হঠাৎ অস্থির চিনির বাজার

বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমলেও হঠাৎ করেই বাড়ছে দেশের বাজারে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে চিনির দর কমেছে ৯.১ শতাংশ। এদিকে চলতি মাসের শেষে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। আর এ রমজানকে সামনে রেখে ঢাকার বাজারেও চিনিসহ
ছোলা ডাল, পেঁয়াজে দাম বেশ বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে চিনি ও ছোলা কেজিতে ৫ টাকা, মুগডাল ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে এসব চিত্র দেখা গেছে।
রমজান ?মাস সামনে রেখে বাজার কারসাজির মাধ্যমে মিলমালিকরা মিলগেটে দর বাড়ানোয় তার প্রভাব পাইকারি ও খুচরা বাজারে পড়েছে বলে অভিযোগ পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের।
ক্রেতাদের দাবি, বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই দাম বাড়াতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন তারা। এভাবে দাম বৃদ্ধির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের মজুদদারিকে দায়ী করে বাজারে তদারকি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব।
এফএও‘র পরিসংখ্যানে বলা হয়, বিশ্ববাজারে সদ্য শেষ হওয়া এপিলে খাদ্যসামগ্রীর দাম কমেছে। চিনি, ভোজ্যতেলসহ প্রধান প্রধান খাদ্যসামগ্রীর উৎপাদন ও সরবরাহে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গড় খাদ্য সূচকে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে চিনি। পণ্যটির দর ৯.১ শতাংশ কমেছে। এছাড়া এক মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দর কমেছে ৩.৬ শতাংশ। মোট ৫ ধরনের পণ্য নিয়ে প্রতি মাসে হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে এফএও। সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলে দানাজাতীয় শস্যের দর ১.২ শতাংশ; দুগ্ধজাত পণ্যের দর ৩.৩ শতাংশ কমেছে। তবে বেড়েছে মাংসের দর। পণ্যটির দর মার্চ মাস থেকে ১.৭ শতাংশ বেড়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১৭ লাখ টন চিনি আমদানি করা হয়। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্তই আমদানি হয়েছে সাড়ে ১৩ লাখ টন। অথচ আগের বছরের এ সময়ে আমদানি হয়েছিল পৌনে ১১ লাখ টন।
গত ৩০শে এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার পরিস্থিতি বিষয়ক বৈঠকে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, সরকারি হিসাব যা-ই হোক না কেন গত অর্থবছরে কম করে হলেও দুই মিলিয়ন টন বা ২০ লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছিল। ওই বৈঠকে ট্যারিফ কমিশন থেকে দাবি করা হয়, ৩০শে এপ্রিল থেকে সারা দেশের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা দরে।
বিক্রেতারা বলেন, গত ১০ দিনে চিনির ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে অন্তত ৩০০ টাকা। সেই হিসেবে প্রতি কেজি চিনিতে দাম বেড়েছে ৫ টাকারও বেশি। ১০ দিন আগে ২৯০০ টাকা ছিল। ফ্রেশ ব্র্যান্ডের চিনির বস্তা মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ৩১৯০ টাকা। কিন্তু সরাসরি ডিও কেটে ১৫ দিনেও চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। আর বিশেষ ব্যবস্থায় কিনতে হলে দাম কিছুটা বেশি দিতে হচ্ছে। সে কারণে বাজারে চিনির দাম বাড়তে শুরু করেছে। তবে মিল গেটে চিনির দাম বস্তা প্রতি ২৯০০ টাকা রয়েছে বলে স্বীকার করেন তারা।
চিনির সরবরাহ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, বাজারে চিনির কোনো ঘাটতি নেই। মিল গেটে প্রতি কেজি চিনির দাম এখন ৫৯ টাকা। এই কোম্পানির সব ধরনের পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজান মাস শুরু হওয়ার এখনও তিন সপ্তাহ বাকি। তবে রমজানকে কেন্দ্র করে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। বিশেষ করে চিনি, পেঁয়াজ, ডাল, ছোলা ও চলের দামসহ কাঁচা পণ্যের দাম বেশ বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, চিনি, ডাল ও সবিজর দাম কেজিতে ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চিনির দাম কেজিতে প্রায় ৫-৮ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া চিনি বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭২-৭৩ টাকা দরে। গত কয়েক সপ্তাহের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ ও রসুন। দেশি রসুন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এছাড়া ভারতীয় রসুন কেজিতে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজারে ছোলা ও ডালের দাম নতুন করে এক ধাপ বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ছোলা বাজারে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মুগ ডালের দাম গত সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা বাড়ার পর বাজারে আরও ৫ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা দরে; ভারতীয় মুগ ডাল ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুগডালের কেজি এখন ১২০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও মুগডাল ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম কেজিতে অন্তত ৫ টাকা বেড়ে এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা জানান, সাভারের আড়তদারদের কাছ থেকে তারা ৯৮ টাকায় ভালো মানের এক কেজি মসুর ডাল, ৮০ টাকায় ভাঙা বুট ডাল, ৭৯ টাকায় ছোলা, খেসারি ডাল ৭০ টাকা করে কিনেছেন। বিক্রি করছেন কেজিতে ২-১ টাকা লাভে।
হাতিরপুল বাজারের ব্যবসায়ী রহমান বলেন, পাইকারি বাজার থেকে সব ধরনের পণ্য বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরা পর্যারে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছি। পাইকারি থেকে শুরু করে যেকোনো স্তরে দাম বাড়লে তার ভার পড়ে সাধারণ ক্রেতাদের ওপর। তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশলে দাম বাড়ায়। বেসরকারি কর্মকর্তা রহিম মিয়া বলেন, সুষ্ঠু মনিটরিং না থাকলে বাজারের দৈন্যদশা চলবে। যে যার মতো লুট করে নিচ্ছে। আমাদের তাই-ই মেনে নিতে হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর