মাঠে নামবেন খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা আসছে। জনসংযোগ-জনসভা করবেন বিভাগীয় শহরে

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণার পরে মাঠে নামবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার আগেই দল গোছানোর কাজও শেষ করবে দলটি। ইতোমধ্যে ৪৭টি জেলায় নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাকিগুলো দ্রুত করার প্রক্রিয়া চলছে। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বেগম জিয়া ঈদের পর চোখের চিকিত্সার জন্য লন্ডন যেতে মনস্থ করেছেন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে লন্ডনে চোখের চিকিৎসা করান তিনি। চিকিৎসকরা তখন বলেছিলেন ৯ মাস পর আবারো চেকআপ করাতে। কিন্তু তিনি প্রায় দেড় বছর আর চেকআপ করাতে যেতে পারেননি। ফলে চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অসুস্থতার কারণে এবার পবিত্র মাহে রমজানে ওমরাহ করতে যেতে পারবেন না বলে জানা গেছে।

লন্ডন থেকে তিনি দেশে ফিরে ঘোষণা করবেন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা। এই রূপরেখার খসড়া তৈরি করা আছে। এতে আইনগত বিষয়গুলো নিয়ে আরো বিচার বিশ্লেষণ ও মতামত দিচ্ছেন দলের আইন বিশেষজ্ঞরা। এই রূপরেখা নিয়ে জনমত গড়তে মাঠে নামবেন বেগম জিয়া। প্রাক-পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভাগীয় সদরগুলোতে জনসভা করতে পারেন। ঢাকা থেকে এই জনসভায় যাওয়া-আসার পথে জনসংযোগ করবেন।

উন্মুক্ত স্থানে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ রাজনৈতিক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে। তবে ওই জনসভার অনুমতি পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় বিএনপিকে। শেষে পুলিশ ১৩ দফা শর্তযুক্ত করে অনুমতি দেয়। আর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টনে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’-এ জনসভা করতে চাইলেও সরকার অনুমতি দেয়নি। চলতি বছরের ১ মে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি সরকার। আবার গত ২৪ মে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে খালেদা জিয়ার সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পায়নি বিএনপি। এর বাইরে গত বছর ১ মে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতা করেন খালেদা জিয়া।

মূলত ২০১৫ সালে টানা ৯৩ দিনের হরতাল অবরোধের পর ঢাকার বাইরে আর সমাবেশে যাননি বেগম জিয়া। দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, ইতোমধ্যে বিএনপি সমর্থক কতিপয় বুদ্ধিজীবী একাধিকবার বেগম জিয়াকে তাগাদা দিয়েছেন যেন তিনি ঢাকার বাইরে জনসভা করেন। তবে অসুস্থতা, দল গোছানো এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে বিলম্বিত হচ্ছে এই জেলা সফর।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দল গোছানোর কাজ চলছে। যত দূর সম্ভব তাড়াতাড়ি শেষ করা হবে সাংগঠনিক পুনর্গঠন। শেষ হলে মাঠে নামবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

এদিকে বর্তমানে দল গোছানোর পাশাপাশি ‘রূপকল্প-২০৩০’ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ‘রূপকল্প-২০৩০ পুস্তিকা আকারে ইতোমধ্যে কয়েক লক্ষ কপি ছাপা হয়েছে। প্রতিটি জেলা এবং উপজেলার নেতাদের চাহিদা মতো ছাপানো হচ্ছে এই পুস্তিকা। তারা নগদ টাকায় কিনে এই পুস্তিকা বিতরণ করছেন। এই রূপকল্প নিয়ে প্রতিটি জেলায় সেমিনার এবং আলোচনা অনুষ্ঠান করবে বিএনপি। জেলাগুলোর বিশিষ্ট নাগরিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা তাতে মতামত দেবেন। রূপকল্পে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের ওপর রাজধানীতে সেমিনার হবে। ইতোমধ্যে শিক্ষা বিষয়ের ওপর সেমিনার করেছে বিএনপি। গত ১৩ মে লেডিস ক্লাবে ‘বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও আমাদের ভবিষ্যত্’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। এ সেমিনার থেকে মতামত নেওয়া হচ্ছে, যাতে রূপকল্প আরো পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে। দেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ে উন্নীত করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ১০ মে ‘রূপকল্প-২০৩০’ ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। এর ভূমিকায় সারাদেশের বিশিষ্টজনদের মতামত চাওয়া হয়েছে।

দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই রূপকল্প নিয়ে বিশেষজ্ঞ, পার্লামেন্টারিয়ান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করে আরো পরিমার্জন-পরিবর্ধন করা যেতে পারে।

এসব প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভিশন-২০৩০ নিয়ে দেশের মানুষ উজ্জীবিত। জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি আমরা। বর্তমানে যে রাজনীতি চলছে, বর্তমানে যে প্রেক্ষাপট, জনগণ একটা ইতিবাচক রাজনীতি চায়। সে বিষয়গুলো এই ভিশনে আনা হয়েছে। এটা এ দেশের মানুষের অনেক দিনের দাবিও ছিল যে বিএনপি কী করতে চায়; সে কথাগুলো আমরা বলেছি। এখন এটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সমস্ত জেলায় এ বিষয়গুলোর ওপর আলোচনা হবে। সেমিনার হবে। মতামত নেওয়া হবে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের নেত্রী রোজার পর নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। আমরা প্রত্যাশা করি আগামী নির্বাচনে সহায়ক সরকারের যে রূপরেখা আমাদের নেত্রী দেবেন সেটা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সহায়ক সরকার গঠনে তাদের সদিচ্ছা দেখাবে। অন্যথায় জনগণ রাস্তায় নেমে এই দাবি আদায় করবে।

এদিকে সারাদেশে বিএনপি পুনর্গঠনের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, দলের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৭টিতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েকটি চূড়ান্ত করা আছে। শিগগিরই বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে ঘোষণা করা হবে। শাহজাহান বলেন, আমি আজ (বুধবার) ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব যাব। ফিরব আগামী ২২ জুন। আমার অবর্তমানে ম্যাডাম অন্যদের দিয়ে কমিটি গঠনের কাজ এগিয়ে নিতে পারেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর