ঢাকা ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিন মাসের জন্য ৮০ সিনেমা হল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৪:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ জুন ২০১৭
  • ২৭৬ বার

ঢাকার চলচ্চিত্র ব্যবসার মূলে থাকে সিনেমা হল। কারণ একটি ছবি নির্মাণের পর দর্শকের জন্য প্রদর্শিত হয় সিনেমা হলে। প্রতি সপ্তাহে ছবি মুক্তি পেলেও সারা দেশে একযোগে নতুন ছবিগুলো মুক্তি পায় না। এদিকে দিন দিন সিনেমা হলের সংখ্যাও কমছে। সিনেমা হল বৃদ্ধি করা নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা চললেও এর কোনো সুফল এখনো পাওয়া যায়নি। সিনেমা হলের ‘হাউসফুল’ নামের শব্দটি বিলীন হয়ে গেছে বললেই চলে। নব্বইয়ের দশকে ঢাকায় সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ৪৪টি। তা কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২৬টিতে। এগুলো হলো আজাদ, চিত্রামহল, মানসী, অভিসার, নেপচুন, গীত, সংগীত, জোনাকী, রাজমণি, রাজিয়া, পদ্মা, সুরমা, গ্যারিসন, শাহীন, সনি, পুরবী, এশিয়া, পর্বত, মুক্তি, শ্যামলী, বিজিবি অডিটোরিয়াম, বলাকা, আনন্দ, ছন্দ, পুনম ও মধুমিতা। সারা দেশের চিত্র এমনই। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক সিনেমা হল। রমজানের আগে রাজধানীর আনন্দ সিনেমা হলে সবশেষ নতুন ছবি ‘মিলনসেতু’ মুক্তি পায়। ছবিটি দেখতে কেমন দর্শক আসে জানতে চাইলে সিনেমা হলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক শামসুল আলম বলেন, কি আর বলবো আপনাদের। প্রতি শোতে ২০-২৫ জন লোক হয়। দর্শক নেই, তারপরেও স্টাফদের বেতন, ইলেকট্রিক বিল, পানির বিল, বিভিন্ন ট্যাক্স নিয়মিত পরিশোধ করতে হয়। আর উন্নত পরিবেশের কথা সকলে বলে কিন্তু সিনেমা চালিয়ে লাভ না হলে সিনেমা হলের পরিবেশ ঠিক করব কিভাবে। সিনেমা দেখতে দর্শক ঠিকমতো আসে না। ধার-দেনা করে এভাবে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখতে চাই না। দর্শকের অভাবে ঢাকার বাইরে বেশকিছু সিনেমা হল বন্ধ থাকে সারা বছর। কিন্তু ঈদের সময় আসলে তারা সিনেমা হলগুলো খোলা রাখে। কারণ তখন দর্শক ৩-৪ দিন হলেও নতুন ছবি দেখতে যায়। এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, এখন সারা দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা মোট ২১২টি। প্রতি বছরের মতো এবারের ঈদেও সারা দেশে বন্ধ থাকা ৮০টি সিনেমা হল চালু হবে। ঈদকে ঘিরেই বাড়ে এসব সিনেমা হল। রমজান ও কোরবানির ঈদে এসব সিনেমা হল লাভের আশায় চালু হয়। বলতে গেলে এক কথায় তিন মাসের জন্য বাড়তি ৮০ সিনেমা হল পায় দর্শক। দুই ঈদে এসব ছবি সিনেমা হলের মালিকরা চালানোর পর আবার সারা বছর হল বন্ধ রাখেন। কারণ নতুন ছবি এনে লোকসান করতে চান না তারা। গত ৩১শে মার্চ রাজধানীর কাওরানবাজারে অবস্থিত ‘পূর্ণিমা’ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। সিনেমা হলটির জায়গায় নির্মিত হবে বহুতল ভবন। আগামী বছরের মধ্যেই শুরু হবে ১৮তলা বিশিষ্ট দুটি ভবনের নির্মাণ কাজ। কিন্তু সেই বহুতল ভবনে থাকবে না কোনো সিনেপ্লেক্স। অনুসন্ধানে জানা গেছে দর্শকের অভাবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে যেসব সিনেমা হল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো ঢাকার আজাদ, মানসী, আনন্দ, অভিসার, আগমন ও রাজমণি। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি মধুমিতা সিনেমা হলের অন্যতম কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ বলেন, আমাদের ভালো কনটেন্ট নেই। কেন সিনেমা হলে দর্শক আসবেন। চাহিদা অনুযায়ী এবং মানসম্মত ছবি না পাওয়া গেলে সিনেমা হলের যতই উন্নয়ন করা হোক না কেন কোনোভাবেই সিনেমা হলের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। বছরে দুই ঈদ ছাড়া এখন অন্য কোনো সময় দর্শক সিনেমা হলে আসেন না বললেই চলে। এ অবস্থায় কীভাবে হল টিকিয়ে রাখব আমরা। লোকসান গুনতে গুনতে বাকি হলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

