অবশেষে নিজেদের সনদের স্বীকৃতি পাচ্ছে দেশের কয়েক হাজার কওমি মাদ্রাসার লাখ লাখ শিক্ষার্থী। আগামী মঙ্গলবার আলেমদের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা দিতে পারেন। কওমি মাদরাসাগুলোর ছয়টি বোর্ডের অধীনেই আসছে এই স্বীকৃতি।
কয়েকটি শিক্ষাবোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিন শতাধিক আলেম অংশগ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যে কারা কারা সেই অনুষ্ঠোনে থাকবেন সেই তালিকাও করা হয়েছে।
কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সভাপতি আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বেই আসছে এই স্বীকৃতি। এ ব্যাপারে আগে আলেমদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য থাকলেও এখন মোটামুটি সবাই স্বীকৃতির পক্ষে একমত। আল্লামা শফীর নেতৃত্বও মেনে নিয়েছেন সবাই।
জানা গেছে, বেফাকসহ অন্যান্য বোর্ডগুলোর দাবি মেনেই কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে এমএ (আরবি/ ইসলামের ইতিহাস) সমমান দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাপদ্ধতি, সিলেবাস ও মাদ্রাসা পরিচালনায় কোনো রূপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিবর্তন করা হবে না এবং এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণও থাকছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ব প্রস্তাবিত কওমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও কমিশনও হচ্ছে না। আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন বেফাকের নেতৃত্বে দেশের ছয়টি কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ স্বীকৃতির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বৈঠকে করে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পাঁচ সদস্যের একটি লিয়াজোঁ কমিটি। সেই বৈঠকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদ স্বীকৃতি দেয়া সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সেই বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নুল আবেদিন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের আগে সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তিনি সোমবার দেশে ফিরবেন। এর পরদিনই তিনি বসছেন দেশের শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে।
দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা কওমি সনদের স্বীকৃতি ঘোষণা করে শেখ হাসিনা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মনে করছেন কওমি সংশ্লিষ্টরা। এর আগে বিএনপি জোট সরকারের শেষ সময়ে কওমি সনদের স্বীকৃতির মৌখিক ঘোষণা এলেও তা কার্যকর হয়নি।
২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। ২০১৩ সালে কওমি সনদের স্বীকৃতি দিতে উদ্যোগ নেয় সরকার। ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা আইন-২০১৩’ অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেও ওঠে। তখন স্বীকৃতির বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন। পরে সরকার আলেমদের ঐক্যবদ্ধ করে স্বীকৃতি ঘোষণার উদ্যোগ নেয়।