কুড়িগ্রামের কৃষক সবজি চাষে নিজেকে এখন বদলাতে শিখেছে। একই জমিতে বিভিন্ন প্রকারের সবজি জাতীয় ফসল বুনে তারা নগদ অর্থ আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছে। এতে অনেকের সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে।
এ জেলার নয় উপজেলার মধ্যে সীমান্ত ঘেঁষা ধরলা নদীবেষ্টিত অবহেলিত ফুলবাড়ী উপজেলার দিনমজুর অনেক কৃষক সবজি চাষ করে আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছেন।
নিজের জমি না থাকলেও অন্যের জমি ইজারা নিয়ে তারা সেখানে বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করছেন। বিশেষ করে এখানে থাইল্যান্ডের হাইব্রিড ছোট জাতের শশা চাষ করে নগদ অর্থ পাচ্ছেন কৃষকরা।
ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের কুটি চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক সুবল চন্দ্র সেন (৪৫) পরিবর্তন ডটকমকে জানান, তার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এনেছে ৪০ শতাংশ জমি। এই জমিতে তিনি বছরে ৪ বার সবজি জাতীয় ফসল চাষ করে এই স্বচ্ছলতা এনেছেন। বিভিন্ন প্রকার শাক, লাউ, ঝিঙে, বরবটি, করলা, বেগুনসহ শশা চাষ করে বাড়ির তরকারির চাহিদা মিটিয়ে বাজারে এসব শাক-সবজি বিক্রি করে তিনি সুন্দরভাবে জীবন চালাচ্ছেন। এর মধ্যে শশা চাষ করে তার মুনাফা বেশি এসেছে বলে জানান তিনি।
সুবল চন্দ্র আরও জানান, দুই সন্তানের লেখাপড়াসহ পরিবারের ৪ সদস্যের ভরণপোষণ মিটিয়ে তিনি সবজি চাষ করে ২৪ শতাংশ জমি কিনেছেন।
একই গ্রামের এরশাদুল হক (৩৫) ও আহেদুল হক (৩০) জানান, তারা আগে দিনমজুরি দিয়ে কোনমতে সংসার চালাতেন। স্থানীয় সফল সবজি চাষী আনিচুর রহমানের পরামর্শে তারা অন্যের জমি ইজারা নিয়ে শশা চাষ করে দিনমজুর দেওয়ার কষ্ট অনেকটা দূর করেছেন।
এরশাদুল হক জানান, তিনি এবার ২০ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড জাতের শশা চাষ করেন। এতে তার চাষ খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। শশা রোপণের ৪৫ দিনের মধ্যে তিনি ক্ষেত থেকে শশা তুলে বাজারে প্রতিমণ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করছেন। দুই দিন পরপর ক্ষেত থেকে শশা তুলে বিক্রি করতে পারায় বর্তমান তার চাষ খরচ উঠে তিনি মুনাফা গুনছেন। বাকি দু’মাসের শশা বিক্রিতে তার ৫০ হাজার টাকা ঘরে আসবে এমন আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
এরশাদুল হকের মতো শশা চাষে লাভের কথা জানালেন আহেদুল হকসহ পানিমাছকুটি গ্রামের বাবলু মিয়া (৩৫) ও সেন পাড়ার কৃষক নরেন চন্দ্র (৪৮)।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ফুলবাড়ীতে থাইল্যান্ডের হাইব্রিড ছোটজাতের শশার বাম্পার ফলন ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকে পড়েন শশা চাষে। রোপণের মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যে শশা বিক্রির উপযোগী হওয়ায় তারা এ জাতের শশার চাষ শুরু করেন। কৃষকরা শশাকে লাভজনক সবজি হিসেবে দেখছেন।
এখানে ঢাকা ও রাজশাহীর পাইকাররা শশা কিনতে আসায় বিক্রি করতে কৃষকদের বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। ক্ষেত থেকে শশা তুলেই পাইকারদের কাছে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করে কৃষকরা নগদ অর্থ পাচ্ছেন তারা।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী সূত্র জানায়, শশা চাষের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা না থকলেও কুড়িগ্রাম জেলার নয়টি উপজেলায় এবার প্রায় ২৭০ হেক্টর জমিতে শশার চাষ হয়েছে। যা গতবারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
বাজারে শশার চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে এর দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। সামনে রমজান মাসে শশার চাহিদা বৃদ্ধি ও দামও তুলনামূলক হারে বাড়বে বলে জানায় সূত্রটি।