তিন মাসের জন্য ৮০ সিনেমা হল

আপডেট টাইম : ১২:৪৪:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ জুন ২০১৭

ঢাকার চলচ্চিত্র ব্যবসার মূলে থাকে সিনেমা হল। কারণ একটি ছবি নির্মাণের পর দর্শকের জন্য প্রদর্শিত হয় সিনেমা হলে। প্রতি সপ্তাহে ছবি মুক্তি পেলেও সারা দেশে একযোগে নতুন ছবিগুলো মুক্তি পায় না। এদিকে দিন দিন সিনেমা হলের সংখ্যাও কমছে। সিনেমা হল বৃদ্ধি করা নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা চললেও এর কোনো সুফল এখনো পাওয়া যায়নি। সিনেমা হলের ‘হাউসফুল’ নামের শব্দটি বিলীন হয়ে গেছে বললেই চলে। নব্বইয়ের দশকে ঢাকায় সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ৪৪টি। তা কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২৬টিতে। এগুলো হলো আজাদ, চিত্রামহল, মানসী, অভিসার, নেপচুন, গীত, সংগীত, জোনাকী, রাজমণি, রাজিয়া, পদ্মা, সুরমা, গ্যারিসন, শাহীন, সনি, পুরবী, এশিয়া, পর্বত, মুক্তি, শ্যামলী, বিজিবি অডিটোরিয়াম, বলাকা, আনন্দ, ছন্দ, পুনম ও মধুমিতা। সারা দেশের চিত্র এমনই। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক সিনেমা হল। রমজানের আগে রাজধানীর আনন্দ সিনেমা হলে সবশেষ নতুন ছবি ‘মিলনসেতু’ মুক্তি পায়। ছবিটি দেখতে কেমন দর্শক আসে জানতে চাইলে সিনেমা হলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক শামসুল আলম বলেন, কি আর বলবো আপনাদের। প্রতি শোতে ২০-২৫ জন লোক হয়। দর্শক নেই, তারপরেও স্টাফদের বেতন, ইলেকট্রিক বিল, পানির বিল, বিভিন্ন ট্যাক্স নিয়মিত পরিশোধ করতে হয়। আর উন্নত পরিবেশের কথা সকলে বলে কিন্তু সিনেমা চালিয়ে লাভ না হলে সিনেমা হলের পরিবেশ ঠিক করব কিভাবে। সিনেমা দেখতে দর্শক ঠিকমতো আসে না। ধার-দেনা করে এভাবে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখতে চাই না। দর্শকের অভাবে ঢাকার বাইরে বেশকিছু সিনেমা হল বন্ধ থাকে সারা বছর। কিন্তু ঈদের সময় আসলে তারা সিনেমা হলগুলো খোলা রাখে। কারণ তখন দর্শক ৩-৪ দিন হলেও নতুন ছবি দেখতে যায়। এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, এখন সারা দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা মোট ২১২টি। প্রতি বছরের মতো এবারের ঈদেও সারা দেশে বন্ধ থাকা ৮০টি সিনেমা হল চালু হবে। ঈদকে ঘিরেই বাড়ে এসব সিনেমা হল। রমজান ও কোরবানির ঈদে এসব সিনেমা হল লাভের আশায় চালু হয়। বলতে গেলে এক কথায় তিন মাসের জন্য বাড়তি ৮০ সিনেমা হল পায় দর্শক। দুই ঈদে এসব ছবি সিনেমা হলের মালিকরা চালানোর পর আবার সারা বছর হল বন্ধ রাখেন। কারণ নতুন ছবি এনে লোকসান করতে চান না তারা। গত ৩১শে মার্চ রাজধানীর কাওরানবাজারে অবস্থিত ‘পূর্ণিমা’ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। সিনেমা হলটির জায়গায় নির্মিত হবে বহুতল ভবন। আগামী বছরের মধ্যেই শুরু হবে ১৮তলা বিশিষ্ট দুটি ভবনের নির্মাণ কাজ। কিন্তু সেই বহুতল ভবনে থাকবে না কোনো সিনেপ্লেক্স। অনুসন্ধানে জানা গেছে দর্শকের অভাবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে যেসব সিনেমা হল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো ঢাকার আজাদ, মানসী, আনন্দ, অভিসার, আগমন ও রাজমণি। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি মধুমিতা সিনেমা হলের অন্যতম কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ বলেন, আমাদের ভালো কনটেন্ট নেই। কেন সিনেমা হলে দর্শক আসবেন। চাহিদা অনুযায়ী এবং মানসম্মত ছবি না পাওয়া গেলে সিনেমা হলের যতই উন্নয়ন করা হোক না কেন কোনোভাবেই সিনেমা হলের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। বছরে দুই ঈদ ছাড়া এখন অন্য কোনো সময় দর্শক সিনেমা হলে আসেন না বললেই চলে। এ অবস্থায় কীভাবে হল টিকিয়ে রাখব আমরা। লোকসান গুনতে গুনতে বাকি হলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।