ্যাঁ, অমূলক লজ্জা কখনও আপনার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। আজও আমাদের দেশে বহু নারী লজ্জার কারণে স্তন বা জরায়ু ক্যান্সারের মত ভয়াবহ অসুখকে লুকিয়ে রাখেন। অসংখ্য নারী নিজের ওজন, ত্বকের রঙ বা সৌন্দর্য নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগে ভুগে নিজেকে বঞ্চিত করেন ও সমাজে নিগৃহীত হন। এই শরীরটি আপনার, একে সম্মান ও ভালোবাসা দিতে হবে আপনাকেই। চলুন, আজ জেনে নিই নিজের শরীরের সঙ্গে জড়িত কোন বিষয়গুলো নিয়ে মোটেও লজ্জা বোধ করবেন না।
এক.
জন্মের পর পরই আমাদের দেশের মেয়েদের শরীরে কালো আর ফর্সা হওয়ার তকমা এঁটে দেওয়া হয়। কালো বা শ্যামলা মেয়ের বিয়ে হবে না, বিয়েতে যৌতুক দিতে হবে অনেক বেশি-ইত্যাদি অমূলক ধারণা যুগে যুগে চলে আসছে এই সমাজে। আর তাই তো কালো ত্বকের মেয়েদের জীবন কেটে যায় হীনমন্যতায় ভুগে ভুগে। গায়ের রঙ কখনো একজন নারীর পরিচয় হতে পারে না! মাথা উঁচু করে সদর্পে বাঁচুন। আপনার পরিচয় আপনার ত্বকের রঙে নয়।
দুই.
ত্বকের রঙের পরই আসে ওজনের কথা। এই সমাজ কালো মেয়ে তো তাও সহ্য করে নেয়, কিন্তু ওজন বেশি মেয়েকে কেউই মেনে নিতে চায় না। একজন নারীর একমাত্র সম্বল কি কেবল তাঁর দেহ? আর সেই দেহের কাজ কি কেবলই পুরুষকে তুষ্ট করা? উত্তর অতি অবশ্যই “না”। নারীর পরিচয় তাঁর দেহ নয়, সেই দেহ দিয়ে পুরুষের মন ভোলানো নারীর কাজ নয়। নিজের ওজন নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগবেন না কখনোই।
তিন.
নারীরা আরও যে জিনিসটি নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন, সেটি হচ্ছে তাঁর স্তন। স্তন দুটিকে আরও একটু বড়, আরও একটু সুন্দর করার চেষ্টা সারা পৃথিবীর নারীরা মগ্ন। কেন? কারণ পুরুষের চোখে বড় স্তন আকর্ষণীয়! নিজের স্তনের আকৃতি নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা একেবারেই আত্মবিশ্বাস হীনতার পরিচয়। এটা পরিহার করুন।
চার.
অসুখ স্তনে হোক বা গোপন অঙ্গে, কখনও লজ্জা পেয়ে অসুখ চেপে রাখবেন না। আমাদের দেশে অসংখ্য নারী কেবলমাত্র গোপনাঙ্গে অসুখ হয়েছে বলে ডাক্তারের কাছে যান না। বছরের পর বছর অসুখ নিয়ে বেঁচে থেকে নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেন। এই ভুলটি আপনি যেন করবেন না ভুলেও।
পাঁচ.
সারাজীবন লোকে আপনাকে “খাটো” বা “বেঁটে” বলেছে? এই সমস্যাটা পুরুষদের মাঝে অনেক বেশী হলেও নারীদের ক্ষেত্রেও কম নয়। মনে রাখবেন, সৃষ্টিকর্তা সকলকেই বিশেষ ভাবে বানিয়েছেন। আর তিনি যেভাবে তৈরি করেছেন সেটা নিয়েই সকলের খুশি থাকা উচিত।
ছয়.
পুরুষেরা টেকো বা ভুঁড়ি ওয়ালা হলে তাঁদেরকে তো কেউ কিছু বলে না। তাহলে একজন নারীর পেট মোটা বা মাথায় চুল কম থাকলে কেন তাঁকে হীনমন্যতায় ভুগতে হবে? পৃথিবীর সকলেরই নানান রকম শারীরিক ত্রুটি আছে, আমরা কেউইই নিখুঁত নই। তাই নিজের শরীরকে নিজে মনের কষ্ট বাদ দিন।
সাত.
পিরিয়ড! এই ব্যাপারটি নারী দেহের খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার এবং প্রকৃতির এই নিয়মকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। পিরিয়ডের কথা ফলাও করে প্রচার করার কিছু নেই, কিন্তু তাই বলে পিরিয়ডজনিত কোনও সমস্যা লুকিয়ে রাখা ও লজ্জা পাওয়ার কোনও মানে নেই। লুকিয়ে রাখা মানেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা।