ঢাকা ১০:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ লাখ টাকার চাকরি ছেড়ে দেশের সেনাবাহিনীতে মেঘনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩৯:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুন ২০১৭
  • ৩০৬ বার

বাড়ির বড় মেয়ে৷ বাবা মায়ের আহ্লাদী৷ অসম্ভব মেধাবী মেয়েকে কাছে পেতে চেয়েছিল খোদ আমেরিকা৷ কিন্তু, দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, আর ভালবাসার কারণেই আমেরিকার লাখ টাকার চাকরির অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি৷

যোধপুরের মেঘনা সিং বর্তমানে শুধু রাজস্থানের নয়, গোটা ভারতের গর্ব৷ যে বয়সে মেয়েরা ফ্যাশন আইকন হতে চায় সে বয়সে মেঘনা বেছে নিয়েছেন সবচেয়ে কঠিন কাজ৷ মেঘনা বেছে নিয়েছেন ভারতীয় সেনা৷ সেনাবাহিনীতে মেয়েদের নিয়োগ তেমন বিশেষ না হলেও মেঘনার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ঘটনা অবশ্যই বিশেষ৷

যোধপুরের মেঘনা সিং ভারতীয় স্থল সেনার লেফটেন্যান্ট৷ আপাতত তিনি চেন্নাইয়ে কড়া ট্রেনিং নিচ্ছেন৷ আর্মির পরীক্ষায় পাশ করা এমনিতেই বেশ কষ্ট সাধ্য৷ কিন্তু মেঘনা জল, স্থল, ও আকাশ ভারতীয় সেনার তিনিটি উইংয়ের পরীক্ষাতেই পাশ করেছেন৷ এর থেকেও বড় কথা হল, মেঘনা ভারতীয় সেনায় কাজ করতে চান

বলেই আমেরিকার আইটি কোম্পানির লাখ টাকার চাকরি অবলীলায় ছেড়ে দিয়েছেন৷

২০১৪ সালের জুলাই মাসে মেঘনা আমেরিকার ম্যু সিগমা কোম্পানিতে চাকরি পান৷ তার পারিশ্রমিক ছিল বার্ষিক ২৫ লক্ষ টাকা (বাংলাদেশী মুদ্রা)৷ কোম্পানির ব্যাঙ্গালোরের অফিসেই চাকরি করছিলেন তিনি৷ মেঘনা চাকরির শুরুতেই যে পারিশ্রমিক পাচ্ছিলেন তা দেশের তাবড় সাংসদ-মন্ত্রীরাও পান না৷ মেঘনা চাইলে আরামে, বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেই পারতেন৷ কিন্তু মেঘনা বরাবরই চাইতেন দেশের জন্য কিছু করতে৷

ঠান্ডাঘরে চার-পাঁচ মাস কাজ করলেও বরাবারই মেঘনা ভিতরে একটা অসহায়তা কাজ করত৷ মেঘনার মা চাইতেন তার মেয়ে পড়াশোনা করে হয় সরকারি আধিকার হোক বা সেনাবাহিনীতে যোগ দিক৷ দেশের সেবা করুন৷ মা মনে করতেন যারা দেশের সেবা করে সমাজ তাদের খুব সম্মান করে৷ অন্যদিকে ছোটবেলা থেকেই ভারতীয় সেনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল মেঘনারও৷

মেঘনা ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন৷ কিন্তু ভারতীয় সেনায় যোগ দেওয়ার কথা তিনি কোনও দিনই মন থেকে মুছতে দেননি৷ স্কুল-কলেজ, ঝাঁ চকচকে বিল্ডিংয়ে চাকরি করেও মেঘনার মন থেকে খাঁকি উর্দির গাঢ় রঙ মুছে ফেলা যায়নি৷
মেঘনার বাবা রাম সিং কালবী মেয়ের এই সাফল্যে দারুণ উচ্ছ্বসিত৷ তিনি কৃষি উপজ মান্ডি সমিতির সেক্রেটারি৷ মা বিভা সিং একজন গৃহিনী ও মেঘনার প্রেরণাদাত্রী৷ মেঘনার এক বোন ও ভাইও রয়েছে৷

মেঘনার এই সাফল্য ভারতীয় সেনায় মহিলাদের সংখ্যায় বদল ঘটাতে পারে৷ আশা করা হয় সমাজের পিছিয়ে পড়ে মহিলারা এগিয়ে এসে ভারতীয় সেনায় যোগ দেবেন৷

ভারতীয় সেনায় ১৯৯২-৯৩ সাল থেকে মহিলাদের নিয়োগ শুরু হয়েছে৷ বর্তমানে বায়ু সেনায় ১২৮৫, স্থল সেনায় ১২১৪ ও নৌসেনায় ৩০২ জন মহিলা চাকরীরতা রয়েছেন৷ আশা করা হয়, মেঘনার দেখা দেখি আরও অনেক মেয়ে সেনায় যোগদান করে দেশের নাম বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে দেবেন৷

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ লাখ টাকার চাকরি ছেড়ে দেশের সেনাবাহিনীতে মেঘনা

আপডেট টাইম : ০৭:৩৯:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুন ২০১৭

বাড়ির বড় মেয়ে৷ বাবা মায়ের আহ্লাদী৷ অসম্ভব মেধাবী মেয়েকে কাছে পেতে চেয়েছিল খোদ আমেরিকা৷ কিন্তু, দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, আর ভালবাসার কারণেই আমেরিকার লাখ টাকার চাকরির অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি৷

যোধপুরের মেঘনা সিং বর্তমানে শুধু রাজস্থানের নয়, গোটা ভারতের গর্ব৷ যে বয়সে মেয়েরা ফ্যাশন আইকন হতে চায় সে বয়সে মেঘনা বেছে নিয়েছেন সবচেয়ে কঠিন কাজ৷ মেঘনা বেছে নিয়েছেন ভারতীয় সেনা৷ সেনাবাহিনীতে মেয়েদের নিয়োগ তেমন বিশেষ না হলেও মেঘনার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ঘটনা অবশ্যই বিশেষ৷

যোধপুরের মেঘনা সিং ভারতীয় স্থল সেনার লেফটেন্যান্ট৷ আপাতত তিনি চেন্নাইয়ে কড়া ট্রেনিং নিচ্ছেন৷ আর্মির পরীক্ষায় পাশ করা এমনিতেই বেশ কষ্ট সাধ্য৷ কিন্তু মেঘনা জল, স্থল, ও আকাশ ভারতীয় সেনার তিনিটি উইংয়ের পরীক্ষাতেই পাশ করেছেন৷ এর থেকেও বড় কথা হল, মেঘনা ভারতীয় সেনায় কাজ করতে চান

বলেই আমেরিকার আইটি কোম্পানির লাখ টাকার চাকরি অবলীলায় ছেড়ে দিয়েছেন৷

২০১৪ সালের জুলাই মাসে মেঘনা আমেরিকার ম্যু সিগমা কোম্পানিতে চাকরি পান৷ তার পারিশ্রমিক ছিল বার্ষিক ২৫ লক্ষ টাকা (বাংলাদেশী মুদ্রা)৷ কোম্পানির ব্যাঙ্গালোরের অফিসেই চাকরি করছিলেন তিনি৷ মেঘনা চাকরির শুরুতেই যে পারিশ্রমিক পাচ্ছিলেন তা দেশের তাবড় সাংসদ-মন্ত্রীরাও পান না৷ মেঘনা চাইলে আরামে, বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেই পারতেন৷ কিন্তু মেঘনা বরাবরই চাইতেন দেশের জন্য কিছু করতে৷

ঠান্ডাঘরে চার-পাঁচ মাস কাজ করলেও বরাবারই মেঘনা ভিতরে একটা অসহায়তা কাজ করত৷ মেঘনার মা চাইতেন তার মেয়ে পড়াশোনা করে হয় সরকারি আধিকার হোক বা সেনাবাহিনীতে যোগ দিক৷ দেশের সেবা করুন৷ মা মনে করতেন যারা দেশের সেবা করে সমাজ তাদের খুব সম্মান করে৷ অন্যদিকে ছোটবেলা থেকেই ভারতীয় সেনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল মেঘনারও৷

মেঘনা ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন৷ কিন্তু ভারতীয় সেনায় যোগ দেওয়ার কথা তিনি কোনও দিনই মন থেকে মুছতে দেননি৷ স্কুল-কলেজ, ঝাঁ চকচকে বিল্ডিংয়ে চাকরি করেও মেঘনার মন থেকে খাঁকি উর্দির গাঢ় রঙ মুছে ফেলা যায়নি৷
মেঘনার বাবা রাম সিং কালবী মেয়ের এই সাফল্যে দারুণ উচ্ছ্বসিত৷ তিনি কৃষি উপজ মান্ডি সমিতির সেক্রেটারি৷ মা বিভা সিং একজন গৃহিনী ও মেঘনার প্রেরণাদাত্রী৷ মেঘনার এক বোন ও ভাইও রয়েছে৷

মেঘনার এই সাফল্য ভারতীয় সেনায় মহিলাদের সংখ্যায় বদল ঘটাতে পারে৷ আশা করা হয় সমাজের পিছিয়ে পড়ে মহিলারা এগিয়ে এসে ভারতীয় সেনায় যোগ দেবেন৷

ভারতীয় সেনায় ১৯৯২-৯৩ সাল থেকে মহিলাদের নিয়োগ শুরু হয়েছে৷ বর্তমানে বায়ু সেনায় ১২৮৫, স্থল সেনায় ১২১৪ ও নৌসেনায় ৩০২ জন মহিলা চাকরীরতা রয়েছেন৷ আশা করা হয়, মেঘনার দেখা দেখি আরও অনেক মেয়ে সেনায় যোগদান করে দেশের নাম বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে দেবেন৷