১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ভোলা সাইক্লোনকে সর্বকালের সবচেয়ে মারণাত্মক চরম আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী ওই দুর্যোগে ৩ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
শুধু তাই নয় ১৯৮৯ সালে মানিকগঞ্জের ভয়াবহ টর্নেডো রেকর্ডভাঙা আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট ঘটনা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে জাতিসংঘের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা (ডব্লিউএমও)। গত বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টিতে মৃত্যুর বিশ্বরেকর্ড প্রকাশ করে।
কাগজে কলমে ভোলা সাইক্লোন নামে খ্যাত এই ঘূর্ণিঝড় ছিল একটি শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় যা ১৯৭০ সালের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে। এটি সিম্পসন স্কেলে ‘ক্যাটাগরি ৩’ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ছিল।
ঘূর্ণিঝড়টি বঙ্গোপসাগরে ৮ই নভেম্বর সৃষ্ট হয় এবং ক্রমশ শক্তিশালী হতে হতে এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ই নভেম্বর এটির গতিবেগ সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি (১১৫ মাইল) এ পৌঁছায় এবং সে রাতেই তা উপকূলে আঘাত করে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ প্লাবিত হয়। এতে ঐসব এলাকার বাড়ি-ঘর, গ্রাম ও শস্য স্রোতে তলিয়ে যায়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল তজুমদ্দিন উপজেলা, সেখানে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার অধিবাসীর মধ্যে ৭৭ হাজার মানুষই (৪৬%) প্রাণ হারান।
শুধু তাই নয় ভয়াবহ এই ঘূর্ণিঝড়ের পরেও ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে সেই সময়ের পাকিস্তান সরকারের গড়িমসিতে চরম-ক্ষুব্ধ হয় জনগণ। যার ফলাফল দেখা যায় ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে, পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৭টি আসনের সবগুলো লাভ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। এর পরের বছর ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।
এছাড়া সবচেয়ে ভয়ঙ্কর টর্নেডো সংঘটিত হয় মানিকগঞ্জে ১৯৮৯ সালের ২৬ এপ্রিল। সাটুরিয়া টর্নেডো নামে খ্যাত এই দুর্যোগে ১৩০০ মানুষ নিহত হয়। প্রায় ১২ হাজার লোক আহত হয় ও প্রায় এক লাখ লোক গৃহহীন হন। রমজান মাসে ইফতারের আগ মূহুর্তে ইফতারের আগে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড বেগে সাটুরিয়া উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যায় ভয়াল এক টর্নেডো, লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সাটুরিয়া উপজেলার প্রায় ১২ টি গ্রাম।
মাত্র ১ মিনিটেরও কম সময়ে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই ধ্বংস-যজ্ঞে পরিণত হয় সাটুরিয়া।
অন্যান্য রেকর্ডভাঙা দুর্যোগগুলো হচ্ছে, ১৯৯৪ সালে সালে মিসরের দ্রোঙ্কায় বজ্রপাতে তেলের ট্যাংকারে আগুন লেগে ৪৬৯ জনের মৃত্যু, জিম্বাবুয়েতে ১৯৭৫ সালে সরাসরি বজ্রপাতে ২১ জন মারা যায়। এছাড়া ভারতের মুরাদাবাদে ১৯৮৮ সালের ৩০ এপ্রিল শিলাবৃষ্টিতে ২৪৬ জন মৃত্যুবরণ করে।
ডব্লিউএমও’র মহাসচিব পেট্টেরি তালাস বলেন, চরম আবহাওয়ায় গুরুতর ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করে এবং ব্যাপক প্রাণহানি ঘটায়। এইজন্যই ডব্লিউএমও দুর্যোগের মাত্রানুযায়ী পূর্বাভাস দেয়ার বিষয়গুলো উন্নত করার চেষ্টা করছে, ঐতিহাসিক দুর্যোগগুলোর সময়ের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের দুর্যোগগুলো প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। তিনি যোগ করেন, চরম এই দুর্যোগের মানবিক বিষয়টা যেন কখনো না হারিয়ে যায়।