ডাকের গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে নারী পোস্ট অফিসগুলোকে ‘বিশেষ ব্যাংক’ করার চিন্তা

এবার ডাক বিভাগের গাড়ি চালাবেন নারীরা। ডাকবাহী ‘মেইল গাড়ি’র স্টিয়ারিংয়ের পেছনে প্রথমবারের মতো তাদের দেখা যাবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রবেশ করলো নতুন অধ্যায়ে। গতকাল ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ঢাকার ডাক ভবন চত্বরে ১০টি গাড়ির চাবি তুলে দেন দশজন নারী চালকের হাতে। এখন থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন রাস্তায় ডাকবাহী গাড়ি চালাতে দেখা যাবে এই নারী চালকদের। তারানা হালিম জানান, ডাক বিভাগের ‘ডাক পরিবহন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের অধীনে নতুন যোগ হতে যাওয়া ১১৮টি যানবাহনের মধ্যে ২০ শতাংশের চালক থাকবেন নারী। এটি খুব সুন্দর দৃষ্টান্ত হবে। আমাদের মেয়েরা হেভি ভেহিকেল চালনার জন্য প্রশিক্ষিত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত। তারা যখন গ্রামাঞ্চলে বা ঢাকা শহরে এই গাড়িগুলো চালাবেন, তখন সেটি হবে দর্শনীয় ও প্রশংসা করার মতো একটি কাজ। নারী চালকদের নিয়োগপত্র এবং বেতন-ভাতা সঠিকভাবে দেয়ার বিষয়ে ডাক বিভাগের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলেন প্রতিমন্ত্রী। নতুন প্রকল্পের অধীনে পাওয়া নয়টি ওপেন বডি পিকআপ ভ্যান এবং ১০টি কাভার্ড ভ্যানের উদ্বোধন করে তারানা হালিম বলেন, অবশিষ্ট গাড়িগুলো আগামী জুন মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে। গাড়ি কেনার পাশাপাশি এ প্রকল্পের অধীনে ৩৩টি গ্যারেজও নির্মাণ করা হবে। ডাক বিভাগের নিজস্ব পরিবহন না থাকায় ভাড়া বা চুক্তির মাধ্যমে সড়কপথে ডাক পরিবহন করতে হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাণিজ্যিক পার্সেল ও লজিস্টিকস পরিবহন চালু হবে। ডাকগাড়ির বহরে নতুন ১৯টি যানবাহন যুক্ত হওয়াকে ‘সাফল্যের একটুখানি ঝলক’ হিসেবে বর্ণনা করেন তারানা হালিম। তিনি বলেন, একনেকের অনুমোদন পাওয়ার পর ১১৮টি যানবাহন যাতে দ্রুত চলে আসে, সে জন্য তাগাদা দিচ্ছিলাম। আমি বলবো এই যানবাহনগুলো ডাক বিভাগের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নববর্ষের উপহার। তারানা হালিম জানান, দেশের সব ডাকঘরে সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করাই বাস্তবায়নাধীন নতুন প্রকল্পের উদ্দেশ্য। সারা দেশে নয় হাজার ৮৮৬টি ডাকঘর রয়েছে বাংলাদেশের ডাক বিভাগের; কর্মী রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার। এক সময় লাভজনক হলেও রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি গত দুই অর্থবছরে গড়ে ২০০ কোটির বেশি টাকা লোকসান দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিটি ডাকঘরে সেবার ধরন বাড়ানোর কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। পোস্ট অফিসগুলোকে ‘বিশেষ ব্যাংক’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে। পোস্ট অফিস বিশেষ ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করলে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। এ জন্য সমস্ত কাজ শেষ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফাইল পাঠাবো। তিনি বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন, আমরা এখন বিস্তারিত পাঠাবো বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রস্তাবিত পোস্ট ব্যাংক নিয়ে নিজের কিছু স্বপ্নের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তারানা হালিম। বিশেষ একটি কাজ করতে চাই। এখানে প্রত্যেক বাবা-মা তাদের কন্যার লেখাপড়ার জন্য মাত্র পাঁচ টাকা দিয়ে একটি ফিক্সড ডিপোজিট হিসাব খুলতে পারবেন। সরকারের কাছে আমরা প্রস্তাব করবো, সেখানে একটু যদি ইনসেনটিভ দেয়, তাহলে কন্যার বয়স যখন ১৮ বছর হবে তখন সেটি আমরা কন্যার হাতে তুলে দিতে চাই। এই অংশটি দিয়ে সে ভবিষ্যতে লেখাপড়ার জীবনটি কনটিনিউ করতে পারবে। অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মণ্ডল বক্তব্য দেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর