ঢাকা ০৬:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিলীনের পথে মুঘল আমলের ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:১৯:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জুলাই ২০১৫
  • ৪১১ বার

প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের উদাসীনতা আর স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলার কারণে প্রায় সাড়ে ৩শ’ বছরের পুরাতন নয়াবাদ মসজিদটি আজ বিলীনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। তৎকালীন অসাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টান্ত এ অঞ্চলের নয়াবাদ মসজিদ এবং কান্তিজিউ মন্দির। কাহারোলের ঢেপা নদীর তীরে নয়াবাদ গ্রামে মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী নয়াবাদ মসজিদটি অবস্থিত।

দিনাজপুর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দুরে কান্তজিউ মন্দির এবং মন্দির থেকে মাত্র ৪কিলোমিটার উত্তরে এ নয়াবাদ মসজিদ। কেউ বলেন মুসলিম শাসনামলে এটি নির্মিত। আবার কারো কারো মতে রাজা প্রাণনাথ (১৭০৪ খ্রি.) কান্তিজিউ মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করলে এর নির্মাণ কাজে কিছু মুসলিম সম্পত্তি আগ্রা থেকে নিয়ে আনা হয়েছিল। তাদের ধর্মকর্ম করার জন্য এ নয়াবাদ মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

অপরদিকে জানা যায়, ১৭০৪-১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে ইরাক, ইরান হতে আগত রাজমিস্ত্রিগণ যখন ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দিরটির নির্মাণ কাজ করছিল। তখন তারা ঐ মন্দিরের পার্শ্বে নামাজ আদায় করত। কিন্তু হঠাৎ করে এক দিন দিনাজপুরের প্রখ্যাত জমিদার মহারাজা প্রাণনাথ ও তদ্বীয় পুত্র রামনাথ মন্দির পরির্দশনে গেলে, তাদের নামাজ আদায় করতে দেখেন। তখন জমিদার রামনাথ মিস্ত্রিদেরকে নামাজ আদায় করার জন্য একটি মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেন। তখন হেড মিস্ত্রিদ্বয় কালুয়া ও নেওয়াজ আলী ঢেপা  নদীর তীরে নয়াবাদ গ্রামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।

মসজিদটি কাহারোলের নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত বলে গ্রামের নাম অনুসারে মসজিদটির নাম হয় নয়াবাদ মসজিদ। মসজিদটি ১৯৬৮ সালে সরকারের আওতায় আনা হয়। মসজিদটির ৩টি গম্বুজ, ৪টি মিনার, ৩টি দরজা ও ২টি জানালা বিশিষ্ট। মসজিদের পাশে ১ গম্বুজ ওয়ালা একটি হুজুরা খান ঘর এবং মসজিদের উত্তর পার্শ্বে তৎকালীন মিস্ত্রিদের কবর রয়েছে।

নয়াবাদ মসজিদটি সংস্কারের অভাবে খুলে পড়ছে মসজিদের করুকার্য, গম্বুজ মিনার, মেহেরাব। ১২.৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫.৫ মিটার প্রস্থ। মসজিদের সামনে রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। ৩ গম্বুজ ও ৪ মিনার বিশিষ্ট্য এই মসজিদটি অত্যন্ত সুরম্য দৃষ্টিনন্দন।

বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁয়ে জল পড়ে, বাতাসে মিনারগুলো দুলতে থাকে মসজিদের গায়ে  পোড়ামাটির ১০৪টি আয়তাকার ভাস্কর কারুকার্য রয়েছে যা সংস্কারের অভাবে খুলে খুলে পড়ছে। দেয়ালে শ্যাওলা জমে ধারণ করেছে বিবর্ণরূপ। মসজিদ প্রাঙ্গণে কোন সীমানা প্রচীর না থাকায় অবাধে প্রবেশ করছে হাঁস, মুরগী ও গরু-ছাগল, নষ্ট হচ্ছে মসজিদের পবিত্রতা।

স্থানীয় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মওলানা আব্দুল মান্নান জানান- মসজিদটি যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে ভিতরে নামাজ আদায় করা যাচ্ছে না। তাই আবহাওয়া খারাপ হলে আমরা বাইরে বারান্দায় নামাজ আদায় করি। এটা যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তিনি আরও জানান, এই মসজিদটি সরাসরি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ থেকে নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। তাই স্থানীয়ভাবে মেরামত করার কোন সুযোগ নেই। ঐতিহাসিক মুঘল আমলের স্থাপাত্য কৃর্তি নয়াবাদ মসজিদ সংস্কার করা হলে প্রাচীনতম মসজিদটি দেখতে পর্যটকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বিলীনের পথে মুঘল আমলের ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ

