ফেসবুক বন্ধের প্রশ্নই ওঠে না: প্রতিমন্ত্রী তারানা

ফেসবুক কোনো ‘ঘণ্টার’ জন্য বন্ধ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেছেন, বিভ্রান্তি দূর করতে দৃঢ়তার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, মন্ত্রণালয় এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফেসবুক বন্ধ করার প্রশ্নই উঠে না। বিষয়টি বিবেচিতও হয়নি। সরকার এমন কিছু করবে না, যা ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল চেতনাকে কোনোভাবে আঘাত করে বা আহত করে। মধ্যরাতে ফেসবুক বন্ধ করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চাওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে গতকাল সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় ফেসবুকের ক্ষেত্রে প্রাইভেসি ফিচার ব্যবহার করাসহ সচেতনতা বাড়াতে কাজ করার তাগিদ দেন তিনি। দেশের তরুণদের ‘মঙ্গলের স্বার্থে’ মধ্যরাত থেকে ছয় ঘণ্টা ফেসবুক বন্ধ রাখা যায় কি না, সে বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ বিভাগে চিঠি আসে। ছাত্রছাত্রীরা ফেসবুকে অনেক সময় নষ্ট করে, ফলে রাতে তাদের ঠিকমতো ঘুম হয় না। সেজন্য জাতির ক্ষতি হচ্ছে বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিটিআরসির কাছে মতামত জানতে চাইলে বিটিআরসি জানায়, কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে নির্দিষ্ট বয়সীদের কারণে শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় ফেসবুক বন্ধ করা সম্ভবপর নয়। শিগগিরই মধ্যরাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ হতে পারে-এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই সরকারের তীব্র সমালোচনা করে। সোমবার দুপুরে টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে তারানা হালিম বলেন, ‘ফেসবুক নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার জন্য সাংবাদিকদের ডেকেছি। আমাদের কাছে কারিগরি মতামত চাওয়া হয়েছিল। আমরা এ বিষয়ে ফেসবুক বন্ধ না করার পক্ষে মতামত দিয়েছি। এটা নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, তা দুঃখজনক। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) জানিয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফেসবুক বন্ধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’ মধ্যরাতে ফেসবুক ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকবে-এ ধরনের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ারও সমালোচনা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে সংবাদ দেখেছি তাতে আমরা কিছুটা আহত হয়েছি এ কারণে যে, কোথাও লেখা নেই যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এ রকম একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু এর ভিত্তিতে অনেক আলোচনা-সমালোচনা, ভবিষ্যদ্বাণী অনেক কিছু হয়েছে। ফেসবুকে যেসব মন্তব্য, প্রতি মন্তব্য ও স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে, তা ভিত্তিহীন তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক বন্ধ করা নিয়ে মন্ত্রণালয় কোনো আলোচনা করেছে বা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমন কোনো কাগজপত্র কেউ দেখাতে পারবেন না। আশা করি, এ নিয়ে সবার সংশয় দূর হবে। ফেসবুক সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোকে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, এসব বিষয়ে যেন বিভ্রান্ত না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। দেখা যাচ্ছে তিলও যেখানে নেই সেখানে তাল হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এ ইস্যু নিয়ে নিউজ করার আগে সাংবাদিকদের তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসক সম্মেলনে জেলা প্রশাসকরা শঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন এবং উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা বলেছিলেন, কোমলমতি শিশুরা রাতের বেলা ফেসবুকে থাকে; এজন্য লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। পরবর্তী সময় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আমাদের কাছে মন্তব্যসহ একটি প্রতিবেদন চাওয়া হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সুস্পষ্টভাবে মৌখিকভাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানিয়ে দিয়েছে, বিটিআরসিকেও জানানো হয়েছে, কোনো ঘণ্টার জন্য ফেসবুক বন্ধ হচ্ছে না। বন্ধ করা সমীচীন হবে না। এতে মানুষ বিরক্ত হবে, এটি একটি কারণ। ফেসবুক বন্ধ না করার দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তারানা হালিম বলেছেন, বাংলাদেশে ফেসবুক শুধু একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেই ব্যবহূত হচ্ছে না, সাধারণ জনগণ বিশেষ করে নারীরা অনলাইনে ব্যবসা করে অর্থ উপাজন করছে। আমাদের দেশে যখন দিন অন্য দেশে রাত, অন্য দেশে যখন রাত আমাদের দেশে দিন। এ সময়ের পার্থক্যের কারণে অনেক ব্যবসায়ী আছেন যাদের রাতে ফেসবুক ব্যবহার করতে হয়। আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা আছেন, ই-কমার্স ব্যবহার করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তারানা জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে আড়াই কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর