যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শনিবার ১০০ দিন পূর্ণ করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এত দিনে তিনি বুঝেছেন, প্রেসিডেন্টের কাজ অনেক কঠিন! বলেছেন, ‘আমার ধারণা ছিল, এই কাজ আরও সহজ।’
দায়িত্বের ১০০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগে গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন এ কথা।
গত ৮ নভেম্বর নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন নিউইয়র্কের ধনাঢ্য এই ব্যবসায়ী।
সাক্ষাৎকারে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, এখনকার চেয়ে বরং নিজের আগের জীবনকে ভালোবাসেন তিনি। বর্তমানের জীবনের কাজ আগের জীবনের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি গাড়ি চালাতে ভালোবাসি। কিন্তু এখন আর চালাতে পারি না।’ আগের জীবনে এখনকার মতো এতটা গোপনীয়তা বজায় রাখতে হতো না বলেও জানান তিনি।২৪ ঘণ্টাই সিক্রেট সার্ভিসের সুরক্ষায় থাকার ব্যাপারে নিজেকে অভ্যস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘বাস্তবিক অর্থেই নিরাপত্তার ঘেরাটোপে আবদ্ধ হয়ে ছোট্ট গণ্ডির মধ্যে থাকতে হবে আপনাকে।কারণ, আপনার এত বেশি সুরক্ষা থাকবে যে আপনি কোথাও যেতেও পারবেন না।’
রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরদিন গতকাল শুক্রবার ট্রাম্প কথা বলেন তাঁর দায়িত্বের একশ’ দিন নিয়ে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার পর হোয়াইট হাউসের ট্রাম্প সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা ১০০ দিনে যা করেছি, আমার মনে হয় না আর কেউ তা কখনো করতে পেরেছে। আমরা অনেক কাজ করেছি। তাই আমরা খুবই খুশি।’
১০০ দিনেই সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন ঠিক নয় এবং এটা যে যার মতো করে করেন বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এত কাজ করেছি, যা আমি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে করিনি।’
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্যক্তিজীবন ছাড়াও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন ট্রাম্প। উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে বলেন, দেশটি যদি পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থেকে সরে না আসে, তাহলে তাদের সঙ্গে ‘বড় ধরনের সংঘাত’ বেধে যেতে পারে।
কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়াকে নিজের দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আমাদের বড় আকারের সংঘাত বেধে যাওয়ার একটা আশঙ্কা রয়েছে। তবে আমরা বিষয়টি কূটনৈতিকভাবেই সমাধানের পক্ষে, কিন্তু তা অত্যন্ত কঠিন।’ উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, এই নেতা তুলনামূলক অল্প বয়সে দেশের ভার নিয়েছেন।
নিজেদের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বসাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, তিনি চান, দক্ষিণ কোরিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার খরচ বহন করুক। তার হিসাব অনুযায়ী, এজন্য খরচ হবে প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যে মুক্তবাণিজ্যের চুক্তি রয়েছে, তা ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তিনি জানান, এ নিয়ে হয় নতুন করে আলোচনা শুরু করবেন, নতুবা বাতিল করে দেবেন।
নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের (নাফটা) বিষয়েও ট্রাম্প একই মন্তব্য করেন। কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে এই চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের অপর মিত্র সৌদি আরব সম্পর্কে সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দেশটি তাঁর দেশের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করছে না এবং এ দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এ সময় জানান, আগামী মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি সৌদি আরব ও ইসরায়েল সফর করবেন।
সৌদি আরবের সামরিক সরঞ্জামের প্রধান সরবরাহকারী হলো যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছরই সৌদি আরবকে এফ-১৫ যুদ্ধবিমানসহ কোটি কোটি ডলারের বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম দেওয়ার চুক্তি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। সেখানকার অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ উৎপাদনেও জড়িত আছে নানা মার্কিন কোম্পানি।
অবশ্য সৌদি আরবের সম্পর্কে ট্রাম্পের এমন মন্তব্য এবারই প্রথম নয়। প্রায় এক বছর আগে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চলার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘কেউ সৌদি আরবকে ঘাঁটায় না, কারণ তাঁদের আমরা পেছনে আছি।কিন্তু তারা এর ন্যায্য মূল্য দিচ্ছে না।’
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, আগামী মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে সৌদি আরব ও ইসরায়েলে তার সম্ভাব্য সফরের ব্যাপারে প্রশাসনিক পর্যায়ে কথা হয়েছে। মে মাসের ২৫ তারিখে ব্রাসেলসে ন্যাটো সম্মেলনেও যোগ দেবেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই হবে তার প্রথম বিদেশ সফর।
জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) দমন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, তাদের শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে এবং তাদের পরাজয়টা হবে খুব করুণ। তবে জঙ্গি দমনে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনার কথা জানাননি তিনি।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে আবারও টেলিফোনে কথা বলা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, এই মুহূর্তে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে কোনো সমস্যায় জড়াতে চান না।গত বৃহস্পতিবার সাই ইং-ওয়েন বলেছিলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে হয়তো তিনি আবারও টেলিফোনে কথা বলবেন। বিষয়টি পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আমি খুব ভালো ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করেছি। আমি বাস্তবিকই অনুভব করি, তিনি নিজের ক্ষমতায় যতটুকু সম্ভব, তার সবটুকু দিয়ে বড় একটা পরিস্থিতিতে আমাদের সহায়তা করছেন।আমি তার জন্য এই মুহূর্তে কঠিন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই না।’
গত ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর গত ডিসেম্বর মাসে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাতে টেলিফোন করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় বেইজিং।
সূত্র: রয়টার্স