জেলায় টানা বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হুমকির মুখে পড়েছে বোরো ধান। ইতোমধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলায় দুই হাজার ৫২০ হেক্টর বোরো ধানের জমি পানিয়ে তলিয়ে গেছে।
বিশেষ করে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় কালনী, কুশিয়ারা ও ভেড়ামোহনা নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।বর্তমানে নদীগুলোতে বিপদসীমার ১.৭৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।এতে হুমকির মুখে কৈয়ারঢালা প্রকল্পের ১১ হাজার হেক্টর জমি।পাশাপাশি আশপাশের হাওরগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বুধবার কাকাইলছেও ইউনিয়নের মাহতাবপুর এলাকায় বাঁধের উপর দিয়ে পানি হাওরে ঢুকে হাওরের জমি তলিয়ে গেছে।পানি আরও বাড়লে বাঁধটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা জানান, উপজেলার ৬শ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।এতে কৃষকদের উৎপাদিত ৩ হাজার মেট্রিক টন ধানের ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আতর আলী মিয়া জানান, কৃষকরা যে আশা নিয়ে তাদের জমিতে ফসল ফলিয়েছিলেন সে ফসল আজ পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
বানিয়াচং উপজেলার কুমড়ি গ্রামে ঢলের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।
কলেজ ছাত্র মাহফুজুল ইসলাম জানান, তাদের ৫ একর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।এছাড়া এলাকার শত শত হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
শাহজাহান মেম্বার জানান, কাটাগাঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ খনন না হওয়ায় পলি পড়ে তা ভরে গেছে।ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাওর হুমকিতে পড়ে যায়। এছাড়া বেড়ি বাঁধ না থাকায় ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে কি-না বলা মুশকিল।তিনি সরকারের কাছে খাল খনন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম জানান, খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও বর্তমানে তা কমে গেছে।তবে আজমিরীগঞ্জের কালনী-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১.৭৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে বাঁধ রক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছর জেলায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়।আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভাল হয়েছিল।কিন্তু টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে ২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।তন্মধ্যে বানিয়াচং উপজেলায় ৬৯০ হেক্টর, লাখাই উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর, আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ৫৬০ হেক্টর, হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর ও নবীগঞ্জ উপজেলায় ১৭৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।