ঢাকা ০৫:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হোমিও চিকিৎসা ও প্রেসক্রিপশন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫০:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০১৭
  • ৪৮২ বার

দেশে অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিকসহ নানা ধরনের চিকিৎসার প্রচলন আছে। অ্যালোপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় রোগী দেখার পর চিকিৎসাপত্র বা প্রেসক্রিপশন দেয়ার ব্যবস্থা বিদ্যমান, কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে তা নেই। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সরকারি অনুমোদন থাকার পরও কেন রোগীকে চিকিৎসাপত্র দেয়া হচ্ছে না? সরকারি দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে কিছু অসৎ ও অসাধু চিকিৎসক হোমিও ওষুধের নামে ক্ষতিকর মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েড ও সিসা-মিশ্রিত ওষুধ প্রয়োগ করছেন। দীর্ঘ দিন এর প্রয়োগের ফলে রোগীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মাদারটিংচারের নামে রঙিন তরল ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, যাতে স্টেরয়েড বা সিসা-মিশ্রিত ওষুধ প্রয়োগ সহজ হয়।
অন্যান্য চিকিৎসায় প্রেসক্রিপশনের ব্যবস্থা থাকলেও হোমিও চিকিৎসায় এটা কেন দেয়া হচ্ছে না তার জবাব দেবে কে? কিছু চিকিৎসক চিকিৎসার নামে অসাধু কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং তারা জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছেন। অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ আইনি ব্যবস্থা নেয়া উচিত। হোমিও চিকিৎসায় প্রেসক্রিপশনের ব্যবস্থা থাকলে রোগীরা তা নিয়ে ক্রয় করে ঝুঁকি এড়াতে পারতেন। হোমিও ডাক্তারেরা যে ওষুধ দেন তার বোতল, গ্লোব্লুস বা পুরিয়ার গায়ে ওষুধের নাম লেখা থাকে না, ফলে কোনটা আগে বা পরে অথবা কোনটা সকাল, দুপুর বা রাতে খাবেন তা রোগী বা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের বুঝে ওঠা কঠিন। প্রেসক্রিপশন দিলে রোগীরা অল্প টাকায় মানসম্মত ওষুধ সংগ্রহ করতে পারত, ওষুধ সেবনের নিয়মও তাতে লেখা থাকত এবং অনৈতিক কারবারের সমাপ্তি ঘটত।
রোগী দেখার ফি যে যা পারেন নিচ্ছেন। বিশেষ করে ক্রনিক রোগ বা দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার হলে সাধারণত অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় ভালো হয় কম, অনেকে এমন ধারণায় হোমিও চিকিৎসার দ্বারস্থ হয়। এ সুযোগে অনৈতিক রমরমা ব্যবসা চলছে।
রোগীর অত্যধিক বয়স বিবেচনায় অপারেশন করা সম্ভব নয় বলেই হোমিও ডাক্তারের দ্বারস্থ হতে হয়। বাংলাদেশে একাধিক বিষয়ে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ও বিদেশী ডিগ্রিধারী প্রবীণ অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকেরা সাধারণত দেড় হাজার টাকার বেশি ভিজিট নেন না। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে ডিপ্লোমা বা ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী ডাক্তারেরা পর্যন্ত দুই হাজার টাকার বেশি ভিজিট নিচ্ছেন। প্রতিবার তিন-চারটি আইটেমের ওষুধ দিচ্ছেন। অনেক ডাক্তার পরের ভিজিটে ফি নিচ্ছেন না, কিন্তু তিন-চার আইটেমের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে আট শ’ বা হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কোনো কোনো হোমিও ডাক্তার। হোমিও চিকিৎসায় দুই আইটেম ওষুধের বেশি সাধারণত প্রয়োগ করা হয় না, সেখানে বেশি আইটেমের ওষুধ কেন? যেখানে অ্যালোপ্যাথির বড় বড় ডাক্তারের প্রচারণা নেই, সেখানে হোমিওপ্যাথির মনকাড়া বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন কতটা?
অন্য দিকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার নামে স্টেরয়েড প্রয়োগের অভিযোগ আছে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় কোনো কোনো ওষুধ কোম্পানি চিকিৎসককে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রে চেম্বার করার সুযোগ দেয় এবং প্রত্যেক ডাক্তারের নামে ওষুধ বিক্রির রশিদ বইয়ের প্রচলন চালু আছে। দিনের শেষে কোন ডাক্তার কত টাকার ওষুধ বিক্রি করলেন, তার একটা হিসাব কষা হয়। এ জন্য ডাক্তারেরা বাণিজ্যিক মনোভাব প্রদর্শন করছেন বলে অভিযোগ আছে। ওষুধ বিক্রয়ের ওপর ডাক্তারেরা কমিশন পাচ্ছেন। এ চিকিৎসায় বিজ্ঞাপনে রোগী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হোমিও চিকিৎসা ও প্রেসক্রিপশন