আপডেট টাইম : ০৬:১৯:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জুলাই ২০১৫

প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের উদাসীনতা আর স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলার কারণে প্রায় সাড়ে ৩শ’ বছরের পুরাতন নয়াবাদ মসজিদটি আজ বিলীনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। তৎকালীন অসাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টান্ত এ অঞ্চলের নয়াবাদ মসজিদ এবং কান্তিজিউ মন্দির। কাহারোলের ঢেপা নদীর তীরে নয়াবাদ গ্রামে মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী নয়াবাদ মসজিদটি অবস্থিত।

দিনাজপুর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দুরে কান্তজিউ মন্দির এবং মন্দির থেকে মাত্র ৪কিলোমিটার উত্তরে এ নয়াবাদ মসজিদ। কেউ বলেন মুসলিম শাসনামলে এটি নির্মিত। আবার কারো কারো মতে রাজা প্রাণনাথ (১৭০৪ খ্রি.) কান্তিজিউ মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করলে এর নির্মাণ কাজে কিছু মুসলিম সম্পত্তি আগ্রা থেকে নিয়ে আনা হয়েছিল। তাদের ধর্মকর্ম করার জন্য এ নয়াবাদ মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

অপরদিকে জানা যায়, ১৭০৪-১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে ইরাক, ইরান হতে আগত রাজমিস্ত্রিগণ যখন ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দিরটির নির্মাণ কাজ করছিল। তখন তারা ঐ মন্দিরের পার্শ্বে নামাজ আদায় করত। কিন্তু হঠাৎ করে এক দিন দিনাজপুরের প্রখ্যাত জমিদার মহারাজা প্রাণনাথ ও তদ্বীয় পুত্র রামনাথ মন্দির পরির্দশনে গেলে, তাদের নামাজ আদায় করতে দেখেন। তখন জমিদার রামনাথ মিস্ত্রিদেরকে নামাজ আদায় করার জন্য একটি মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেন। তখন হেড মিস্ত্রিদ্বয় কালুয়া ও নেওয়াজ আলী ঢেপা  নদীর তীরে নয়াবাদ গ্রামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।

মসজিদটি কাহারোলের নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত বলে গ্রামের নাম অনুসারে মসজিদটির নাম হয় নয়াবাদ মসজিদ। মসজিদটি ১৯৬৮ সালে সরকারের আওতায় আনা হয়। মসজিদটির ৩টি গম্বুজ, ৪টি মিনার, ৩টি দরজা ও ২টি জানালা বিশিষ্ট। মসজিদের পাশে ১ গম্বুজ ওয়ালা একটি হুজুরা খান ঘর এবং মসজিদের উত্তর পার্শ্বে তৎকালীন মিস্ত্রিদের কবর রয়েছে।

নয়াবাদ মসজিদটি সংস্কারের অভাবে খুলে পড়ছে মসজিদের করুকার্য, গম্বুজ মিনার, মেহেরাব। ১২.৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫.৫ মিটার প্রস্থ। মসজিদের সামনে রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। ৩ গম্বুজ ও ৪ মিনার বিশিষ্ট্য এই মসজিদটি অত্যন্ত সুরম্য দৃষ্টিনন্দন।

বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁয়ে জল পড়ে, বাতাসে মিনারগুলো দুলতে থাকে মসজিদের গায়ে  পোড়ামাটির ১০৪টি আয়তাকার ভাস্কর কারুকার্য রয়েছে যা সংস্কারের অভাবে খুলে খুলে পড়ছে। দেয়ালে শ্যাওলা জমে ধারণ করেছে বিবর্ণরূপ। মসজিদ প্রাঙ্গণে কোন সীমানা প্রচীর না থাকায় অবাধে প্রবেশ করছে হাঁস, মুরগী ও গরু-ছাগল, নষ্ট হচ্ছে মসজিদের পবিত্রতা।

স্থানীয় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মওলানা আব্দুল মান্নান জানান- মসজিদটি যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে ভিতরে নামাজ আদায় করা যাচ্ছে না। তাই আবহাওয়া খারাপ হলে আমরা বাইরে বারান্দায় নামাজ আদায় করি। এটা যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তিনি আরও জানান, এই মসজিদটি সরাসরি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ থেকে নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। তাই স্থানীয়ভাবে মেরামত করার কোন সুযোগ নেই। ঐতিহাসিক মুঘল আমলের স্থাপাত্য কৃর্তি নয়াবাদ মসজিদ সংস্কার করা হলে প্রাচীনতম মসজিদটি দেখতে পর্যটকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে।