সায়েদুল-মোকতাদিরে বিভক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগ

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সায়েদুল হক ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সংসদ সদস্য রআম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বিরোধ এখন চরমে উঠেছে। সায়েদুল হককে মোকতাদিরের নির্বাচনী এলাকা বিজয়নগরে যেতে বাধা দেয়ায় স্থগিত করা হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম।

বিজয়নগর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে ছড়িয়ে পড়েছে এমন আলোচনা। জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নীরব ক্ষোভ-বিক্ষোভ এখন প্রকাশ্যে।

একপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কঠোর সমালোচনা করছে প্রকাশ্যে জনসভায়। মন্ত্রী সায়েদুল হককে বসিয়ে রেখেই তারা এ সমালোচনা করছেন। সায়েদুল হকও বিষোদাগার করছেন জেলার শীর্ষ নেতাদের। পাল্টা জবাবও দেয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি উত্তপ্ত দুই নেতার বিরোধে। গত বছরের ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শফিকুল আলম বিজয়ী হওয়ার পরই জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠে।

জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা শফিকুল আলম এমএসসি’র সঙ্গে যোগ দিয়ে আলাদা গ্রুপের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। আর তাদের মাথার ওপরে রয়েছেন মন্ত্রী সায়েদুল হক। হালে সায়েদুল হক ওই নেতাদের নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলায় সফর করছেন। আর তাতেই দেখা দিচ্ছে উত্তেজনা। সর্বশেষ বিজয়নগর উপজেলা সফর নিয়ে তুলকালাম হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ হরতাল পালন করে তার সফরের প্রতিবাদে। কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ওই উপজেলাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারী করা হয়। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেই বিক্ষোভ করে একটি পক্ষ। মন্ত্রীও যান সেখানে। উপজেলায় তার ঢুকার মুখে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে নবীনগর থানার ওসি আহত হন।

সায়েদুল সেখানে মৎস্য উন্নয়ন কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। কিন্তু সুধী সমাবেশ করতে পারেননি। প্রশাসন আলাপ আলোচনা করেই আগেই এ সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে তার আশুগঞ্জ সফরে কালো পতাকা মিছিল হয়। অবশ্য সায়েদুল হকের পক্ষের লোকজন বলছেন বিভিন্ন উপজেলায় সায়েদুল হক উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন করতে সরকারী সফরে যাচ্ছেন।

তবে অন্যপক্ষ বলছে মন্ত্রীর এসব সফরে পরিকল্পিতভাবে সমাবেশ করে সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের তুলোধোনা করা হয়। সর্বশেষ গত ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলার আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ আয়োজিত একটি সুধী সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমানুল হক সেন্টু, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন ও সহসভাপতি তাজ মোহাম্মদ ইয়াছিন দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন।

বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মনোনয়ন বাণিজ্যের বিষয়টিও উঠে আসে তাদের বক্তব্যে। তারা পুরো সময় জুড়েই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা মনের ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুধী সমাবেশে।

এর আগে গত ২৩ মার্চ সায়েদুল হক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম এমএসসি’র সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে আসেন। তখনও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাড. ছায়েদুল হকের সঙ্গে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই ইউপিতে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েই মূলত মত পার্থক্য হয় জেলা আওয়ামী লীগ ও সাংসদ মোকতাদির চৌধুরী। জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ও গুনিয়াউক ইউনিয়নে মন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থীদের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দ করা প্রার্থীর নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠায় জেলা আওয়ামী লীগ।

এর মধ্যে একটিতে জেলা আওয়ামী লীগের পছন্দের প্রার্থী পরাজিত হন। এরপর দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে মন্ত্রী ছায়েদুল হককে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠায় জেলা আওয়ামী লীগ।

মন্ত্রী ছায়েদুল হক এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকায় একটি গণমাধ্যমের কাছে নাসিরনগরের হরিপুর ও গুনিয়াউক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোকতাদির চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন বলে দাবি করেন। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে মন্ত্রী ছায়েদুল হকের অপসারণ চেয়ে মানববন্ধনও করেন।

নাসিরনগরের হামলার ঘটনার পর আশুগঞ্জ, সরাইল ও বিজয়নগর উপজেলায় সায়েদুল হকের সফর নিয়ে আবারও মন্ত্রী ছায়েদুল হক ও সাংসদ মোকতাদির চৌধুরীর বিরোধ ব্যাপক আলোচনায় আসে।মানবকণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর