‘আফ্রিকা এগোচ্ছে।’ পিতৃপুরুষের বাসভূমি কেনিয়ায় গিয়ে উদ্যোক্তাদের এক শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধনকালে এভাবেই নিজের মনোভাব জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এর আগে গত শুক্রবার রাতে ঐতিহাসিক এক সফরে কেনিয়ায় পৌঁছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের এটিই প্রথম কেনিয়ায় সফর।
সম্মেলনে গতকাল শনিবার সকালে ভাষণ দিতে গিয়ে বারাক ওবামা বলেন, ‘আমি এখানে আসতে চেয়েছিলাম কারণ আফ্রিকা এগোচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম দ্রুত অগ্রসরমান অঞ্চল এটি। দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে আসছে মানুষ। আয় বাড়ছে। বাড়ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। আপনাদের মতো তরুণরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে আফ্রিকার ব্যবসার ধরন পাল্টে দিচ্ছেন।’
এই সম্মেলনটির নিরাপত্তা নিয়েই এর আগে সংশয় তৈরি হয়। মার্কিন দূতাবাস সতর্ক করে জানান, ‘সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তু’ হতে পারে এই সম্মেলন। ফলে ওবামার এই সফরকে ভারি নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেয় কেনিয়া সরকার। রাজধানী নাইরোবির বহু সড়কে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত শুক্রবার ওবামার অবতরণের সময় আকাশে বিমান চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওবামার গতকাল রাতেই ইথিওপিয়ার উদ্দেশে কেনিয়া ছাড়ার কথা।
সম্মেলনে একই মঞ্চে ওবামার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তি। তিনি বলেন, ‘আফ্রিকার নতুন একটি দিক উন্মোচন করেছেন ওমাবা। এর থেকেই প্রমাণ হয়েছে, আফ্রিকা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে বলে যে কথা প্রচলিত ছিল তা মিথ্যা এবং এ কথা কখনোই সত্য ছিল না। যাঁরা এসব বলতেন তাঁদের জানতে দিন, আফ্রিকা এখন উন্মুক্ত এবং ব্যবসার জন্য তৈরি।’
মূলত সোমালিয়ার আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী শাবাব-এর কারণেই ওবামার সফর ঘিরে এক ধরনের নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হয়। দুই বছর আগে তারা এক শপিং মলে হামলা চালালে ৬৭ জন নিহত হয়। এর আগে ১৯৯৮ সালে তারা নাইরোবি ও তানজানিয়ার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে হামলা চালিয়েছিল। এতে নিহত হয় ২২৪ জন। ওবামা গতকাল নাইরোবির ওই হামলায় নিহতদের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান।
সম্মেলনে ওবামা আরো বলেন, ‘কেনিয়ায় আবার আসতে পেরে ভালো লাগছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে কেনিয়া সফর করতে পেরে গর্ববোধ করছি। ব্যক্তিগত কিছু অনুভূতিও রয়েছে। আমার বাবা বিশ্বের এই অংশেই বেড়ে ওঠেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘সত্যটা হলো প্রেসিডেন্টের চেয়ে ব্যক্তি হিসেবে কেনিয়া সফর করলেই তা বেশি অর্থপূর্ণ হতো। কারণ হোটেল এবং সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্ত আমার গতিবিধি সীমাবদ্ধ।’
ওবামার সফর নিয়ে কেনিয়াবাসী অবশ্য গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। গত শুক্রবার ওবামার অবতরণের পর গভীর রাতেই বিমানবন্দর থেকে শহরের কেন্দ্র পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে হাজার হাজার লোক উপস্থিত হয়ে তাঁকে স্বাগত জানায়। বিমানবন্দরে ওবামার সৎবোন অউমা-ও উপস্থিত ছিলেন। এরপর প্রেসিডেন্টের বোমা নিরোধক ‘দ্য বিস্ট’ নামে পরিচিত লিমুজিন গাড়িতেও তাঁকে সঙ্গ দেন অউমা। পরে ওই রাতেই কেনিয়ায় বসবাসকারী আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে নৈশভোজে বসেন ওবামা।
সম্মেলনে চীন প্রসঙ্গে ওবামা বলেন, ‘আফ্রিকাকে চীন যে সহায়তা দিচ্ছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। এটা ভালো। আমরা নিরুৎসাহিত করতে চাই না। বাণিজ্য সাধারণ কেনীয় বা ইথিওপীয় বা গিনিবাসী সবার জন্য উপকারী। শুধু অল্প কিছু অভিজাতের ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য নয়।’
গতকাল বিকেলে প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তির সঙ্গে বসার কথা ছিল ওবামা। তাদের মূল আলোচ্য সন্ত্রাস। কেনিয়ার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রধান অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র : এএফপি।