ভাটির দেশ হাওর। সেই হাওর ঘিরে এখন কান্না। আহাজারি। বাঁধ ভেঙে ভাসছে হাওর। ফসল তলিয়ে গেছে পানিতে। নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জের কৃষক কাঁদছেন। বাতাস ভারি হয়ে উঠছে তাদের কান্নায়। সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী, বারিক্কা টিলা, লাউয়ের গড়, তাহিরপুরের শনির হাওরের রূপ দেখতে ভিড় করে তরুণরা। মুগ্ধ হয় হাওরের ভাষায়! জলে ভরা হাওর রূপ বদলায়। এখন এক রূপ। আর মাঘ-ফাগুন-চৈত্রের হাওরের আরেক রূপ। এ সময় হাওরের অবারিত সবুজ আকাশকে ছুঁয়ে যায় যেন। চোখে লেগে থাকা মুগ্ধতা কাটে না মন থেকেও! এ হাওরে গোলাপও ফোটে। ফোটে অজানা অসংখ্য বুনোফুল।
কিন্তু এবার চৈত্র-বৈশাখটা হাওরে হানা দিয়েছে দানবের মতো। সব ওলট-পালট করে দিয়েছে। যেই চৈত্র-বৈশাখ হাওরবাসীকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায়। তাদের ইশারায় রঙধনুর দেশটা দেখিয়ে দেয়! সেই চৈত্র-বৈশাখ কেড়ে নিয়েছে তাদের ঘুম।
বেঁচে থাকার সম্বল। বিশাল হাওরাঞ্চলের বছরের একমাত্র ফসল ডুবে গেছে দুর্নীতির দুর্বল বাঁধভাঙা ঢলে। এখন মাছ মরে মরে ভেসে উঠছে। মরছে পোষা প্রাণী। কী ভয়ানক অশনি! নাকাল হওয়া এসব মানুষ তাদের পরিশ্রমের ফসল দিয়ে বেঁচে থাকে। বাঁচিয়ে রাখে আমাদের। তারা কখনও সাহায্য চায় না। তবে এবার সময় এসেছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। ক্যাম্পাস, অফিস কিংবা পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে আপনিও তাদের পাশে দাঁড়াতে পারেন।
চলুন, তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিই-
তারা চেয়ে আছে
অবহেলিত আর খেটে খাওয়া মানুষের কথা একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন। মনের চোখ দিয়ে দেখুন ওদের। কান পেতে থাকুন বাতাসে। অনায়াসে আপনার কানে ভেসে আসবে ওদের বোবা আর্তনাদ। এই অসহায় আর অবহেলিত মানুষগুলোই কিন্তু আপনার জন্য খেটে যাচ্ছে। খেয়ে না খেয়ে আপনাকে সুখ ধরে দিচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা নিশ্চয়ই ভাবছেন আপনিও। তাদের মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে বলুন, তোমরা একা নও, দলে আছি আমি-আমরাও।
নিজের যতটুকু আছে ঠিক ততটুকু নিয়েই তাদের পাশে দাঁড়ান। ওরা যে পথ চেয়ে থাকে! ওদের পাশে দাঁড়ান। সামাজিক সাইট সোশ্যাল নেটওয়ার্কের বদৌলতে এখন খুব দ্রুত ফেসবুকের মাধ্যমেও তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে অনেকে। এই উদ্যোগে আপনিও একাত্মতা প্রকাশ করুন।
প্রস্তুতি পর্ব
নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম, কিশোরগঞ্জের মেঘনা, কালনী, কুশিয়ারা, ধনু, ঘোড়াউত্রা, ধলেশ্বরীর পাড়ের গ্রামে চলে যেতে পারেন। আপনি নিশ্চয়ই এতদিনে জেনেছেন, সুনামগঞ্জে তলিয়ে গেছে ২৫টি হাওরের ফসল। এসব গ্রামের কথা ভাবতে পারেন। শিশু থেকে টিনএজ। তারপর আরও বড় হয়ে উঠছে ঢলের ক্ষত। তাই প্রস্তুতি এখনই নিয়ে নিতে পারেন।
মানুষের পাশে মানুষের এই মানবিক অংশগ্রহণের চেয়ে বড় মানবিক আচরণ আর হয় না। কৃষক আমার-আপনার কাছের। তাদের ঘামে ভেজা ফসলে আমাদের বেড়ে ওঠা। তাই চলুন, এই পরিশ্রমী মানুষের পাশে দাঁড়াই।
যারা এগিয়ে আসেন
হাওরে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল ও ৫০০ টাকা করে ১০০ দিন দেবে সরকার। তবে এতে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। দরকার আপনার সহযোগিতাও। তাই অনেক সংগঠন এবং তরুণ এগিয়ে আসছে। গড়ে তুলছে ত্রাণ বিতরণ সংগঠন। ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, সেনাবাহিনীসহ নানা প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ বিতরণের খবর হয়তো অচিরেই আমাদের চোখে পড়বে। তবে এত সব সংগঠন চাপিয়ে উঠে আসে তরুণরা। তাদের ফেসবুক বা বল্গগে গড়ে ওঠা সংগঠন ব্যাপক সাড়া জাগাবে এটাই প্রত্যাশা! দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংগঠন তো ছুটেই চলছে তরুণদের হাত ধরে। আপনি কোন পথে হাঁটতে চান, সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন আজ; ঠিক এখনই!
ত্রাণ জোগাড়
ত্রাণ সামগ্রী নানাভাবে জোগাড় করা যায়। কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে জোগাড় করেন। কেউ সংগঠনের মাধ্যমে আবার কেউ পাড়া বা মহল্লার বাড়ি বাড়ি গিয়ে অথবা বিশ্ববিদ্যালয় হলে বিভিন্ন ছাত্রছাত্রী নিবাস থেকে। পর্যাপ্ত সংগ্রহ হওয়ার পর তা প্যাকেট করতে হবে। নারী, শিশু আর পুরুষদের ত্রাণ চাইলে আলাদা করে নিতে পারেন। প্যাকেট করার আগে ভালোভাবে তা গুছিয়ে নিতে পারেন। এতে সরবরাহ ও বিতরণে সুবিধা হবে। অনেকে আবার নগদ টাকায় সাহায্য করেন। নগদ সহায়তা পেলেও ভালো।
আপনি আপনার অবস্থান থেকে ভাবুন, যেভাবে আপনার জন্য সহজ হয় সেই পথেই হাঁটুন।
যেভাবে বিতরণ
খাবার, ওষুধ ও কাপড় জোগাড়ের পর যে এলাকায় বিতরণ করবেন, শুরুতে সে এলাকার মানুষের সংখ্যা জেনে নিলে ভালো হয়। যদি শিশুর সংখ্যা বেশি হয়, তবে নগদ টাকায় শিশুদের জন্য কাপড় কিনতে পারেন। শহরের নানা জায়গায় সস্তায় ভালো কাপড় কিনতে পাওয়া যায়।
যখন বুঝবেন বিতরণের জন্য যথেষ্ট কাপড়, খাবার ও ওষুধ জোগাড় হয়ে গেছে, তবে এরপর বিতরণের পথে হাঁটুন। বিতরণের জন্য স্থানীয়দের সহায়তা নিলে ভালো হয়। কারণ কোনো এলাকার অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয়রাই বেশি জানে। তারপর বন্ধুদের নিয়ে চলে যেতে পারেন মূল কাজে।
বিতরণের পর হাওরবাসী নতুন করে বেঁচে থাকার সাহস পাবে। আপনিও হবেন সেই সাহসের ভাগ। অসহায় মানুষকে সহায়তা করার আনন্দই অন্য রকম। আর তরুণরাই সে আনন্দ নিতে জানে সবচেয়ে বেশি। কারণ আমাদের সমাজে আপনার মতো তরুণ আছে অসংখ্য।
উদ্যোগী হয়ে পথে নামুন। নিজ অবস্থান থেকে বাড়িয়ে দিন মানবিক হাত।