আপডেট টাইম : ১১:৫০:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০১৭

দেশে অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিকসহ নানা ধরনের চিকিৎসার প্রচলন আছে। অ্যালোপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় রোগী দেখার পর চিকিৎসাপত্র বা প্রেসক্রিপশন দেয়ার ব্যবস্থা বিদ্যমান, কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে তা নেই। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সরকারি অনুমোদন থাকার পরও কেন রোগীকে চিকিৎসাপত্র দেয়া হচ্ছে না? সরকারি দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে কিছু অসৎ ও অসাধু চিকিৎসক হোমিও ওষুধের নামে ক্ষতিকর মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েড ও সিসা-মিশ্রিত ওষুধ প্রয়োগ করছেন। দীর্ঘ দিন এর প্রয়োগের ফলে রোগীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মাদারটিংচারের নামে রঙিন তরল ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, যাতে স্টেরয়েড বা সিসা-মিশ্রিত ওষুধ প্রয়োগ সহজ হয়।
অন্যান্য চিকিৎসায় প্রেসক্রিপশনের ব্যবস্থা থাকলেও হোমিও চিকিৎসায় এটা কেন দেয়া হচ্ছে না তার জবাব দেবে কে? কিছু চিকিৎসক চিকিৎসার নামে অসাধু কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং তারা জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছেন। অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ আইনি ব্যবস্থা নেয়া উচিত। হোমিও চিকিৎসায় প্রেসক্রিপশনের ব্যবস্থা থাকলে রোগীরা তা নিয়ে ক্রয় করে ঝুঁকি এড়াতে পারতেন। হোমিও ডাক্তারেরা যে ওষুধ দেন তার বোতল, গ্লোব্লুস বা পুরিয়ার গায়ে ওষুধের নাম লেখা থাকে না, ফলে কোনটা আগে বা পরে অথবা কোনটা সকাল, দুপুর বা রাতে খাবেন তা রোগী বা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের বুঝে ওঠা কঠিন। প্রেসক্রিপশন দিলে রোগীরা অল্প টাকায় মানসম্মত ওষুধ সংগ্রহ করতে পারত, ওষুধ সেবনের নিয়মও তাতে লেখা থাকত এবং অনৈতিক কারবারের সমাপ্তি ঘটত।
রোগী দেখার ফি যে যা পারেন নিচ্ছেন। বিশেষ করে ক্রনিক রোগ বা দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার হলে সাধারণত অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় ভালো হয় কম, অনেকে এমন ধারণায় হোমিও চিকিৎসার দ্বারস্থ হয়। এ সুযোগে অনৈতিক রমরমা ব্যবসা চলছে।
রোগীর অত্যধিক বয়স বিবেচনায় অপারেশন করা সম্ভব নয় বলেই হোমিও ডাক্তারের দ্বারস্থ হতে হয়। বাংলাদেশে একাধিক বিষয়ে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ও বিদেশী ডিগ্রিধারী প্রবীণ অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকেরা সাধারণত দেড় হাজার টাকার বেশি ভিজিট নেন না। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে ডিপ্লোমা বা ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী ডাক্তারেরা পর্যন্ত দুই হাজার টাকার বেশি ভিজিট নিচ্ছেন। প্রতিবার তিন-চারটি আইটেমের ওষুধ দিচ্ছেন। অনেক ডাক্তার পরের ভিজিটে ফি নিচ্ছেন না, কিন্তু তিন-চার আইটেমের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে আট শ’ বা হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কোনো কোনো হোমিও ডাক্তার। হোমিও চিকিৎসায় দুই আইটেম ওষুধের বেশি সাধারণত প্রয়োগ করা হয় না, সেখানে বেশি আইটেমের ওষুধ কেন? যেখানে অ্যালোপ্যাথির বড় বড় ডাক্তারের প্রচারণা নেই, সেখানে হোমিওপ্যাথির মনকাড়া বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন কতটা?
অন্য দিকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার নামে স্টেরয়েড প্রয়োগের অভিযোগ আছে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় কোনো কোনো ওষুধ কোম্পানি চিকিৎসককে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রে চেম্বার করার সুযোগ দেয় এবং প্রত্যেক ডাক্তারের নামে ওষুধ বিক্রির রশিদ বইয়ের প্রচলন চালু আছে। দিনের শেষে কোন ডাক্তার কত টাকার ওষুধ বিক্রি করলেন, তার একটা হিসাব কষা হয়। এ জন্য ডাক্তারেরা বাণিজ্যিক মনোভাব প্রদর্শন করছেন বলে অভিযোগ আছে। ওষুধ বিক্রয়ের ওপর ডাক্তারেরা কমিশন পাচ্ছেন। এ চিকিৎসায় বিজ্ঞাপনে রোগী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।